আঞ্চলিক সংবাদ

প্রথাগত আইনে নারীর অংশগ্রহণের বিষয়ে রাঙামাটিতে সেমিনার

রাঙ্গামাটিতে আশিকা সম্মেলন কক্ষে প্রোগ্রেসিভ ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উদ্যোগে উন্নয়ন কর্মী ও গবেষক নবলেশ্বর দেওয়ান এর গবেষণা প্রতিবেদন “পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীর অংশগ্রহণ” প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় পার্বত্য চট্টগ্রামে তিন জেলায় তিন সার্কেল এর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের নারী প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে মতামত প্রকাশ করেন। গবেষণা প্রতিবেদন শেয়ারিং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএইচটি এক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি ও হিমওয়ান্তি নির্বাহী পরিচালক টুকু তালুকদার, বিশেষ অতিথি ছিলেন সুব্রত চাকমা- সচিব, চাকমা সার্কেল অফিস,মোনঘর নির্বাহী পরিচালক অশোক কুমার চাকমা, সমাজ কর্মী অম্লান চাকমা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, উন্নয়ন কর্মী সহ রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত হেডম্যান-কার্বারী বৃন্দ। গত ১ এপ্রিল সোমবার রাঙামাটিতে এই সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

শেয়ারিং অনুষ্ঠানে এনজিও কর্মী নুকু চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রোগ্রেসিভ এর নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা। গবেষক ও উন্নয়ন কর্মী নবলেশ্বর দেওয়ান তার গবেষণায় তিন জেলায় তিন সার্কেল এর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের নারী প্রতিনিধি অংশগ্রহনকারীদের মতামত “পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীর অংশগ্রহণ” শীর্ষক গবেষণা ফলাফল উপস্থাাপন করেন। তিনি গবেষণায় প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে সংখ্যাগত (%) ও গুনগত (সক্ষমতা ও কাজের পরিবেশ), সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহে নারীদের অংশগ্রহণ বিষয়টি উপস্থাপন করেন।

আলোচনায় রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন মৌজা থেকে নারী কার্বারীগন নিজ নিজ পাড়ার সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা, বাঁধা সমূহ তুলে ধরেন। রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার শুকর ছড়ি মৌজার মহিলা সমিতি সভাপতি শ্রাবন্তি চাকমা, বাঘাইছড়ি উপজেলার সার্বোতলী মৌজার ক্যামেলিয়া চাকমা সহ এনজিও কর্মী সহ নারী প্রতিনিধিরা বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে নারীদের সম্পৃক্ত করা হয়না, বিভিন্ন বিচার ব্যবস্থা বা সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে চাইনা এবং সরকারী ভাবে ভাতার ব্যবস্থা থাকেনা, থাকলেও যথাযথ নয়। ১১০ নং শুকরছড়ি মৌজার বোধিপুর গ্রামের কার্বারী বিজয় কুমার চাকমা বলেন, প্রথাগত নেতৃত্ব একটি বৃটিশ শাসন আমলের প্রতিষ্ঠান, এক সময় বাপ-দাদার যখন পাড়ায় বা গ্রামে নেতৃত্বে ছিলেন, তখন সরকারী বা যে কোন প্রশাসনের লোক গ্রামে প্রবেশ করলে আগে কার্বারী বা হেডম্যানকে অবগত করা হতো, কিন্তু এখন রাষ্ট্রীয় প্রশাসন আমাদের কোন সম্মান বা মূল্যায়ন করেনা। মোনঘর প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক অশোক কুমার চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত শাসন ব্যবস্থা একটি ঐতিহ্যবাহী শাসন ব্যবস্থা, কিন্তু বাস্তবে সাংবিধানিক দিক থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর কতটুকু কার্যকর ভাবার বিষয়। ট্রাডিশনাল সিস্টেম যদি কার্যকর করা হয় তাহলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতার প্রয়োজন পরেনা। পার্বত্য জেলা পরিষদ যদিওবা কার্যকর রয়েছে, কিন্তু যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা কতটুকু জানে জেলা পরিষদের ভূমিকা। বিশেষ অতিথি বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চীফ এর সচিব সুব্রত চাকমা বলেন, একটি প্রেক্ষিতের কারনে চাকমা সার্কেলে নারী কার্বারী নিয়োগের সুত্রপাত হয়, একসময় শুধু পুরুষ কার্বারীরা বিচার-সালিশে অংশগ্রহন করতেন। এতে নারীদের পক্ষে বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপতে কিছু বলার থাকেনা বা ইচ্ছা থাকলেও বলতে পারতেন না, ফলে বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করে চাকমা সার্কেল থেকে নারী কার্বারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় এবং এতে অনেক প্রতিকুলতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন।

সভাপতির বক্তব্যে টুকু তালুকদার বলেন, চাকমা সার্কেলের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে আজ নারীরা সফলতা পেতে চলেছে, তবে শুধু সহযোগীতা বা আশ্বাসের আশায় না থেকে নিজেকে নিজের যোগ্যতা প্রমান করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে।

Back to top button