বাংলাদেশের আদিবাসীদের ভূমি ও জীবনের অধিকার নিয়ে আদিবাসী ফোরামের ফটিকছড়ি সম্মেলন
জুনিয়া ত্রিপুরা,ফটিকছড়ি থেকে: আদিবাসীদের স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ করা যাবেনা। অন্তত এই ভুজপুরে কোন আদিবাসীর উপর নির্যাতন হলে কিংবা ভূমি থেকে তাদের উচ্ছেদের অপচেষ্টা করা হলে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। আদিবাসীদের সাথে আমাদের এখানকার সম্পর্ক খুবই গভীর। পারষ্পরিক প্রতিবেশী হিসেবে আমরা বাস করছি। একজন নাগরিক হিসেবে তারা রাষ্ট্রের সকল অধিকার ভোগ করবে। তার পরেও একটি সংগঠনে ঐক্যবদ্ধ থেকে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম,ফটিকছড়ি উপজেলা শাখার প্রথম সম্মেলন ও কাউন্সিল উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলছিলেন ভূজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মো. ইব্রাহিম তালুকদার। তিনি বলেন, আদিবাসীরা নানা ক্ষেত্রে অনগ্রসর অবস্থায় রয়েছে। তাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা গ্রহণসহ যে কোন সমস্যার জন্য আমি আদিবাসীদের সাথে আছি এবং থাকব। আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগকে স্বাগত জানান প্রধান অতিথি। ৭ জুলাই ২০১৭ ভূজপুরস্থ ষ্টার ক্লাবে দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিতেয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ধামারখিল নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হরি চন্দ্র ত্রিপুরা। বাংলাদেশের আদিবাসীদের ভূমি ও জীবনের অধিকার শ্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, চট্টগ্রামের সভাপতি শরৎ জ্যোতি চাকমা, জাতীয় কমিটির সদস্য ফুল কুমার ত্রিপুরা, ফটিকছড়ি প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ফটিকছড়ি প্রতিনিধি মো. ইউনুস, আওয়ামী যুবলীগের নেতা মাসুদ রানা, জিংমুন লিয়ান বম,পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বাচ্চু চাকমা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সভাপতি সুমন চাকমা প্রমুখ। এছাড়াও ফটিকছড়ির বিভিন্ন গ্রাম,মিরসরাই, সিতাকুন্ড ও হাটাজারি থেকে আগত প্রতিনিধিরা সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন এবং বাস্তব ক্ষেত্রে তারা যে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। সম্মেলনের অন্যতম আলোচক শক্তিপদ ত্রিপুরা বলেন,আদিবাসীদের আধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে হবে। সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হলে সৎ এবং ত্যাগী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, যে সৎ এবং ত্যাগী মনমানসিকতা নিয়ে সংগঠনে এসে নেতৃত্ব দিবে কোন বাধা তাকে দমিয়ে রাখতে পারবেনা। তিনি আদিবাসীদের পশ্চাৎপদ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে যথাযথভাবে শিক্ষা গ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সম্মেলনে বক্তরা বলেন, দেশে ৫০টির অধিক জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ লক্ষ আদিবাসী মানুষকে অবহেলায় রেখে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ কিংবা উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবেনা। বক্তারা জাতিসংঘ ঘোষিত আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র এবং আইএলও কনভেনশন ১৬৯ মেনে নিয়ে দেশে পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী আদিবাসীদের রাষ্ট্রের উন্নতি বিধানে অংশ গ্রহণের সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। তারা আদিবাসীদের পরিচয় লাভের অধিকার নিশ্চিত করত আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণরুপে বাস্তবায়নের দাবি জানান।
শেষে হরি চন্দ্র ত্রিপুরাকে সভাপতি, জুনিয়া ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক এবং ক্লেতুশ টুডু রানাকে সাংগটনিক সম্পাদক করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। নব গঠিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের জাতীয় কমিটির সদস্য ফুল কুমার ত্রিপুরা।