মধুপুরে আদিবাসীদের জমিতে লেক খননের প্রতিবাদে সমাবেশ অনুষ্ঠিত
টাঙ্গাইলের মধুপুরে আদিবাসীদের ভূমিতে বন বিভাগ কর্তৃক লেক খনন পরিকল্পনার প্রতিবাদে সম্মিলিত আদিবাসী জনতার প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল ১১টায় টাঙ্গাইলের মধুপুরের দোখলা চৌরাস্তায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সাবেক সভাপতি অজয় এ মৃ।
সমাবেশের আগে ভূটিয়া বাজার থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে দোখলা চৌরাস্তায় গিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. ছরোয়ার আলম খান উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রেখে আদিবাসীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন।
এ সময় গারো স্টুডেন্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লিয়াং রিছিলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) এর সভাপতি জন জেত্রা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ, জমির মালিকদের পক্ষে মুকুল দারু, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি ম্যাথিউ চিরান প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে প্রবীণ আদিবাসী নেতা অজয় এ মৃ বলেন, শত শত বছরের বংশপরম্পরায় আমরা আমাদের ভূমিতে চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করছি। কিন্তু বন বিভাগ প্রায় সময় উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের ভূমি দখল করে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে।
প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্রনেতা জন জেত্রা বলেন, কৃষি জমি নষ্ট করে বিনোদনের নামে লেক খনন এ কেমন উন্নয়ন? আমরা আমাদের চোখের জলের ওপর কাউকে প্রমোদতরী চালাতে দেব না। জীবন থাকতে আমরা আমাদের কৃষি জমির এক ইঞ্চি মাটিও ছাড়ব না।
প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্যে আদিবাসী যুবনেতা টনি ম্যাথিউ চিরান বলেন, উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের কৃষি জমিতে যদি লেক খনন করতে যান তাহলে সেটি হবে আগুনের ওপর ঘি ঢালা। আদিবাসীরা উন্নয়নের বিরোধী না কিন্তু অমানবিক উন্নয়নের বিরোধী। আমাদের জীবিকার ওপর লেক খনন করার চেষ্টা করলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ বন কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে। লেক খনন পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে।
জমির মালিক এবং জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরেশ চন্দ্র মৃ’র মেয়ে মুকুল দারু তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু এই দোখলা আর চুনিয়ায় এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে গিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, মধুপুর বনের আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে না। অথচ আজকে বন বিভাগ আমাদের কৃষি জমিতে বিনোদন কেন্দ্র করার নামে লেক করার ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের জমিতে সাইনবোর্ড টানিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বলছে। কবে এই জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল। আমরা তো বহু বছর ধরে বংশপরম্পরায় এখানে চাষবাস করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছি। আমরা জমির মালিকেরা আমাদের জমিতে কৃত্রিম লেক খনন করতে দেব না। এতে রক্ত দিতে হলে দেব।
উল্লেখ যে, গত শুক্রবার বন বিভাগের কর্মকর্তারা মধুপুর বনাঞ্চলের দোখলা ও চুনিয়া এলাকার মাঝামাঝি আমতলী বাইদ এলাকায় গারোদের জমিতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। ওই ৪৫ বিঘা জমি শত বছরের বংশ পরম্পরায় ১৩টি গারো পরিবার ভোগ দখল করে আসছে।