আঞ্চলিক সংবাদ

পাহাড়ে গ্রাফিতি অংকনে লাগছে সেনাবাহিনীর অনুমতি

আইপিনিউজ, বান্দরবান প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্য দিয়ে পতন ঘটে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা বৈষম্য ও নিপীড়নমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে দেশব্যাপী গ্রাফিতি অঙ্কন ও দেয়াল লিখন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই কর্মসূচির সাথে সংহতি জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরাও পাহাড়ের বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে তুলে ধরতে গ্রাফিতি অঙ্কন শুরু করে।

বাংলাদেশের সমতল জেলাগুলোতে কোন প্রকার বাধা-বিপত্তি ছাড়া শিক্ষার্থীরা গ্রাফিতি অঙ্কন ও দেয়াল লিখন সম্পন্ন করতে পারলেও পাহাড়ে সেনাবাহিনী এবং সেটলার বাঙালিদের নানা বাধার শিকার হচ্ছেন পাহাড়ী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে কখনো হামলা-লাঠিচার্জও করা হচ্ছে,
কিংবা কখনো গ্রাফিতি মুছে ফেলা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গ্রাফিতি আঁকার জন্য নিতে হচ্ছে সেনাবাহিনীর অনুমতি। অন্যদিকে গ্রাফিতি আঁকার বিষয়ও নির্ধারণ করে দিচ্ছেন সেসবও আইনরক্ষাকারী বাহিনী।

এদিকে জানা যায় গতকাল ১৭ আগস্ট) বান্দরবানের রুমায়ও শিক্ষার্থীদের গ্রাফিতি অংকনের পূর্বে সেনাক্যাম্পের অনুমতি নিতে হয়েছিল।

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা গ্রাফিতি অঙ্কন করতে গেলে সেনাবাহিনী বাধা প্রদান করে। পরে সেনাবাহিনীর স্থানীয় রুমা বাজার পাড়া ক্যাম্প কমাণ্ডারের নিকট লিখিত আবেদনপত্র দিয়েই তাদের গ্রাফিতি অঙ্কন করতে হয়েছে। এতে কি কি বিষয়ে দেওয়ালে অঙ্কন বা লেখা হবে তা সহ কয়েকজন প্রতিনিধির নাম-মোবাইল নম্বরও আবেদনপত্রের পিছনে লিখে দিতে হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।

বান্দরবানের রূমা উপজেলার শিক্ষার্থীদের অনিুমতি পত্র।

এদিকে এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে নিন্দার ঝর। অনেকেই এমন ‘স্বাধীনতা’কে নিয়ে উপহাস করছেন। সূচয়ন চাকমা নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁর ওয়ালে লিখেছেন “গতকাল বান্দরবানের রুমায় একটা অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটছে। সেখানে গ্রাফিতি আঁকার জন্য সেনাবাহিনীর কাছে দরখাস্ত জমা দিতে হইছে এবং কোন কোন লাইন দেয়ালে লেখা হবে সেইটা সেই দরখাস্তের পিছনে লিখে জমা দিতে হইছে।”

এ বিষয়ে নীতি চাকমা লিখেন, “পাহাড় ব্যতীত অন্য জায়গায় গ্রাফিতি আঁকায় সেনাবাহিনী বাধা দেয়? কিংবা গ্রাফিতি আঁকার জন্য সেনাদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়?”

এ ঘটনা বর্ণনা করে সুয়ে হাই নামে একজন লিখেছেন, “সমতলে হয়তো বাঙালিদের স্বাধীনতা হয় কিন্তু পাহাড়ে সেই স্বাধীনতা আসার পথ বহুদূরে।”

এদিকে গত ১০ আগস্ট খাগড়াছড়িতে কল্পনা চাকমাকে নিয়ে আঁকা গ্রাফিতি মুছে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর ১২ আগস্ট খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে গ্রাফিতি অঙ্কনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সেনাবাহিনী হামলা-লাঠিচার্জ করে ও এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে। এছাড়া গত ১৩ আগস্ট রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে শিক্ষার্থীদের গ্রাফিতি আঁকতে বাধা দেয় স্থানীয় সেটলার বাঙালিরা। রাঙামাটি জেলা সদরেও কল্পনা চাকমার গ্রাফিতি কালো রঙ দিয়ে মুছে দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Back to top button