বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল আদিবাসী তরুণরা জাতিসংঘে তুলে ধরছে নিজেদের কথা
আইপিনিউজ, আন্তর্জাতিক ডেক্স: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদরদপ্তরে চলছে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২৩ তম অধিবেশন। গত ১৫ই এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই অধিবেশন আগামী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এবছর এই অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে “আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের প্রেক্ষাপটে আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ত্বরান্বিতকরণ: আদিবাসী যুবদের কন্ঠ জোরালোকরণ”।
বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাতিসংঘের এই অধিবেশনে এবছর বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকজন প্রতিশ্রুতিশীল আদিবাসী তরুণ অংশগ্রহণ করছেন। বাংলাদেশ থেকে এবছর এশিয়া ইন্ডিজিনাস পিপলস প্যাক্ট এর নির্বাহী সদস্য (তরুণ) চন্দ্রা ত্রিপুরা, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি চিরান, আয়েত্রী রায়, তৈসা ত্রিপুরা, উটিং মারমা প্রমুখ এই অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়াও কানাডা প্রবাসী অগাস্টিনা চাকমা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে মনোজিত চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ে এই অধিবেশনে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।
জানা গেছে অধিবেশন চলাকালে নির্ধারিত এজেন্ডাসমূহের আলোকে বাংলাদেশের আদিবাসীদের অবস্থার অগ্রগতি ও মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন প্রেক্ষাপট অত্যন্ত জোরালোভাবে তুলে ধরছেন অংশগ্রহণকারী আদিবাসী তরুণরা। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে অধিবেশনের আইটেম-৪ এর উপর গত ১৯ এপ্রিল বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন মনোজিত চাকমা। তাঁর বক্তব্য মনোজিত চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক সামরিকায়ন ও অধিকার কর্মীদের ক্রিমিনালাইজ বন্ধ করে অচিরেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণের মানবাধিকার রক্ষা ও প্রসারের আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও ২৬ এপ্রিল তিনি আইটেম ৬ এর উপর বক্তব্য রাখেন।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অপর এক তরুণ প্রতিনিধি অগাস্টিনা চাকমা গত ২২ এপ্রিল আইটেম ৫ এর উপর আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক স্পেশাল র্যপোর্টিয়ার ও আদিবাসীদের অধিকার সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কর্মব্যবস্থার সাথে মানবাধিকার সংলাপ; সাধারণ সুপারিশ নং ৩৯ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বার্ষিক পর্যালোচনা”এর উপর বক্তৃতা উপস্থাপন করেছেন।
অগাস্টিনা চাকমা তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন যে, ২০২৪ সালের এপ্রিলে, গর্ভবতী নারী সহ মোট ৫৪ জন নির্দোষ বম আদিবাসী ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে, ছয়জন আদিবাসী ম্রো নারী একজন সেটেলার কর্তৃক নির্মমভাবে লাঞ্ছিত হন। ২৯শে জুন ২০২৩-এ, একজন ৩৫ বছর বয়সী জুম্ম নারী ঈদের সময় দুইজন বাঙালি সেটেলার কর্তৃক ধর্ষনের শিকার হন এবং ঐ একই দিন অন্য আরেকজন নারী ধর্ষনের শিকার হন। এমনতর পরিস্থিতিতে আদিবাসী নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মত অবস্থান না থাকার কারণে তারা আজ নিজ ভূমিতে নির্বাক ও প্রান্তিকতায় পর্যবসিত।
এদিকে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের পক্ষে অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি টনি চিরান। তরুণ আদিবাসী অধিকারকর্মী টনি চিরান গত ২২ এপ্রিল ২০২৪ এজেন্ডা আইটেম-৫ এর উপর বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে আদিবাসী মানবাধিকারকর্মীরা নিয়মিত নানাভাবে হয়রানি ও মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্প, পর্যটন, রাবার বাগান স্থাপন প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশের আদিবাসীরা প্রায়শই নিজেদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে। তাছাড়াও আদিবাসী মানবাধিকার কর্মীরা হয়রানি, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিবৃতিতে টনি চিরান অচিরেই বাংলাদেশের আদিবাসীদের উপর মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং বাংলাদেশের সমতল অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবানও জানান।