আইপিনিউজ ডেক্স: আজ ১৯ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখে সেনাবাহিনী কর্তৃক পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে জুরাছড়ি—বিলাইছড়ির সীমান্তবর্তী গাছবাগান পাড়া ও থুম পাড়া গ্রামবাসীদের উচ্ছেদে বন্ধের দাবিতে গাছবাগান পাড়া ও থুম পাড়ার এলাকাবাসীর উদ্যোগে রাঙ্গামাটির ডিসি অফিসের সামনে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ফারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সজল চাকমার সঞ্চলনায় স্মারকলিপি পাঠ করেন বৃষ্টি চাকমা। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন থুম পাড়ার বাসিন্দা মদন বিকাশ চাকমা, দুলু পাড়ার বাসিন্দা পূন্যরানী চাকমা। এছাড়াও মানবন্ধনে সংহতি বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিসিং মারমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টু মনি তালুকদার ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা। সভাপতিত্ব করেন দুলু পাড়ার কাবার্রি অজিত কুমার চাকমা।
থুম পাড়ার বাসিন্দা মদন বিকাশ চাকমা বলেন, আমরা জুম করতে পারছি না। সেনাবাহিনী বাধা দিচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে। তারা আমাদের জমি ও বাগানগুনো দখল করেছে। জুম করতে না পারলে কীভাবে বাঁচবো আমরা?
দুলু পাড়ার বাসিন্দা পূণ্যরানী চাকমা বলেন, আমাদের পাড়া গুলোতে জুম করতে দিচ্ছে না সেনাবাহিনী। বাগান, সহায় —সম্পত্তি নষ্ট করে দিচ্ছে তারা। আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন যদি না থাকে কীভাবে বাঁচবো?
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন চলছে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই উন্নয়নে প্রান্তির জনগোষ্ঠীর যদি জীবনের মানোন্নয়ন না হয় তাহলে সেটা কীসের জন্য? আজকে যারা ভূমি হারাতে বসেছে তারা নিজেদের বোবা কান্না গুলো শোনাতে এসেছে। এটা তাদের জীবন—মরণের বিষর। তাদের মাথা গোঁজাবার ঠাঁই কেড়ে নিয়ে পর্যটন করা হচ্ছে তাহলে সেটা কীসের উন্নয়ন?
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মূল নির্যাস হলো পাহাড়ী জনগণের জীবন—জীবিকা ও অস্তিত্ব সংরক্ষণ করা। কিন্তু সরকার পার্বত্য চুক্তিকে পাশ কাটিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো উন্নয়নের নামে আগ্রাসন চালাচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে জবরদস্তি করে অনেককিছু করছে সরকার। হয়তো তারা এখন মুখ ফুটে জোরালো প্রতিবাদ করতে পারছে না। কিন্তু পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে তাদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ হবে।
সভাপতির বক্তব্যে দুলু পাড়ার কার্বারি অজিত কুমার চাকমা বলেন , আমরা দুই গ্রামবাসী অনেক কষ্টে আছি। আমাদেরকে গ্রাম ছেড়ে যেতে হুমকি দিচ্ছে সেনবাহিনী। আমরা খেটে—খাওয়া মানুষ। হলুদ,আদা, কলা ইত্যাদি চাষ করে পেট চালায়। এখন যদি আমাদের ভূমি চলে যায়, জুম করতে না পারি কীভাবে বাঁচবো? সেনাবাহিনী জুমের লিস্ট চাইছে। হুমকি দিয়ে বলেছে, লিস্ট দিলেও গ্রাম ছাড়তে হবে, না দিলেও ছাড়তে হবে।
মানববন্ধন শেষে সমস্যাটি যথাযথ সমাধানে পাড়াবাসি, রাঙ্গামাটি শহরের সুশীল সমাজ ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য অঞ্চল শাখার নেতৃবৃন্দরা ডিসির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসময় ডিসি মহোদয় সমস্যা সমাধানে যথাযথ চেষ্টা চালাবেন বলে নেতৃবৃন্দদের আশ্বস্ত করেন।
