পিসিপি’র সাবেক সভাপতি বাবলু চাকমা’র পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন
সতেজ চাকমা: পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বাবলু চাকমা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি জার্মানির বখুমের রুহর্ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট রিসার্স এন্ড ডেভলপমেন্ট পলিসি থেকে এই ডিগ্রি অর্জন করলেন। অধ্যাপক ড. ইভা গারহাজ এবং অধ্যাপক ড. স্বপন আদনান এর তত্ত্বাবধানে থেকে বিগত চার বছরেরও অধিক সময় ধরে গবেষণা শেষে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁর গবেষণা অভিসন্ধর্ভের মৌখিক ডিফেন্স সম্পন্ন হয়। উক্ত মৌখিক ডিফেন্সে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. লওয়েনস্টেইন।
তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল “COMMUNITY, MARKET INTERMEDIARIES, AND THE STATE Survival-cum-Upward Mobility Strategies of Indigenous Villagers in the Chittagong Hill Tracts, Banglades”
গবেষণার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বাবলু চাকমা আইপিনিউজকে বলেন, এযাবৎকালে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে পাকিস্তান শাসনামল এবং বাংলাদেশ আমলের শাসকরা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে যেসব নীতি গ্রহন করেছে সেগুলো পাহাড়ের আদিবাসীদেরকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্রমাগত প্রান্তিক করেছে। উক্ত নীতিগুলো পাহাড়ের আদিবাসীদের প্রতিদিনকার সংগ্রামকে কীভাবে প্রভাবিত করছে তা আমি আমার গবেষণায় দেখানোর চেষ্টা করেছি।
তিনি আরো বলেন, নানা ধরণের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের মধ্যে থেকেও পাহাড়ের আদিবাসী চাষীরা কীভাবে সংগ্রাম করছে, বাজার ব্যবস্থায় যেসব মধ্যস্বত্বভোগীরা আছে তাদের সাথে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আদিবাসীরা কীভাবে নেগোশিয়েট করছে তা আমি এই গবেষণার মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করেছি।
গবেষণায় কী পেলেন জানতে চাইলে আইপিনিউজকে বাবলু চাকমা বলেন, আমি দেখেছি নানা ধরণের চাপের মধ্যেও আদিবাসীরা নিজেদের প্রথা ও চর্চাগুলো অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সংগ্রাম করছে। তবে পাহাড়ের বাজার ব্যবস্থা আদিবাসীদের অনুকূলে নেই। পাহাড়ের অর্থনীতি এবং বাজার দুটোই স্থানীয় আদিবাসীদের স্বপক্ষে নয়। এগুলো মধ্যস্বত্বভোগী ও বাঙালি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। তবে এর মধ্যে আদিবাসীরা নিজেদের প্রথাগত আদান-প্রদান ও কমিউনিটি সলিডারিটি বজায় রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে বাবলু চাকমা’র এই অর্জনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আদিবাসী শিক্ষার্থী পরিবারের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকেও তাঁকে অভিনন্দনও জানানো হয়। এছাড়া বহু বিশিষ্টজন এবং আদিবাসী সমাজের নেতৃস্থানীয় অনেকেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
পিএইডি ডিগ্রি অর্জনের অনুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, “ছোট হোক বা বড় হোক, সব ধরেণর ব্যক্তিগত সাফল্যের পেছনে অনেকের অবদান থাকে। ঠিক তেমনি আমার এই ক্ষুদ্র অর্জনের পেছনেও অনেকের অবদান রয়েছে। আমি তাঁদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।”
তিনি আরো বলেন, “আমি দেখছি যে আমার এ অর্জন শুনে অনেকেই খুশি হয়েছেন, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এটা প্রমাণ করে যে আমাদের ব্যক্তিগত প্রত্যেকটা অর্জনই আসলে কোন না কোনভাবে সামগ্রিক। এবং এটা প্রমাণ করে যে আমাদের মধ্যে নানা বিভেদ-বিভাজন বিরাজ করলেও, আমরা কোন না কোনভাবে একসাথে পথচলার রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করি। চলমান অনেক হতাশা ও নেতিবাচকতার মাঝখানে এই ক্ষুদ্র একটা একাডেমিক একটা সাফল্য যদি কিছু মানুষের বুকে আশা যোগায়, অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করে, তাহলে এর চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।”