জাতীয়

বৈষম্যহীন দক্ষিণ এশিয়া গড়ার অঙ্গিকারঃ স্যাপি

অমর শান্তি চাকমাঃ অদ্য ২০ জানুয়ারী ২০১৯ইং, সাউথ এশিয়া অ্যালায়েন্স ফর পভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি) কর্তৃক আয়োজিত “বৈষম্যহীন দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই” স্লোগানে এক মানববন্ধন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সাউথ এশিয়া অ্যালায়েন্স ফর পভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি)-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ও নারীনেত্রী রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন ঐক্যন্যাপের সভাপতি জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, বিএমএ এর সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ-ই মাহবুব, আদিবাসী নেতা দীপায়ন খীসাসহ বিভিন্ন আদিবাসী, কৃষক-শ্রমিক-ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।

বক্তারা বলেন, বহু শতক ধরে বহু মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করার কারণে মৃত্যুবরণ করছে, মর্যাদা হারিয়েছে, সুযোগ হারিয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে তাদেও হতে হয়েছে বৈষম্যর শিকার। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিতক ক্ষমতাশীলেরা আঁতাত করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার মধ্যে দিয়ে এ ধরণের অর্থনৈতিক ধ্যানধারণা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যেখানে রয়েছে বাজার ও অর্থের একচ্ছত্র আধিপত্য।

বক্তারা আরো বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গভিত্তিক মজুরির পার্থক্য সবচেয়ে প্রকট এবং এখানে লিঙ্গভিত্তিক শ্রমে নিযুক্তির পরিমাণেও পার্থক্য অনেক বেশি । স্বল্প সংখ্যাক ক্ষমতাবানের হাতে সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ায় এ ধরণের বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। বক্তারা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এবং অন্যান্য বিশ্বের সরকারসমূহকে ধনী এবং দরিদ্রদেও মধ্যকার ব্যবধান কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, মজুরী বৈষম্য কমানো, দেশীয় কর রাজস্ব সচল করা, ক্ষতিগ্রস্থ ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা প্রদান করা, দায়িত্বশীল রাষ্ট্র গড়ে তোলা এবং সকলের জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, নারী ও শিশুর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতাসহ কৃষক-শ্রমিকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।

ঐক্যন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য্য বলেন, বাংলাদেশের কৃষক, ক্ষেতমজুর, রিকসাচালকরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার দরুন ধুঁকে ধুঁকে জীবন অতিবাহিত করছে। দেশে নারী ও শিশুর উপর সহিংসতা, উত্তরাধিকার সূত্রে নারীদেরকে বঞ্চিতকরণের ঘটনাগুলো প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। দেশের মধ্যে ধণী গরিবের ব্যবধান প্রকট আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, নাগরিক সমাজ এবং রাষ্ট্রের মধ্যকার সামাজিক চুক্তিকে ধ্বংস কওে এবং বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত সহযোগিতায় বাধা সৃষ্টি কওে জনগণকে দরিদ্র ও নীরব রাকার উদ্দেশ্য ক্ষমতাবানকে শক্তিশালী করার সিস্টেমের বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি, যা মানুষের অর্থনৈতিক সুবিধা, শান্তি এবং গণতন্ত্র পুনর্নিমাণ করবে এবং একটি অধকতর ভালো বিশ্ব ব্যবস্থা তৈরী করবে।

শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও আজ অর্থনৈতিক বৈষম্যবিরোধী দিবস পালন করছে। তিনি বলেন, সমাজের আয় বৈষম্যের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে সমাজ টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের ৯৫% মানুষের সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৫% মানুষের হাতে। দেশের শ্রমিকদের মাসিক মজুরী মাত্র ১০০ ডলার যার কারণে দেশের ৮০% মানুষ দারিদ্র্যর মধ্যে বসবাস করছে। তিনি সরকারের কাছে আয় নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে ধনী গরিবের ব্যবধান কমানোর আহ্বান জানান।

মানববন্ধনের সভাপতি রোকেয়া কবীর বলেন, আমরা দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ ওর্য়াল্ড ইকোনমিক ফোরামের অর্থনৈতিক আলোচনাকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য একত্রে দাঁড়িয়েছি, যার নামে ধনী, অভিজাত এবং বৃহৎ বহুজাতিক করপোরেশনগুলো জলবায়ুকে ধ্বংস করছে এবং নারী, শ্রমিক ও আদিবাসী জনগণের অধিকারগুলো ছিন্ন করতে মুনাফা এবং শক্তি প্রয়োগ করছে। তিনি বলেন, আমরা একটি মহৎ সমতাভিত্তিক বিশ্ব বিনির্মাণে একত্রে দাঁড়িয়েছি, যেখানে সকল মানুষের অধিকার সম্মানিত এবং পরিপূর্ণ, সকল সম্ভাবনা, সুযোগ এবং খ্যাতি সবাই ভাগ করে নেই।

ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধনের ফাঁকে ফাঁকে প্রতিবাদী গান গেয়ে শুনান কৃষ্ণপক্ষসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশাজীবির শিল্পীবৃন্দ।

Back to top button