জাতীয়

থানচিতে এক খেয়াং নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ

আইপিনিউজ ডেস্ক (ঢাকা): বান্দরবানের থানচি উপজেলায় এক খেয়াং আদিবাসী নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ ৬মে ২০২৫ ঢাকায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে এক  বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টুস কাউন্সিল, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের যৌথ উদ্যোগে উক্ত সমাবেশটির আয়োজন করা হয় ।

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায়  সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সমাবেশের সভাপতি বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা তার সভাপতির বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের সমতল এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই ধরণের শাসনব্যবস্থা চলমান। আপনারা সবাই জানেন অপারেশন উত্তরণের নামে এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন চলমান রয়েছে। কিন্তু তারপরও এত এত ধর্ষণ হয় তার কোনটায় সুষ্ঠু বিচার হয় না। এবং দুঃখের বিষয় হলো আমাদের কথা কেউ বলে না। আপনারা রোহিঙ্গ্যা এবং রাখাইনের ইস্যুতে মানবতার ফেরিওয়ালা হন কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের বেলায় সন্ত্রাসী, দেশদ্রোহী বানায়ে দেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, বান্দরবানের পুলিশ, জেলা প্রশাসক একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারা নাকি ঠিক বুঝতে পারছে না কি হয়েছে জায়গা দুর্গম হওয়ার কারণে। আপনারা জায়গাকে দুর্গম বলে আইন কে অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওখানে কি রকেট ছিলো যে ধর্ষকরা রকেটে করে পালিয়ে গেলো? তা না হলে ২৪ ঘন্টা পার হওয়ার পরও কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হলো না? যারা পাহাড়ে যায় তাদের দফায় দফায় ক্যাম্পগুলোতে আইডি কার্ড শো করতে হয়। তাহলে তাদেরকে শনাক্ত করা এত কঠিন কেন? আপনারা নববর্ষে নানান জাতিগোষ্ঠীকে সাজিয়ে গুজিয়ে এনে অন্তর্ভুক্তি দেখান, কিন্তু যখন একজন খেয়াং নারী ধর্ষণের শিকার হয় সেই ধর্ষকদের ধরে কেন জেলে অন্তর্ভুক্ত করছেন না? তখন আপনার অন্তর্ভুক্তি আইন কোথায় যায়? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধুচন্দ্রিমার ৮ মাস পূর্ণ হয়ে গেছে। আপনারা এবার রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে জেগে উঠুন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈসানু মারমা বলেন, আমাদের কষ্ট একটাই, গতকালের পাহাড়ী নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো রাত জাগবে না। এই সারা বাংলাদেশ রাত জাগবে না। বরং তারা এই হত্যাকে তারা জাস্টিফাই করেছে এই বলে যে তারা দেশদ্রোহী, সুতরাং তাদের ধর্ষণ বৈধ। আমাদের প্রশ্ন থাকবে এত এত সেনা ক্যাম্প থাকতেও কেন তারা আমার পাহাড়ী নারীকে নিরাপত্তা দিতে পারে না? যারা ভাবছেন পাহাড়ী নারীদের পেটে মুসলিমের সন্তান থাকবে, যারা ভাবছে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামিকরণ করা হবে তাদের স্পষ্ট বলতে চাই, আপনাদের এই ষড়যন্ত্র পাহাড়ী ছাত্র সমাজ ধ্বংস করে দিবে।

বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অংশৈসিং মারমা বলেন, পাহাড়ের ধর্ষণের ঘটনাগুলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধামাচাপা দেয় এই অজুহাতে যে সেখানে সাম্প্রদায়িক ঘটনা হতে পারে। আমরা জানি পাহাড়ের প্রত্যেক ধর্ষণ ঘটনায় এক অদৃশ্য শক্তি কাজ করে। রাঙামাটিতে সাংগ্রাইয়ের সময়ে এক পাহাড়ে বোনকে টানা ৮  দিন ধরে গণধর্ষণ করেছে। তার প্রতিবাদ করতে গেলে প্রশাসন বাধা দেই । কেননা বিদেশী প্রতিনিধিদের তারা শুধুমাত্র পাহাড়ের সোন্দর্য্য দেখাতে চায়। তারা পাহাড়ের সমস্যা, দু:খ, কষ্ট দেখাতে চায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫০০ টির উপর ক্যাম্প থাকার পরও আপনারা আমার আদিবাসী মা বোনদের রক্ষা করতে পারেন না। আপনারা আরো কতগুলো ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করলে আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারবেন?

খেয়াং শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি জনি খেয়াং তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, আমরা কখনোই ট্যুরিস্টদের বিরুদ্ধে ছিলাম না। কিন্তু তাদের দ্বারা যদি এরকম অপকর্ম ঘটেই থাকে তাহলে সেটা পাহাড়ী জনগোষ্ঠী কখনোই মেনে নেবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সদস্য সুর্মী চাকমা বলেন, আমাদের কষ্ট একটাই। পাহাড়ের ধর্ষণ ঘটনাই কখনোই সমতলের বাঙালি বন্ধুদের আওয়াজ তুলতে দেখি নাই। পাহাড়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও ধর্ষণের মতো ঘটনা বন্ধ থাকে নাই। কিন্তু আপনারা চুপ আছেন। কারণ আমরা আপনাদের ধর্মের নই। আপনাদের আমি ধিক্কার জানাই।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেত্রী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, আমাদের পাহাড়ের ধর্ষণের ঘটনাগুলো কখনোই মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে আসে না। এর কারণ বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানসিকতা। আমরা চাই এসব মানসিকতার পরিবর্তন হোক।

সমাবেশটিতে আরো বক্তব্য রাখেন, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন্ত ত্রিপুরা। বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শুভ্র মাহাতো, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অংক্রাথুই খেয়াংসহ সমাবেশটিতে সংহতি জানান ঢাকাস্থ ম্রো ছাত্র সমাজ ও বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ।

ঢাকায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রতিবাদ সমাবেশটি  এক বিক্ষোভ মিছিলযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে অপরাজেয় বাংলায় শেষ করা হয়।

Back to top button