বাঘাইছড়ির বিভিন্ন স্থানে জুম্ম জাতীয় শোক দিবস পালিত
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় স্থানীয় সাধারণ জুম্ম গ্রামবাসীদের উদ্যোগে ২৮টি পৃথক স্থানে জুম্ম জাতীয় জাগরণের অগ্রদূত, মহান বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪১তম মৃত্যু বার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে।
‘জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হউন’ শ্লোগানে আজ ১০ই নভেম্বর ২০২৪, রবিবার ‘১০ই নভেম্বর উদযাপন কমিটি’ ও ৩১নং খেদারমারা ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে বাঘাইছড়ির খেদারমারা ইউনিয়নের লারমা স্কোয়ারের সামনে সামগ্রিকভাবে দিবসটি পালন করা হয়।
শোকসভায় বক্তারা বলেন, ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বরের আজকের এই দিনে আমাদের প্রিয় নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে জাতির চার কুলাঙ্গার গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্র জুম্ম জনগণের প্রগতির চাকাকে ইতিহাসের পেছনের দরজা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা চেয়েছিল এম এন লারমাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১১ ভাষাভাষী ১৩টির অধিক জুম্ম জাতির ভাগ্যকে চিরদিনের জন্য কফিনবন্দী করে রেখে দিতে। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। বরঞ্চ ঘটেছে ঠিক তার উল্টোটাই। প্রিয় নেতার আদর্শ -চেতনা এবং তাঁর নির্দেশিত সংগ্রামের রশি বেয়ে জুম্ম জনগণ আরও অধিকতর সংগ্রামী, অধিকতর প্রতিবাদী হয়ে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইস্পাত-দৃঢ় কঠিন প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বরের মধ্যে দিয়ে আমরা তার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ দেখেছি।
বক্তারা আরও বলেন, ৮৩’র উত্তরসূরি চক্রের প্রেতাত্মারা আজও আমাদের সমাজের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন বেশভূষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন তথা জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য সক্রিয় রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা কখনো মানবতার ফেরিওয়ালা, কখনো সুশীল-দেশপ্রেমিক, আবার কখনোবা সাধুসজ্জন ব্যক্তি সেজে খুবই সুক্ষ্মভাবে তাদের হীন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আমাদের অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে, সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
তারা আরও বলেন, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের সাথে সাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি আমাদের(জুম্ম জনগণের) রক্ষাকবচ। এ চুক্তিবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র বা যেকোনো অপতৎপরতা রুখে দিতে জুম্ম জনগণ সর্বদা প্রস্তুত।
বক্তারা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য খুবই দ্রুত এবং পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, সামগ্রিকভাবে বাঘাইছড়ি খেদারমারা ইউনিয়ন বাদেও আরও যেসকল ইউনিয়নে যৌথভাবে কয়েকটি গ্রাম মিলিত হয়ে এম এন লারমার ৪১ তম মৃত্যু বার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়–
সারোয়াতলী ইউনিয়ন
শিজক খাগড়াছড়ি, .বৃহত্তর মাউত্তাং মুখ, বৃহত্তর শিজক কলেজ মাঠ, দক্ষিণ খাগড়াছড়ির মেদিনীপুর এলাকা, দক্ষিণ সারোয়াতলী, তালুকদার পাড়া, নব পেড়াছড়া, চুড়াখালী দোসর এলাকা, পাকুয়াখালী ও বড় মাহিল্যায়।
বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন
উগলছড়ি, বাঘাইছড়ি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, কজইছড়ি, মিলনপুর ও বৃহত্তর দোসর এলাকায়।
মারিশ্যা ইউনিয়ন
বৃহত্তর তুলাবান এলাকা, কদমতলী, উত্তর কজইছড়ি, ভুইয়োছড়া এবং থলছড়া এলাকায়।
বঙ্গলতলী ইউনিয়ন
ভালুক মারা, দুলুবনিয়া ও উগলছড়ি এই তিনটি গ্রাম মিলে যৌথভাবে দিবসটি পালন করা হয়।
সাজেক ইউনিয়ন
ওল্ড লংকর এলাকা, নিউ লংকর এলাকা, ছয়নালছড়া, উদয়পুর এলাকা, বড় কমলাক, তালছড়া ও গাউদো মোর এলাকা।