বিরিশিরিতে খ্রিস্টমাস ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল
মঞ্চ মাতাবেন অন্তু রিছিল, সায়ন্তন মাংসাং ও সাক্রামেন্টসহ জনপ্রিয় গারো তারকারা
আগামীকাল সোমবার বিরিশিরি ওয়াইএমসিএ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিরিশিরি খ্রিস্টমাস ফেস্টিভ্যাল ২০২৪। গতবারের মতো এইবারও আয়োজনে থাকছে জনপ্রিয় গারো তারকাদের মেলা। ফেস্টিভ্যালের আয়োজক বিরিশিরি ইয়াং জেনারেশান নামের একটি প্লাটফর্ম।
ফেস্টিভ্যালে ডিসকাশন সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন দুর্গাপুর উপজেলার ইউএনও নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকছেন দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাচ্চু মিয়া, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নাসির উদ্দিন এবং এডভোকেট সোহেল খান।
কনসার্ট সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন ক্যাপ্টেন সাজিদ বিন রওশন, বাংলাদেশ আর্মি এবং বিশেষ অতিথি হিসবে এডভোকেট সোহেল খান।
ফেস্টিভ্যালের গেইট ওপেনিং এবং ক্যারল হবে দুপুর ২টা থেকে ২:৩০ পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে প্রেয়ার, লটারি ড্র, আলোচনা সভা, কালচারাল প্রোগ্রাম, কনসার্ট, এবং খ্রিস্টমাস ক্যারল-এর মাধ্যমে সমাপনী ঘটবে রাত ১০:৩০-এ। কালচারাল প্রোগ্রামে থাকবে গারো আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নাচ ও তরুণদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। কনসার্টে এবারের বিশেষ আকর্ষণ থাকছে গারোদের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী অন্তু রিছিল, জনপ্রিয় ব্যান্ড সাক্রামেন্ট, কোক স্টুডিও বাংলা খেত সায়ন্তন মাংসাং ও অনিমেষ রায়। এছাড়াও থাকছে গারো ব্যান্ড ওয়ারেস, স্কাল ও প্রজেক্ট নাইন্টিজ।
বিরিশিরি খ্রিস্টমাস ফেস্টিভ্যাল কমিটি ২০২৪-এর উপদেষ্টা মন্ডলীতে আছেন অর্ক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ডা. নির্জল চিসিক, বিরিশিরি ওয়াই এম সি এ-র প্রেসিডেন্ট ডিকন জেমস প্রবাল আরেং, ডন বস্কো স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ মি. রুমন রাফায়েল রাংসা, জিবিসি ওমেন সোসাইটির সম্পাদিকা ডিকনেস নিষ্ঠা জাম্বিল, এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মি. সজীব রেমা (কাস্টমস হাউস, বেনাপোল)।
বিরিশিরি খ্রিস্টমাস ফেস্টিভ্যাল কমিটি ২০২৪-এর আহ্বায়ক পিংকু রেমা, সহ আহ্বায়ক ব্রুসলি রিছিল,
এবং যুগ্ম আহ্বায়ক কৃপাঞ্জলী মান্দা, তীত চিরিং সাংমা, সানি রাংসা, অক্ষয় হাগিদক ও উৎস রেমা।
বিরিশিরি ইয়াং জেনারেশানের আহব্বায়ক পিংকু রেমার সাথে আইপিনিউজ-এর অনুপম ঘাগ্রার সংক্ষিপ্ত মুঠোফোন সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ পাঠকদের জন্য দেয়া হলো।
আইপিনিউজঃ বিরিশিরি খ্রস্টমাস ফেস্টিভ্যাল ২০২৪- আয়োজকদের কাছে এই উদ্যোগটির আলাপ শুনতে চাই…
পিংকু রেমাঃ বিরিশিরি ক্রিস্টমাস ফেস্টিভ্যাল ২০২৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, আয়োজনে বিরিশিরি ইয়াং জেনারেশন। এই বছর আমরা দ্বিতীয় বারের মত আয়োজন করতে যাচ্ছি এই ফেস্টিভ্যাল। প্রথমেই বলে রাখি এটা একটা ধর্মীয় প্রোগ্রাম। তাই আমরা যেন গারো সংস্কৃতির সাথে এর সত্যতা, সংশ্লিষ্টতা, মিল অমিল এসব তর্কে যেন না যায়। কারণ সংস্কৃতি একটা বিরাট পরিসর যার একটি ক্ষুদ্র অংশ হচ্ছে ধর্ম। গারোদের আদি ধর্ম সাংসারেক সবাই জানি, কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় প্রায় ৯৮% গারো আজ খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী, যা আমরা এখন আমাদের নিত্য নৈমিত্তিক কার্যকলাপ, আচার-আচরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে দেখতে পাই। গারোদের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বসবাস দূর্গাপুর, নেত্রকোণা জেলার বিরিশিরি নামক এলাকায়। তাই এই ঐতিহাসিক এলাকার নামানুসারে ফেস্টিভ্যালের নামকরণ করা হয়েছে বিরিশিরি ক্রিস্টমাস ফেস্টিভ্যাল।
আইপিনিউজঃ এই ফেস্টিভ্যালকি সকলের জন্য উন্মুক্ত? আয়োজনের উদ্দেশ্য নিয়ে যদি কিছু বলেন?
পিংকু রেমাঃ আসন্ন যীশু খ্রীস্টের জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের এই আয়োজন। যা গারো ছলে, মেয়ে, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা সকলের জন্য উম্মুক্ত।
এই ফেস্টিভ্যালের উদ্দেশ্য মূলত বড়দিনের বা যীশু খ্রীস্টর জন্মদিনের মহত্ত্ব এবং প্রসংশা, গৌরব কে নিয়েই। তবে তার পাশাপাশি অত্র এলাকার যারা গ্রামেই বসবাস বা গ্রামের বাইরে চলতে ফিরতে পারে না তাদের জন্য সামন্য আধুনিক বিনোদনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, এবং বড়দিনের আনন্দ সহভাগিতা করা। তাছাড়া বড়দিনের ঐতিহাসিক কীর্তন যা কিনা আজ প্রায় গারো এলাকাতেই বিলুপ্তপ্রায় বা চার্চাহীন অবস্থায় রয়েছে সেটাকে ফোকাস করা।
যেহেতু গারোদের জন্য এই ফেস্টিভ্যাল তাই আমরা কালচারাল বা কনসার্টে গারো গান বা নাচকে প্রাধান্য দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা গারো সংস্কৃতি সামন্য করে হলেও উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া এই এলাকার বর্তামান প্রজন্মের সাথে বিভিন্ন প্রজন্মের মেলবন্ধন বা পূণর্মিলনীও আমাদের একটা উদ্দেশ্য। কারণ সময়ের পরিক্রমায় এখন আমরা কেউ কেউ এলাকায় স্থায়ি ভাবে বসবাস করি না কিন্তু ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ আমরা সবাই চেষ্টা করি নিজেদের শেখড়ের কাছাকাছি থাকার। এই উপলক্ষে একে অন্যের সাথে পরিচয়ও ঘটে। যদিও ফেস্টিভ্যালের নাম বিরিশিরি দেওয়া কিন্তু আসলে আমাদের এই ফেস্টিভ্যাল শুধু বিরিশিরির গারোদের জন্যই এমন না, অন্যান্য গারো এলাকার সবার জন্যও। সেই হিসেবে আমরা যখন এই ফেস্টিভ্যালের জন্য ফান্ড রেইজ করি তখন আমাদের পরিচিত অন্যান্য এলাকার গারো বন্ধু-বান্ধব, ভাই, বোনের থেকেও ফান্ড কালেক্ট করি এবং আমরা তাদের থেকে সাহায্যও পাই।
আইপিনিউজঃ যেহেতু ফান্ডের কথা বলছেন… তাহলে চলুন শুনি ফেস্টিভ্যালটি আয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন?
পিংকু রেমাঃ আমদের এই ফেস্টিভ্যালের জন্য আসলে সেই রকম কোন স্থায়ি ফান্ড আমরা এখনো করতে পারি নি। কারণ কমিটির সবাই আমরা ছাত্র বা চাকুরী প্রার্থী। তাছাড়া কমিটির আমরা যারা আছি সবাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থান করাতে যোগাযোগের বিশাল একটা ঘাটতি সব সময় দেখা দিয়েছে। এজন্য আমরা ৫ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করি এবং উনাদের সাহয্য সহযোগিতা প্রার্থনা করি। অনেক চরাই উতরাই পার করেই আমরা এই ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করতে সক্ষম হচ্ছি।
আইপিনিউজঃ আয়োজনের সামগ্রিক অগ্রগতি নিয়ে যদি কিছু বলেন …
পিংকু রেমাঃ এখন আমরা আমাদের এই ফেস্টিভ্যালের একদম সন্নিকটে আছি, আগামীকাল সকাল হলেই আমাদের এই ফেস্টিভ্যাল। সেই উপলক্ষে অলরডি নিজ এলাকার সহ, বিভিন্ন এলাকার মানুষর সমাগম আমরা আজকে থেকেই দেখতে পাচ্ছি। তাছারা ফেস্টিভ্যালের আকর্ষণ বিভিন্ন গারো ব্যান্ড; সাক্রামেন্ট, ওয়ারেস, স্কাল, অন্টু রিছিল সহ আরো বিভিন্ন সনামধন্য শিল্পিরা উপস্থিত হবেন আগামীকাল সকালে। আমাদের ফেস্টিভ্যালের সব ধরণের আপডেট, অগ্রগতি আপনারা আমাদের ফেসবুক অফিসিয়াল পেজ বিরিশিরি ক্রিস্টমাস ফেস্টিভ্যাল এই পেজ থেকে পাবেন।
আইপিনিউজঃ ফেস্টিভ্যাল নিয়ে প্রত্যাশা, এবং বিরিশিরি ইয়াং জেনারেশান এর ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কিছু জানতে চাই…
পিংকু রেমাঃ এই ফেস্টিভ্যাল নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরো বেশি রঙিন। আমরা ভবিষ্যতে চেষ্টা করবে আরও বৃহৎ পরিসরে দেশীয়, আন্তর্জাতিক ঘরনার মাধ্যমে পালন করার। আমরা এই বছরই চেষ্টা করেছিলাম দেশীয় ব্যান্ডের সাথে একটা হলেও ইন্ডিয়ান গারো ব্যান্ডকে যুক্ত করার কিন্তু আমরা সেটা পারি নি আমাদের কিছু আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং সময় স্বল্পতার কারণে। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে আমরা এই সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো এবং আমাদের সকলের আশা প্রাত্যাশা অনুযায়ী ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করতে পারবো। সবশেষে সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের ডাকে আপনারা নিজের সাধ্যমত সাহয্য সহযোগিতা করেছেন এবং ফেস্টিভ্যাল বেগবান করেছেন। সকলকে আগামীকাল আমাদের এই ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ রইলো। শুভ বড়দিন।