ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বালি উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের রাতভর অভিযান
শেরপুরে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে রাতভর অভিযান পরিচালনা করেছে প্রশাসন। গত রবিবার (১০ নভেম্বর, ২০২৪) রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানার নেতৃত্বে অভিযান কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
অভিযানের খবর পেয়ে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত লোকজন বালু উত্তোলনের ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিন রেখে পালিয়ে যায়, অনেকে আটক এড়াতে নদীর পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কয়েকজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। অভিযানে ভোগাই নদীর উজানে তিনটি বালুবোঝাই ট্রাক ও একটি এক্সক্যাভেটর (ভেকু) জব্দ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এনে রাখেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টদের হিসাব অনুযায়ী, তিন মাসে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। দু’জনকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপর চারজনকে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। কয়েকটি মিনি ড্রেজার ধ্বংস করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ অবস্থায় আছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, ইজারাবহির্ভূত এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের অভিযান চলছে। নদীর উজানে বালু উত্তোলন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন ভাটিতে অভিযান শুরু হবে। সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা আরও বলেন, ইজারা বর্হিভূত এলাকায় বালু উত্তোলনে আমাদের অভিযানে নদীর উজানে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন ভাটিতে অভিযান শুরু হবে। সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ির সবাইকে সচেতন হতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বালুমহালের ইজারাকৃত এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের কথা থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে ইজারাকৃত অঞ্চলের বাইরে ৩০ কিলোমিটার জুড়ে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। ফলে, নদীর অনেক জায়গাতে মিলছে না বালু। বালু উত্তোলন বজায় রাখতে নদীর পাড় ভেঙ্গে তলদেশে ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর পর্যন্ত বোরিং করে খনিজ বালু উত্তোলন শুরু করেছে প্রভাবশালী মহল।
উপজেলা সূত্র থেকে জানা গেছে, ১৪৩১ সালের ৩০ চৈত্র (১৩ জানুয়ারি, ২০২৫) পর্যন্ত ভোগাই নদীর কালাকুমা, হাতিপাগার, নয়াবিল, ফুলপুর ও মন্ডলিয়াপাড়া পাঁচটি মৌজায় মোট ৯ একর ৮২ শতাংশ ইজারা প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে চেল্লাখালী নদী ইজারা দেওয়া হয়েছে দুই ভাগে। এরমধ্যে চেল্লাখালী বালুমহালে বাতকুচি, পলাশীকুড়া, নন্নী, তাজুরাবাদ ও সন্যাসীভিটা এই মৌজায় ২২ একর ও বুরুঙ্গা, আন্ধারুপাড়া বাইগরপাড়া বালুমহালে দুটি মৌজায় ১৯ একর ৯ শতাংশ ইজারা দেওয়া হয়েছে।
গত অক্টোবর মাসে হয়ে যাওয়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই উপজেলার বসবাসরত গারো, কোচ, ও হাজং আদিবাসীরা। এই ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী থেকে আসা পানিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঙালি ও আদিবাসী সকলে। স্থানীয়রা মনে করেন এইভাবে ইজারার বাইরের ৩০ কিমি এলাকাজুড়ে বালু উত্তোলনের ফলে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতে দেখা দিচ্ছে নাব্যতার সংকট। পাশাপাশি নদী ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে। ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে আশপাশের অনেক স্থাপনা ও নদীপাড়ের বাঙালি ও আদিবাসীদের বাড়ি-ঘর।
উপজেলার নয়াবিল এলাকার স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, নদীর পাড় ভেঙে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুই তীর, পাড়-সংলগ্ন পাহাড় ও গাছপালা। এতে হুমকিতে পড়েছে খলচান্দা ও বুরুঙ্গা গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘর। তিনি জরুরি ভিত্তিতে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান।