জাতীয়

থানছিতে বরাদ্দ অপ্রতুলঃ পাশে থাকার জন্য মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর আহ্বান

আইপিনিউজ ডেস্ক: বান্দরবান জেলার খাদ্য সংকটে কবলিত থানছির ক্ষুধার্ত মানুষদের জন্য সরকারী বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ১৬ মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে জেলা প্রশাসন ৪৬ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বরাদ্দের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বান্দরবান জেলার সাংসদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রশাসনের হাতে পর্যাপ্ত খাদ্য শস্য মজুত রয়েছে। তবে উপদ্রুত এলাকার মানুষ বলছে ৪৬ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। উপদ্রুত এলাকাগুলোতে ত্রাণ পোঁছাতে নৌকা হচ্ছে একমাত্র পরিবহনের মাধ্যম। সাঙ্গু নদীর উজান বেয়ে খাদ্য শস্য এলাকাবাসীর কাছে পোঁছানোর বিষয়টি বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এইমতাবস্থায় বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পোঁছানোর ক্ষেত্রে হেলিকপ্টার ব্যবহার করার বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর করেছেন বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের জানান।
থানছির খবরটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। অনেকে বান্দরবান প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে সমালোচনায় সরব হয়ে ঊঠেছেন। বান্দরবান জেলা পরিষদের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুর্গত এলাকার জন্য সহায়তা তহবিল গঠনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফেসবুক ব্যবহাকারীরা দ্রুত সাড়া দিতে শুরু করে। ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে তড়িৎ সহায়তা পোঁছাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের সক্রিয় তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীও তার ফেসবুক টাইম লাইন-এ থানছিবাসীর পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
faruki
ফারুকী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘বান্দরবানে তীব্র খাদ্য সংকটের যে রিপোর্টগুলো দেখছি সেটা খুবই উদ্বেগজনক । মধ্য আয় এবং অঢেল রিজার্ভের এই কালে একই দেশে বসে কিছু মানুষ খাওয়ার কষ্টে থাকবেন এটা মানা খুবই পীড়াদায়ক। আশা করি জেলা প্রশাসন দ্রুত উদ্যোগ নেবে।
তিনি আরো লিখেছেন,‘তরুণ ভলান্টিয়ারদেরও কিছু কার্যকর উদ্যোগ আশু দেখতে চাই। এইরকম কোন উদ্যোগ ইতিমধ্যেই নেয়া হয়ে থাকলে দয়া করে ইনবক্স করলে আমি আমার সাধ্য মতো কন্ট্রিবিউট করবো।’

কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব রাঙেই উনার ফেসবুক ওয়ালে এ বিষয়ে দুটি ছবি আপলোড করে লিখেছেন। নিচে সেই ছবি ও লেখা দেওয়া হল।
13244835_10153667789857151_5857052298864277001_n
(এক) দেশে উন্নয়নের জোয়ার, মধ্যম আয়ের দেশ, উন্নতি আর উন্নতির(!) বিপরীতে মন খারাপের জন্য নীচের দুটি ছবিই যথেষ্ট। বেশ কয়েক দিন ধরে খবরের শিরোনামে উঠে আসা বান্দরবানের দুর্গম থানছি উপজেলার মানুষের খাদ্যাভাবের সংবাদ – জংলী আলু, কলা গাছ খেয়ে তাদের ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা, খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকা, সরকারী দপ্তরসমূহের উদাসীনতা, খায় খায় জেলা পরিষদের স্থানীয় মানুষদের চরম দুর্দিনেও এগিয়ে না আসা, পার্বত্য মন্ত্রী বাহাদুরের প্রত্যাশিত বাহাদুরী দেখতে না পাওয়া – যারপরনাই আমাদের ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে।
(দুই) বান্দরবান অঞ্চলে হাজার কোটি টাকার পর্যটন বাণিজ্য, লক্ষ লক্ষ টাকার বহুরুপী মেলা, দেশী বিদেশী নানান সংস্থার উন্নয়ন যজ্ঞের মধ্যেও চির বঞ্চিত রেমাক্রি, তিন্দু, বড় মদক প্রভৃতি অঞ্চলের আদিবাসী মানুষের জীবন! লক্ষ কোটি টাকার তথাকথিত এই উন্নয়ন কী মানে আছে ২/৩ দিন ধরে না খেয়ে থাকা হাড্ডিসার এই মানুষদের জীবনে? (তিন) প্রশ্ন এসেছে ঐসব অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্গমতার। প্রশ্ন এসেছে এই দুর্দিনে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার। যুদ্ধেলিপ্ত কিংবা যুদ্ধ বিধ্বস্ত নানা দেশে শান্তিরক্ষী হিসেবে এই ধরনের দুর্যোগে সাহসিকতার সাথে কাজ করার কত সুনাম আমাদের দেশের সেনাবাহিনীর! নিজ দেশের মানুষের জন্য কোথায় তাঁদের তৎপরতা ? খাদ্য সামগ্রী নিয়ে দুর্গত অঞ্চলে তাঁদের ছুটে যাওয়া? শুধু কী পাহাড় চূড়ায় ক্যম্পে বসে নজরদারী করলে দেশ রক্ষা হয়? স্থানীয় মানুষদের অবর্ণনীয় এই দুর্দিনে – ক্ষুধার্ত শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে, অভুক্ত বৃদ্ধার মুখে খাবার তুলে দিয়ে কিংবা ৩/৪ দিন না খেয়ে থাকা মানুষদের দোরগোড়ায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে যে আস্থা, বিশ্বাস ও ভরসা অর্জন করা সম্ভব অন্য কোনভাবে তা করা সহজে সম্ভব নয়। ইচ্ছে করলে সেনাবাহিনী পারে এই কাজ করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে, ভরসার প্রতীক হতে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে এই আস্থা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অতি দ্রুত দুর্গত অঞ্চলে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা।

Back to top button