আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামে পার্বত্য চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জেএসএস প্রতিনিধি মনোজিত চাকমার

আইপিনিউজ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক, নিউইয়র্ক: জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ২৪তম আদিবাসী বিষয়ক জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরাম (UNPFII)-এর অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ( PCJSS) প্রতিনিধি মনোজিত চাকমা ২৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। আলোচ্য বিষয় ছিল এজেন্ডা আইটেম ৪: “স্থায়ী ফোরামের ছয়টি ম্যান্ডেটেড ক্ষেত্র (অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানবাধিকার), যা জাতিসংঘের আদিবাসী জনগণের অধিকার সম্পর্কিত ঘোষণাপত্র ও টেকসই উন্নয়ন ২০৩০ এজেন্ডার আলোকে বিবেচ্য”।

মনোজিত চাকমা বলেন, জাতিসংঘের আদিবাসী অধিকার ঘোষণাপত্র ও ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা আদিবাসী জনগণের উন্নয়নের জন্য একটি যুগান্তকারী নীতিমালা হতে পারত। যদিও কিছু ক্ষেত্রে এদের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে, অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে তা ব্যর্থ হয়েছে সরকারের দুরভিসন্ধি, শাসকগোষ্ঠীর অনিচ্ছা, ধর্মীয় মৌলবাদ ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর বাধার কারণে। এ ধরনের পরিস্থিতি পার্বত্য চট্টগ্রামের (CHT) জুম্ম আদিবাসীদের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী ফোরামের ছয়টি ম্যান্ডেটেড ক্ষেত্রই মূলত স্থবির হয়ে আছে। সরকারের অবহেলা, সাধারণ মানুষের ভুল ধারণা, মৌলবাদীদের চাপ এবং সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে এগুলো অগ্রসর হতে পারছে না। সরকারের সদিচ্ছা ও সক্রিয় পদক্ষেপ থাকলে এই এলাকাগুলোতে বাস্তব উন্নয়ন সম্ভব এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হয়ে উঠতে পারত।

মনোজিত চাকমা আরও বলেন, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের সঙ্গে যে চুক্তি করে—সেই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। স্বাক্ষরকারী সরকার এখন ক্ষমতাচ্যুত এবং স্বৈরাচারী আচরণের জন্য দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে) পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এবং এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষমতা রাখে।

২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি ঢাকার জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB)-এ “আদিবাসী” শব্দটি পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে ফেলার প্রতিবাদ করতে গেলে আদিবাসীদের ওপর “স্টুযেন্টস ফর সভারেন্টি” নামক সেটলার বাঙালিদের একটি গোষ্ঠী হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ২০ জন আদিবাসী আহত হন, যার মধ্যে ৭ জন গুরুতর। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যে পাঁচজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে, তিনজন জামিনে মুক্তি পেয়েছে। অতীত সরকারের মতো যেন এই সরকারও বিচারহীনতা প্রদর্শন না করে—এটাই আদিবাসীদের প্রত্যাশা।

একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষ কমিটি পুনর্গঠন করেছে। তবে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি, যা উদ্বেগজনক।

তিনি জাতিসংঘকে আহ্বান জানান যেন তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যৌক্তিক পরামর্শ ও দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানায়, যাতে করে জুম্ম আদিবাসীরা স্থায়ী ফোরামের ছয়টি ম্যান্ডেটেড ক্ষেত্র বাস্তবে উপভোগ করতে পারে এবং তাদের জীবনে তা প্রভাব ফেলতে পারে।

এই অধিবেশনে বাংলাদেশের বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন, যার মধ্যে রয়েছেন: কপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা; পিসিজেএসএস-এর প্রতিনিধি চঞ্চনা চাকমা, অগাস্টিনা চাকমা, মনোজিত চাকমা ও মং ও প্রু; বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের টনি চিরান; এবং কানাডা থেকে চিটাগাং হিল ট্র্যাকস ইন্ডিজেনাস পিপলস কাউন্সিলের বিজুবি চাকমা।

সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে একটি ৬-সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল খালেক, পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান অনুপ কুমার চাকমা এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।

Back to top button