জাতীয়

ভূমি কমিশন করে কোন লাভ হবেনা যদি আদিবাসীদের ভূমি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া না নেয়া হয়- রাশেদ খান মেনন

ভূমি কমিশন করে কোন লাভ হবেনা যদি আদিবাসীদের ভূমি শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া না নেয়া হয়। ভূমি কমিশন তো প্রয়োজন বটেই পাশাপাশি ভূমি শনাক্তকরণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। আজ সকালে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়াতনে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস ও রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট কালেক্টিভ (আরডিসি)র যৌথ আয়োজনে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন শীর্ষক এক পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠানে তিনি এ বক্তব্য রাখেন।
তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ভূমির ক্ষেত্রে দেখা যায় জলাভূমি রয়েছে, ফরেস্ট্রির ভূমি আছে নানান ধরণের ভাগ বিভাগ কিন্তু রয়ে গেছে, আদিবাসীদের ক্ষেত্রে কোন ভাগবিভাগ নেই। সুতরাং আমি মনে করি যারা এ নিয়ে কাজ করছেন আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ভূমি আলাদা করে শনাক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আরো বলেন, এদেশের সমতলের আদিবাসীরা ভূমি থেকে, গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি তাদের নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে, বিভিন্ন ঘটনায় নিহতও হয়েছেন। অন্যান্য দিক থেকেও তারা বঞ্চিত হয়েছেন। এ বিষয়ে যদি আমরা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহন করতে না পারি তবে ক্রমাগত প্রান্তিকতা বাড়বে, হয়তো আদিবাসীদের জন্য আর কিছু করা প্রয়োজন হবেনা, হয়তো তাদের অস্তিত্বই আর থাকবেনা।
তিনি বাংলাদেশের আদিবাসীদের ইতিহাসের নানান অবদানের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, যে আদিবাসীরা ইলা মিত্রের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে শাসকদের কাঁপিয়ে দিয়েছেন, সাঁওতালরা হুল বিদ্রোহ করেছে, যে গারো-হাজংরা টংক আন্দোলন করেছে, সিলেটের আদিবাসীরা যারা আন্দোলন করে ইতিহাস তৈরি করেছেন সেই আদিবাসীরা আজকে কেনো নিজেদের পরাজিত ভাববেন তা আমি বুঝিনা। আমি আশা করবো আপনাদের পূর্ব পুরুষরা যে লড়াই করেছেন সে আত্মবিশ্বাস ধারণ করেন। এদেশ আপনাদেরও, আপনারা এ দেশের সন্তান, পৃথিবীর সন্তান।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম। তিনি সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে বলেন, এদেশের আদিবাসীরা কেবল প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেনা, তারা প্রতিনিয়ত মানুষের তৈরি নানান সমস্যারও মোকাবেলা করেন। তার মধ্যে ভূমি সমস্যা গুরুত্বপূর্ণ। সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন হলে, নিশ্চয় তাদের ভূমিগত নানান সমস্যা কমে যাবে বলে আমি আশা রাখি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কামরুল হাসান ফেরদৌস সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন প্রয়োজন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, শুধু ভূমি কমিশন নয়, সাথে সাথে এই কমিশনে ভূমি সম্পর্কিত জীবিকায়ণের ব্যাবস্থা রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি আদিবাসীদের পাড়ায় বা পুঞ্জিতে তাদের জন্য আবাসনেরও ব্যবস্থা প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের জন্য পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব ও পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। কমিশন গঠনের জন্য তৈরি করা পজিশন পেপার উপস্থাপন করেন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট কালেক্টিভ (আরডিসি)র সাধারণ সম্পাদক জান্নাত-ই-ফেরদৌসী। পজিশন পেপারে সমতলের আদিবাসীদের জন্য কেনো পৃথক ভূমি কমিশন প্রয়োজন সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এক অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আদিবাসীদের জীবনে মূল অবলম্বন হলো ভূমি। অথচ যুগ যুগ ধরে আদিবাসীরা ভূমি হারিয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের কারনে যেমন বাঁধ নির্মাণ(কাপ্তাই), ন্যাশনাল পার্ক, ইকো-পার্ক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সামাজিক বনায়ন, মিলিটারি বেইস নির্মাণ ইত্যাদি কারনে আদিবাসীড়া ভূমি হারাচ্ছে। পজিশন পেপারে সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক কমিশন গঠনের জন্য খসড়া গঠনতন্ত্র ও পরিচালনা নীতিও দেয়া হয়েছে।

Back to top button