মতামত ও বিশ্লেষণ

নারী দিবসঃ আমার কতিপয় অভিজ্ঞতার বয়ান – সানজিদা সোহেলী

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছিল এবারের থিম “Gender Equality today for a sustainable tomorrow’s” শুধু নারীতে সীমাবদ্ধ না জেন্ডারে বিস্তৃত হয়েছে । ফোকাস দেয়া হচ্ছে gender mainstreaming, এই জায়গায় নিয়ে যেতে শতবছর যারা নিবেদিত ছিলেন তাদের প্রতি “বিনম্র শ্রদ্ধা “। প্রত্যাশা রইল নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার পরিবতর্নের ॥

নারী হিসেবে পিছিয়ে আছি intersectionality তবে
Gender condition & position এ আমি বেশ সুবিধাজনক আছি । তারপরও খুব সাধারণ ঘটনা, চলাচল, কাজ, নিয়ম কানুনে বিব্রত হই॥

১. এই যেমন পাবলিক বাসে যে কথাগুল শুনতে হয়েছে (নারী/ প্রতিবন্ধী/ শিশু) নির্ধারিত ৯ টি সিট ”আপা আপনাদের সিট খালী নাই”। কোনমতে যদি দাঁড়ানোর জায়গা বা বসার সিট পেলাম যদি বলি ভাই একটু সরে দাঁড়ান বা চেপে বসেন “আপা আপনার সমস্যা হলে প্রাইভেট কার বা সিএনজিতে যান” । বাসে ওঠা আর নামার সময়ের কথা নাইবা বললাম ।

২. গাড়ীর নাম পরিবর্তন জন্য বিআরটিএ নারীদের লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি। সংখ্যায় কম থাকায় এই লাইনের কাজ দ্রুত হচ্ছে । পাশ থেকে একজন বলল ”সব জায়গায় সমান অধিকারের কথা বলে আবার মহিলা বলে সুযোগ নিবে”

৩. ম্যাকাডামে ড্রাইভিং শিখার জন্য ভর্তি হলাম ২০০৪ সালে বাসচালক, রিক্সাওলাদের নানারকম মন্তব্য এরমধ্যে সবচেয়ে ভাল মন্তব্য “ মাইয়া মানুষ ঘরে থাকব তানা রাস্তায় বাইর হইছে গাড়ী চালাইতে “। সময় বদলেছে ঢাকার রাস্তায় মেয়েরা এখন স্কুটিও চালায়।

৪. কথপকথন ” আজ আপনার ভাবীকে কয়েকটা দিসি, কেন ভাই ভাবী কি করছে ? সকাল বেলা অফিসে আসার আগে বাজার কইরা দিয়া আসছি, দুপুরে খাইতে যাইয়া দেখি মাংস নাই, মাথায় রক্ত উইঠ্যা গেল। ভাই মাঝে মধ্যে এরকম দিতে হয় নাইলে ঠিক থাকে না আমিও দুই চারটা দেই ।

৫. দোহা থেকে ঢাকা কাতার এয়ারওেয়েজে, পিছনের সিটের লোকটি কিছুক্ষণ পর পর বেল দিচ্ছে এয়ারহোস্টেজ এটা ওটা দিয়ে যাচ্ছে এক পর্যায়ে বিরক্তি প্রকাশ করলেন। পাশের জনকে বলছে ভাই “এয়ারহোস্টেজের কাজ কি জানেন ; একেবারে স্ত্রীর মতন যা বলব তাই করবে আর এই বেটি মেজাজ দেখাইল। এবার আমার মেজাজ খারাপ হলো আমি দাড়িয়ে লোকটার দিকে শুধু তাকালাম। পরে বলে “বড় আপা- রাগ করছেন” !

৬. ঢাকা এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন অফিসার ও এমনভাবে প্রশ্ন করে যেন কি না কি করতে যাচ্ছি “নেপাল যাওয়ার সময় বিভিন্ন তথ্য নেয়ার পর শেষ প্রশ্ন ,কার সাথে যাচ্ছেন ? খুব আস্তে করে বললাম কেন ? পাশের বুথ থেকে মিঠু উত্তর দিল হাজব্যান্ডের সাথে যাচ্ছে ”।

তুরস্ক যাওয়ার সময় একই প্রশ্ন এবার একটু জোর দিয়েই বললাম কেন , কোন সমস্যা , একা যাওয়া যাবে না ? তারাতারি পাশের বুথ থেকে মিঠু উত্তর দিল হাজব্যান্ডের সাথে যাচ্ছে । ঐ অফিসার তখন বললেন একটু অপেক্ষা করেন স্যারেকে জিজ্ঞেস করে নেই, তারপর তিনি লিখলেন ” ভিজিট উইথ হাজব্যান্ড” খুবই আজব ব্যাপার।

৭. জাতীয় পরিচয় পত্র , পাসপোর্ট বা এই ধরণের আবেদন পত্রে সাধারণত যে তথ্য দিতে হয় ; অবিবাহিত, বিবাহিত : বিধবা/তালাকপ্রাপ্ত (প্রয়োজনমত তথ্যের প্রমানপত্র) যে নারী ”সেপারেটেড” সে কি ভাবে তথ্য দিবে ?
অথবা একজন সিঙ্গেল মাদার, সে নিজেই সন্তানকে লালন পালন করছে । দীর্ঘ দিন ”সেপারেটেড”, আইনত ডিভোর্স হয় নাই। সে কি ভাবে এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবে ?
মানুষের মর্যাদা/ডিগনিটির দিকগুলো বিবেচনা করা দরকার ।

সানজিদা সোহেলী, উন্নয়ন কর্মী

Back to top button