পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক রাবিপ্রবিতে উপাচার্য নিয়োগের আবেদন
আইপিনিউজ ডেস্ক (রাঙ্গামাটি): রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত নানাবিধ জটিলতা দ্রুত নিরসনের জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করেছে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীবৃন্দ।
আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী হৃদয় চাকমা, ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী মনি বিলাস ত্রিপুরা এবং ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের ফিসারিস এন্ড মেরিন সাইন্স ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী পহেলা চাকমার নেতৃত্বে একটি দল রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টার নিকট উক্ত আবেদন পত্রটি পেশ করে।
আবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ১৮ আগস্ট উপাচার্য (ভিসি) সেলিনা আখতারকে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পদত্যাগে বাধ্য করে। তারপর থেকে প্রায় ৫ মাস সময় অতিক্রান্ত হতে চললেও উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যহীন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পরিচালনা, শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষক নিয়োগসহ নানা কার্যক্রম সম্পাদনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মনে সেশনজটের শঙ্কা ভর করেছে। উদ্ভুত এ সমস্যা দ্রুত নিরসনের জন্য উপাচার্য নিয়োগের কোন বিকল্প নেই।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা রাজনৈতিক ও শাস্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে স্বীকৃত।
স্মরণাতীত কাল থেকে এ অঞ্চলে বসবাসকারী পাহাড়িদের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতি, সামাজিক রীতিনীতি, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনধারা বাঙ্গালি জনগোষ্ঠী থেকে স্বতন্ত্র। স্বীকৃত উপজাতীয় অধ্যুষিত বিশেষ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণকল্পে তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সম্বলিত বিশেষ শাসন ব্যবস্থা বিদ্যামান রয়েছে।
উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে পরিচালনার জন্য কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় পাহাড়িদের অগ্রাধিকার প্রদানের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ঘ খন্ডের ১৮ নং ধারায় বলা আছে, “পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল সরকারি, আধা সরকারি, পরিষদীয় ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারী পদে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়োগ করা হইবে।”
তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসন ব্যবস্থা, স্বাতন্ত্র্যতা ও জাতিবৈচিত্র্যতার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ উপাচার্য, প্রক্টর, ট্রেজারার ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তির ধারা ও উপধারা অনুসরণ বাস্তবসম্মত ও যুক্তিসিদ্ধ।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ উপাচার্য পদত্যাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠার জন্য ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সমন্বয় সভা করে। সমন্বয় সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেষ্ট্রি এন্ড এনভায়রেনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক ড. নিখিল চাকমাকে পরবর্তী উপাচার্য নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত জরুরি আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করার দায়িত্ব প্রদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব বরাবর আবেদন দাখিল করা হয়।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো: শাহীনুর ইসলাম কতৃর্ক স্বাক্ষরিত ৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ড. নিখিল চাকমাকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব পালনের অনুমতি প্রদান করেন। তা সত্ত্বেও অদ্যাবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছে না।
এমতাবস্থায় রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত নানাবিধ জটিলতা নিরসনের জন্য নিম্নোক্ত দাবিসমূহ জানাচ্ছি—
১। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক স্থানীয়দের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উপাচার্য, উপ উপাচার্য, প্রক্টর, প্রভোস্ট নিয়োগ দিতে হবে।
২। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সকল প্রশাসনিক পদে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক স্থানীয় পাহাড়িদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
৩। গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তির পরীক্ষার পাশ মার্ক শিথিল করা।
রাবিপ্রবিতে পড়ুয়া প্রায় দুই শতাধিক আদিবাসী শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সংবলিত আবেদন পত্রটি সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালযয়ের উপদেষ্টা ও পাবর্ত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানকেও অনুলিপি প্রদান করা হয়।