ধর্মশালা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে মোহিনের মান্দি শর্ট ফিল্ম “বিখিংগ্রি এৎচালুক”
মোহিন রাখাইনের মান্দি ভাষার সিনেমা “বিখিংগ্রি এৎচালুক” প্রদর্শিত হলো ধর্মশালা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। এই সিনেমাতে এক বয়স্ক মান্দি আদিবাসী দম্পতির গল্প বুনেছেন পরিচালক, বলেছেন প্রান্তিক জনজাতির কথা।
অফিসিয়ালি সিলেক্টেড সিনেমাটি গতকাল (১০ নভেম্বর, ২০২৪) Dekyi Tsering Hall-এ সকাল ১০:৪৫-এ প্রদর্শিত হয়ছে। গত ৭ থেকে ১০ নভেম্বর ধরে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারতের হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালার ম্যাকলয়েড গঞ্জে।
চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছে মোহিন রাখাইন। প্রযোজনায় মনোজ প্রামাণিক ও সহ-প্রযোজনা করেছে অং রাখাইন, এবং চলচ্চিত্রটির সিনেমাটোগ্রাফার সামিউল করিম সুপ্তক। মোট ১৫ মিনিটের এই চলচ্চিত্রটি মান্দি আদিবাসীদের আচিক ভাষা দিয়ে নির্মিত। অভিনয় শিল্পীরাও মান্দি (গারো)। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে সুবিনাথ মানখিন, প্রজুতা রাকসাম ও এলিয়াস রাকসাম। চলচ্চিত্রটির মিউজিক করেছে সায়ন্তন মাংসাং এবং এলেন শীর্ষ রাকসাম।
চলচ্চিত্রটি শুট হয়েছে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার চেংগিনি গ্রামে।
ফিল্মটি নিয়ে পরিচালক মোহিন রাখাইনের জার্নি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে আইপিনিউজকে বলেন, “ফিল্মটি নিয়ে আমার জার্নি মোটামুটি দুইবছরের মতো। বিভিন্ন এক্সপিরিয়েন্স অর্জন করছি। ফিল্ম ফ্যাস্টিভালগুলোতে যেতে পারলে আরো ভালো এক্সপিরিয়েন্স হতো। এবারে ধর্মশালা ফিল্ম ফ্যাস্টিভালে যাওয়ার প্ল্যান ছিল। কিন্তু ভিসার সমস্যায় যাওয়া হলো না। সামনে এটি কীভাবে ডিস্ট্রিবিউট করা যায় সেটা নিয়ে ভাবা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “A Snail Without Shell” (আচিক ভাষায় বিকিংগ্রি এৎচালুক) সিনেমাটি একটি মান্দি গ্রামের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও তাদের নাতির আগমনের আশাকে ঘিরে নির্মিত। এই গল্পে নিঃসঙ্গ জীবনের মাঝে নাতির আগমনের প্রতীক্ষা একটি নতুন আশার আলো এনে দেয়, যা সিনেমাটির কেন্দ্রীয় থিম হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। আদিবাসীদের চলচ্চিত্র নির্মাণে নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও প্রকৃতি-নির্ভর জীবনধারা তাঁদের দৃষ্টিকোণে নিজস্ব ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণকে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এই গল্পগুলো বলার মাধ্যমে তাঁদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের সুযোগ তৈরি হয়, যা তাদের জীবনের পরিচয় ও সত্ত্বাকে তুলে ধরে।
আদিবাসীদের গল্প বলার ক্ষেত্রে ফিকশন সিনেমার পাশাপাশি নন-ফিকশন কাজেরও গুরুত্ব রয়েছে। মুখে মুখে প্রচলিত গল্পগুলো ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে, এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এগুলোকে সংরক্ষণ করা সম্ভব। আর চলচ্চিত্রে নানান তত্ত্ব বা মতবাদ এর মধ্যে আদিবাসীদের সিনেমা বা চতুর্থমাত্রা (Fourth Cinema) একটি বড় চলচ্চিত্র বিপ্লব হয়ে উঠতে পারে, যেখানে তাঁরা নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের গল্প বলার সুযোগ পাবেন বলে মনে করেন এই নির্মাতা।
বর্তমানে নির্মাতা “বিকিংগ্রি এৎচালুক” সিনেমার ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে কাজ করছেন এবং “ৎসিরিমা” নামে একটি ফিচার ফিল্মের ডেভেলপমেন্টে নিয়োজিত রয়েছেন।
প্রোডাকশন স্টুডিও মনপাচিত্র-এর ব্যানারে নির্মিত এই সিনেমাটি প্রথম প্রিমিয়ার করা হয় দক্ষিণ কোরিয়ার ১২তম ডায়াসপোরা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। এরপর সিলেক্টেড হয় ২৩তম নিউ ইয়র্ক এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ সাউথ এশিয়া টরন্টো, ২০২৪-এ।