আঞ্চলিক সংবাদ

বড় দিনের আগেই দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ল লামার ১৭ ত্রিপুরা পরিবারের বাড়ি

আইপিনিউজ, বান্দরবান: বান্দরবান জেলাধীন লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পূর্ব বেতছড়া তংগঝিরি পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আদিবাসী ত্রিপুরা খ্রিস্টানদের ১৭টি বাড়ি দুর্বৃত্তরা পুড়ে ছাই করে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
নিজেদের গ্রামে গির্জা না থাকায় বড়দিনের আগে উক্ত গ্রামবাসীরা পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গেলে, সেই সুযোগে একদল দুর্বৃত্ত আজ (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে ঐ বাড়িগুলো অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়।

জানা গেছে, পূর্ব বেতছড়া তংগঝিরি পাড়া গ্রামে ১৯টি ত্রিপুরা খ্রিস্টান পরিবারের ১৯টি বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র দুটি অক্ষত রয়েছে। পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন কেউ কেউ পূর্ব বেতছড়া তংগঝিরি পাড়া গ্রামকে নতুন তংগঝিরি পাড়া বলেও অভিহিত করে থাকে।

এই গ্রামের কার্বারি পাইসাপ্রু ত্রিপুরা বলেন, এই পাড়াটি আমাদের অনেক পুরনো পাড়া। বিগত চার-পাঁচ বছর আগে একদল লোক নিজেদের ‘এসপির লোক’ পরিচয় দিয়ে জোরপূর্বক পাড়াটি উচ্ছেদ করে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর দখলদাররা পাড়া ছেড়ে চলে যান। এর পর ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার সেখানে এসে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করে। এখানে গির্জা না থাকায় বড়দিন উপলক্ষে নতুন পাড়ার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি খালি রেখে গতকাল (২৪ ডিসেম্বর) রাতে সবাই পার্শ্ববর্তী তংগঝিরি পাড়ায় যায়। আর এরই মধ্যে দুর্বৃত্তরা এসে অগ্নিসংযোগ করে বাড়িগুলো ভস্মীভূত করে।

স্থানীয়রা আরও জানান, তিন-চার বছর আগে একদল লোক সেখানে এসে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের স্ত্রীর নামে উক্ত পাড়ার জায়গা ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে জানান। সেই অজুহাতে ঐ লোকেরা জোরপূর্বক পাড়াবাসীদের উচ্ছেদ করেন এবং সেখানে একটি বাগান করেন।

ভস্মিভূত বাড়ির ধ্বংসাবশেষ।

প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের নাম- ১. গুংগা মনি ত্রিপুরা, পীং-আস্তানিয়া ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৪ জন; ২. চন্দমনি ত্রিপুরা, পীং-নগচন্দ্র ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৭ জন; ৩. সিয়ান্দ্র ত্রিপুরা, পীং-আমাদা ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ জন; ৪. বিদ্যাচন্দ্র ত্রিপুরা, পীং-বিশ্বম্ভ ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৫ জন; ৫. বিজয় ত্রিপুরা, পীং-উজিরাং ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৪ জন; ৬. ওবদিয় ত্রিপুরা, পীং-বামিচন্দ্র ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৬ জন; ৭. তিকরাম ত্রিপুরা, পীং-জমাতিয়া ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ১০ জন; ৮. অনসারাই ত্রিপুরা, পীং-দুগাচরণ ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৭ জন; ৯. গ্রেন ত্রিপুরা, পীং-রাংতহা ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৫ জন; ১০. তারাসিং ত্রিপুরা, পীং-দাওতহা ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৭ জন; ১১. রতমানিক ত্রিপুরা, পীং-জগরাং ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৪ জন; ১২. জয়চন্দ্র ত্রিপুরা, পীং-চাইন্দাপ্রু ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৭ জন; ১৩. মার্ঝেল ত্রিপুরা, পীং-পতিজন ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৮ জন; ১৪. গুংগারাং ত্রিপুরা, পীং-বালাজন ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৪ জন; ১৫. গুংগা মানিক ত্রিপুরা, পীং-বালাজন ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৬ জন; ১৬. বাশিচন্দ্র ত্রিপুরা, পীং-মোনাজন ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৫ জন ও ১৭. অজারাম ত্রিপুরা, পীং-বাশিচন্দ্র ত্রিপুরা, পরিবারের সদস্য ৪ জন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বর্তমানে তীব্র শীতেও খোলা আকাশের নিচে অত্যন্ত কষ্টে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।

Back to top button