মতামত ও বিশ্লেষণ

প্রসঙ্গ: ভাইরাস, ভাইরাস আর এন্টিভাইরাস খেলা, বিপদে আমজনতার অনেক দেশের বেলা!

ঐতিহাসিক আগের মুসলিম মণীষীর চিরন্তন বাণী- “জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীন দেশে যাও।” এতে বোঝা যায় চীন সুদূরকাল হতে অনেক অনেক উন্নত। চীনের প্রাচীর ঘটনার ইতিহাসে অম্লান সাক্ষী! ভাগ্যক্রমে আমার জীবনে একরাতের জন্য চীনের আধুনিক রাজধানী Kumming এ অবস্থান করতে হয়েছে, সেই সুবাধে চীন এর আরেক শহর Nanjingও কিছুটা দেখার সৌভাগ্য পেয়েছি। অাধুনিকতার ছোঁয়ায় চীন এককথায় অপূর্ব, সৌন্দর্য স্থাপত্য সর্বদা আকাশচুম্বী। প্রযুক্তিতেও তারা এখন অনেকটা অদ্বিতীয়। মাত্র ১০ দিনেই বহুতল হাসপাতাল বানানোর ক্ষমতাও তারা করে দেখিয়েছে। আমার এক ঘনিষ্ঠ China প্রফেসর বন্ধুুও রয়েছে। তার মারফত China এর বর্তমান অবস্থা কিছুটা জানতে পারিও বটে। কারন সে ইংরেজিতে খুব গুছিয়ে চীনে তার অবস্থা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বেশ ভালোভাবে বর্ণনা করে লিখে। চীনের জনপথ এখন Corona নামক ভাইরাসে আক্রান্ত। মিডিয়ার মাধ্যমে যতটুকু জানা যাচ্ছে বন্যপ্রাণী সাপ বা বাঁদুর থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি উহান নামক চীনের বাণিজ্যিক সিটিতে, যেখানে আমেরিকার Apple কোম্পানীর iphone উৎপাদনের শাখাও রয়েছে। কথা হলো চীন তো এরকম বন্যপ্রাণী আজকে খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করছে না, তারা ঐতিহাসিক কাল হতে যুগেযুগে খেয়ে আসছে। কিন্তু এমন চরম রোগের প্রভাব তাদের দেশে আর কখনো এভাবে ধেয়ে আসেনি। যার ধরুন পুরো বিশ্ব ক্যামেরার ফোকাস এখন চীন কেন্দ্রিক তাঁর ফাঁকে অনেককিছু সংবাদ আবার পিছনে ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
মনে আছে ২০০৪ সালে কেনিয়ার বিখ্যাত পরিবেশবাদী রাজনীতিববিদ Wangari Maathai শান্তিতে Nobel prize পেয়েছিলেন। তিনি Aids (HIV Virus) সম্পর্কে তখন আক্ষেপ করে সরাসরি বলেছিলেন- এই AIDS রোগ কৃত্রিমভাবে আমেরিকা সৃষ্টি করেছে। যেই রোগের প্রাদুর্ভাব শুধুমাত্র আফ্রিকা তে অতিমাত্রায় প্রসারিত। যার প্রপোগান্ধা প্রচলিত আছে এই রোগ বানর থেকে মানুষের কাছে সংক্রমিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন আফ্রিকার মানুষ সেই আদিমকাল হতে বানরসহ অন্য বন্য প্রানীর সাথে সহাবস্থান করেই আজকের অবস্থানে, কই তখন তো এই AIDS রোগ সংক্রামক হয়নি? যে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি শুরু হয়েছে ৮০’র দশকে, এখন পর্যন্ত এই রোগের চিকিৎসার ঔষধ আবিস্কার করা হয়নি। অথচ মারা যাচ্ছে মানুষ এইডসে অগণিত। এতদস্বত্ত্বেও আমরা যা জানি এইতো আর কিছুদিন পরে মানুষ মঙ্গলগ্রহে পা রাখবে। চীন ঘোষনা দিয়েছে ২০২০ সালে তাদের আকাশে ৩ টি কৃত্রিম চাঁদ উত্তোলন করবে।
এছাড়া আমরা সবাই জানি পৃথিবীর বেশিরভাগ স্বর্ণ খনি কিন্ত আফ্রিকাতে রয়েছে। তাই মনে হয় সম্পদ অনেক ক্ষেত্রে মানুষের ভাগ্য নয়, বরং দুর্ভাগ্যই বয়ে আনে। আফ্রিকা কিন্তু তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। আমেরিকা- ইউরোপ তাদের যুগ থেকে যুগান্তরে শোষন করে চলেছে! অথচ তারা সোনা’র সোহাগ হাতে পায়না। চীনের বর্তমান অবস্থা তার ব্যতিক্রম ব্যত্যয় তা বলা এখন মুশকিল!! চীন পুরো বিশ্বের কাছে এখন শুধু অর্থনীতিতে Super Power নয়, সম্পদ ও নিজস্ব প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও পশ্চিমা বিশ্ব থেকেও অনেক অনেক এগিয়ে। Corona Virus হেতু বর্তমানে চীন সরকার প্রতিনিয়ত চরম দুর্যোগ, কালিমা মোকাবেলা করছে। তার সাথে আরো পাল্লা দিচ্ছে বহির্বিশ্বে চীনের প্রতি ন্যাক্কারজনক কূটনৈতিক আচরনের প্রভাব মোকাবেলা করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা অমান্য করে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশ তাদের দেশে চীনের সুস্থ(করোনাভাইরাস মুক্ত) নাগরিকদেরও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না, এমনকি যারা অন্যদেশের নাগরিক অতিশ্রীঘ্র চীনে ভ্রমন করেছেন তাদেরও প্রবেশে না। অথচ তারা নাকি Coronavirus এর Vaccine উৎপাদনে গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। চীনকেও সেই Vaccine নেওয়ার জন্য চুক্তির প্রস্তাব দিচ্ছে। যা কিনা অতীব চিন্তার বিষয়; কিন্তু বিষয়টি খালি চোখে সেভাবে দেখা যাবে না, বা ভাবা যাবে না। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যুক্তি এভাবে যদি চীনের নাগরিকদের ভ্রমণে বা প্রবেশে দেশে দেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় বরং তারা অবৈধ উপায়ে প্রবেশ করে Corona Virus আরো বেশি মাত্রায় সেসব দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা সৃষ্টি হবে। তাই সন্দেহ দানা বাঁধে এসব ভাইরাস, ভাইরাস এবং এন্টি ভাইরাস বা Vaccine খেলাটি পুরো বিশ্বে জুয়াখেলা বা ব্যবসায় রূপান্তর হবেনা তার নিশ্চয়তা কোথায়??
আসুন একটু অন্যভাবে দেখি-
অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত চীনের কাছে আমেরিকার ঋণ ১.১০ ত্রিলিয়ন ডলার (সূত্র: Thebalance.com)। এই ঋণ পরিশোধ করা কিন্তু এত সহজ নয়। কারন আমেরিকার গায়ে পড়ে যুদ্ধে জড়ানোর স্বভাব আমরা দেখেছি ইরাক, লিবিয়া, আফগানসহ অনেকদেশে, যেখানে তাদের অর্থকড়ি, জ্বালানী অনেক অনেক খরচ হয়েছে। দেখা যাচ্ছ। আমেরিকা এখন দেনার দায়ে কিছুটা গ্রস্ত। অন্যদিকে চীন মৈত্রীভাব পোষণ করে নিজের প্রযুক্তি ও বাণিজ্যকে সম্প্রচারিত করেছে পুরো বিশ্বজুড়ে। এতে তাদের অর্থনৈতিকচক্র প্রবৃদ্ধি দিনে দিনে অতিমাত্রায় বেড়েছে এবং বাড়ছে।
আসলে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ও তার চরিত্রগত সরকার আসলে মানুষ ও মানুষের মানবিকতাবোধ নয়, সবসময় চায় সম্পদ ! ইসরাইল মিডিয়াও কিন্তু আমেরিকার সাফাই গেয়ে চলেছে। সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে তারা বলছে চীন জীবানু অস্ত্র উৎপাদনের সময় Corona ভাইরাস গবেষণাগার হতে বের হয়ে আসতে পারে, ইত্যাদি ইত্যাদি! এমতাবস্থায় চীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকা ও ইসরাইলের এমন বিরূপ আচরনে প্রতিবাদ স্বরূপ বিবৃতি দিয়েছে অবশ্য।
মনে পড়ে নিশ্চয় কিছুদিন আগে আমরা দেখেছিলাম চীনের Huawei কোম্পানির সাথে আমেরিকার অস্বাভাবিক দ্বন্দ্ব। অনুমেয় আমেরিকার সাথে যেকোন দিক দিয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু একমাত্র চীন। এমনকি চীন তাদের দেশে Facebook ব্যবহার পর্যন্ত অনুমতি দেয়নি। তারা সবসময় নিজস্ব প্রযুক্তিকে provide বা promote করে।
কিছুদিন আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে প্রকাশ্যে ইরাকে ড্রোন দিয়ে ইরানের শীর্ষ সামরিক জেনারেল সোলায়মানিকে হত্যা করল, তা পুরোটাই এখন ধামাচাপা খেল করোনা ভাইরাস ইস্যুতে। আর Renault সিইও কার্লোস ঘোসান বিচারে দুর্নীতির সাঁজা হবে জেনে তা থেকে বাঁচার জন্য জাপান থেকে গোপনে জেটবিমানে পলায়ন করলো তাও নিউজ ফিডে তেমন একটা আসল না….ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্লক থেকে ৩১ জানুয়ারি২০২০ গ্রেট ব্রিটেন বের হয়ে গেল তাও বেশিমাত্রায় প্রকাশ পেল না। অবশ্য নি:সংকোচে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়াটাকে উল্লেখ করেছেন Historical Alarm! হিসেবে। তাই বলতে হয় Cronovirus ইস্যুটি কিন্তু এখন অনেক সুদূরপ্রসারী!!
বুঝতে বাকি থাকে না, বিশ্ব তার মসৃণতা হারিয়ে ফেলছে অতিমাত্রায়! কারন পুরো বিশ্বে এখন Climate Change এর দিক গ্লোবাল Alarming এর অবস্থায়!! Climate change এর ক্ষেত্রে যে অতিমাত্রায় প্রভাব পড়ছে দেশে দেশে তার খবর খুব কম মানুষ রাখছে। দেখা যাচ্ছে ইউরোপে শীতকালেও তেমন একটা শীত আর নেই, ইউরোপের কিছু দেশে এখন শীতকালেও তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রীর উপরে। অস্ট্রেলীয়াতে তো গরমের মাত্রা অনেক বেশি এবং Bushfire স্মরণাতীতকাল মাত্রা অতিক্রম করেছে। পৃথিবীর Oxyzen খ্যাত Amazon জঙ্গল দিনকে দিন আগুনে পুড়েছে। তার সাথে এখন যোগ হলো নতুন মাত্রায় Corona Virus. মানুষের আতংক এখন ঘরের কোণে কোণে পৌঁছেছে। আতংকে মানুষ মারা যাবে না তারও কোন ইয়ত্ত্বা নেই। আর মানুষে মানুষে বিশ্বাসের মাত্রা এখন বলতে গেলেে Zero Tolerance!!
চীনকে আমরা কিন্তু গণচীন বলি। কারন তাদের রয়েছে অগণিত জনসসুদ্র। এই ৪০০- ৫০০-১০০০ মানুষ মারা গেলে তাঁদের কিছু যায় আসবে না। তারা এই সমস্যা যেভাবে হোক কাটিয়ে উঠবে। কারন তারা সর্ব পারদর্শী এবং ঠান্ডা মাথায় সবকিছু সামাল দেওয়ার চেষ্টায় আছে। সমস্যা দানা বাঁধবে শক্ত করে তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশগুলিতে।
তাই ভাবতে হয় প্রযুক্তিতে যে ভাইরাস এন্টিভাইরাস ব্যবসার খেলা; এখন মানুষের নিকট গণহারে ভাইরাস (Corona Virus) প্রয়োগ বা ছড়িয়ে দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এন্টি ভাইরাস (Vaccine) ব্যবসাসহ অন্যান্যব্যবসা কৃত্রিমভাবে হচ্ছে নাতো!!?? তা হয়তো সময়ও বলে দিবে।
শেষে বলতে হয় সামনের দিনগুলোতে এ Coronavirus আক্রমন কাটিয়ে চীন কি নতুন নতুন পদক্ষেপ নেয় তা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। কারণ ইতিমধ্যে আমেরিকার ত্রাশ উত্তর কোরিয়ার পরমানু বোমার একনায়ক জনাব কিম জং উন কিন্তু চীন সরকারকে এই দুর্যোগ মুহূর্তে সমবেদনা জানিয়েছে। নাকি মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে পুরো বিশ্বকে Over Trump করে বসে!!
লেখক: মেকসুয়েল চাকমা,
আইনজীবি ও মানবাধিকার কর্মী, প্যারিস থেকে

Back to top button