দলের বক্তব্য প্রধান বিচারপতিকে জানিয়েছেন কাদের
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনার মধ্যেই প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার রাতে কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে এই সাক্ষাতে ওই রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা আবু নাসের জানিয়েছেন।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্ধৃত করে নাসের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “উনার সাথে মাননীয় প্রধান বিচারপতির দেখা হয়েছে, সাক্ষাৎ হয়েছে। রায়ের অবজারভেশনে যেসব বিষয় এসেছে, সেসব বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে বক্তব্য, তা তিনি তুলে ধরেছেন। উনি (মন্ত্রী) বলেছেন, আলোচনা আরও হবে।”
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা ‘অবৈধ’ ঘোষণার রায় গত ১ অগাস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।
ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।
ওই রায় প্রকাশের পর থেকেই বাদ-প্রতিবাদ চলছে। রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রধান বিচারপতির কড়া সমালোচনা করলেও বিএনপি একে ‘ঐতিহাসিক’ বলছে।
রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন ডাকার পর সেখানে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল হট্টগোলের ঘটনা ঘটে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই রায়কে ‘পূর্ব ধারণা প্রসূত’ এবং প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পর্যবেক্ষণকে ‘অপরিপক্ক’ অখ্যায়িত করেন।
পরদিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মামলার ‘ফ্যাক্ট অব ইস্যুর’ সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন ‘অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা’ প্রধান বিচারপতি তার রায়ে বলেছেন।
প্রধান বিচারপতির ‘অগ্রহণযোগ্য’ বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও সেদিন বলেন আইনমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতির অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য, পর্যবেক্ষণের প্রতিবাদে কর্মসূচি দিয়েছে। সেসব মন্তব্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।
অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেছেন, রায়ের সমালোচনা করে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টকেই ‘বিতর্কিত করেছেন’।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে মন্তব্যের জন্য বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে অপসারণ ও তার গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার রায় নিয়ে প্রধান বিচারপতির ওপর ‘চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে’।
প্রধান বিচারপতির বাসায় ওবায়দুল কাদেরের বৈঠকের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “আমরা শঙ্কিত হয়ে গেছি আজকের পত্রিকার খবর দেখে।… ওবায়দুল কাদের সাহেব গতকাল রাতে প্রধান বিচারপতির বাসায় গেছেন। কখন গেছেন? আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করে তারপরে তিনি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে গেছেন। আমি আরও বিস্মিত হলাম, সেখানে তিনি নৈশভোজ করেছেন!”