পিসিপির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন
আমাদের মনকে উপনিবেশিক মনস্তত্ত্ব বেশ আগ্রাসন করেছে। আসন্ন আদিবাসী দিবসের জাতিসংঘের মূলসুর হচ্ছে- আদিবাসী ভাষা। কিন্তু দুভার্গ্যজনক হলেও সত্যি যে আমাদের চাকমা ভাষার মধ্যে বাংলা, মারমা ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষা, ত্রিপুরা ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষা এমনকি বাংলা ভাষার মধ্যেও ইংরেজীর ভয়ানক আগ্রাসন। চাকমা, মারমা কিংবা ত্রিপুরা’র পাশাপাশি বাংলা বা ইংরেজী বলতে পারার মধ্যে জুম্ম প্রজন্মের যে ’নাগরিকী’ হয়ে ওঠার ভাবনা খুব ভয়ানক। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ক্যাফেটেরিয়ার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ঢাবিতে ভর্তি হওয়া নবীন জুম্ম শিক্ষার্থীদের বরণ আয়োজনে এ কথা বলছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য দীপায়ন খীসা। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের শেকড়কে সাথে নিয়ে জীবনকে খুঁজে নিয়ে বিকশিত হওয়ার আহ্বানও জানান জনসংহতি সমিতির এই নেতা।
পিসিপির সাবেক এই ছাত্র নেতা আরো বলেন, তোমাদের অবশ্যই শত শত বছরের জুম পাহাড়কে জানতে হবে। না হলে জ্ঞানের চরম শীর্ষে যাওয়া যাবে না । আমরা যতই ঢাকাই থাকি না কেন, নাগরিক হয়ে ওঠার নানা কসরতে থাকি না কেন আমাদেরকে অবশ্যই পাহাড়কে নিয়ে ভাবতে হবে। পাহাড়ের পুরুষদের নানা মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার আর নারীদেরকে নানা সহিংসতার মধ্যে রেখে ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে রেখে পাহাড়ের জুমিয়া জীবনকে নি:শ্বাস বিহীন করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দীপায়ন খীসা।
পিসিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রিবেং দেওয়ানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জিনেট চাকমার পরিচালনায় অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খায়রুল চৌধুরী। তাঁর বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে গণতন্ত্র চর্চা ও তার উপস্থিতি নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে।নির্বাচত গণতন্ত্র নাকি জনগণের অংশগ্রহন মূলক গণতন্ত্র । যেখানে ইউরোপ, আমেরিকার উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে আদিবাসীদেরকে অধিকার দিয়েছে সেখানে গণতান্ত্রিক দেশে সরকার আদিবাসীদের এখনো অবহেলা করছে বলে অভিযোগ ব্যক্ত করেন এই শিক্ষক।
আদিবাসী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও সংগ্রাম করে। বৈশ্বিক, সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত পরিসরের নানা চ্যাঞ্জেকে ধারণ করেই পাহাড়ী শিক্ষার্থীদেরকে এগিয়ে যেতে হবে বলে প্রেরণা দেন এই শিক্ষক। পাহাড়ে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতায় অঘোষিত যুদ্ধকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে নারীর বিরুদ্ধে। তরুণী, বয়সী সব নারীরাই ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি সহ নানা সহিংসতার শিকার হয় বলে উল্লেখ করেন বিশিষ্ট এই শিক্ষক।
দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী অধিকারের সাথে যুক্ত এই আদিবাসী বন্ধু আরো বলেন, ঢাবিতে পড়–য়া জুম্ম শিক্ষার্থীদের বিসিএস থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হওয়ার নানা ব্যক্তিগত স্বপ্ন রয়েছে।তারপরেও আমাদের ব্যক্তিগত নানা স্বপ্নের মধ্যে সামষ্টিক স্বপ্নকে যদি বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে ব্যক্তিগত নানা স্বপ্নগুলো পাহাড়ের মানুষদেরকে এত আনন্দ দেবে না। আর সামষ্টিক সেই স্বপ্নটাই হচ্ছে পাহাড়ে যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার সমাগ্রিক বাস্তবায়ন। এর জন্য নবীন-প্রবীন সব শিক্ষার্থীকে এগিয়ে এসে ব্যক্তিগত স্বপ্নগুলোর পাশাপাশি সামষ্টিক স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে টেকসই স্বপ্ন বিনির্মান করতে হবে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন বিশিষ্ট এই শিক্ষক।
পাহাড়ের জুম্ম আদিবাসী মানুষদের জীবন- সংস্কৃতি, লড়াই, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং পাহাড়ের আদিবাসী মানুষদের টিকে থাকার সংগ্রামের সাথে পৃথিবীর মানব জাতির টিকে থাকার বিষয়টি জড়িত। আদিবাসীরা টিকে না থাকলে পৃথিবীও টিকে থাকবে না বলে মত দেন সমাজ বিজ্ঞানের এই াশক্ষক।
পৃথিবী ব্যাপি আদিবাসীদেরকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশে আদিবাসীদেরকে স্বীকৃতি দিতে পারেনি । নানা ব্যকরণিক ’পদ’ ব্যবহার করে এই রাষ্ট্র আদিবাসীদের পরিচয়কে দাবিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন ঢাবির এই শিক্ষক। তিনি আদিবাসীদের পরিচয়ের স্বীকৃতিসহ আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতিরও দাবী করেন ।
পিসিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সরল তঞ্চঙ্গ্যার স্বাগত বক্তব্যের পাশাপাশি বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন পিসিপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী মনিরা ত্রিপুরা। এছাড়া নবীনদের উদ্দেশ্যে মান পত্র পাঠ করেন ঢাবি’র মেধাবী শিক্ষার্থী শুভ চাকমা এবং নবীনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থী সৃষ্টি চাকমা। পরবর্তীতে সভার সভাপতি রিবেং দেওয়ানের সমাপনি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।