তফসিল ঘোষণার আগেই বিগত নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করে সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন করুনঃ প্রধানমন্ত্রীকে রানা দাশ গুপ্ত
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারি দলের সংখ্যালঘুবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়ন না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত বলেছেন, আমরা হরিজন, তেলেগু, রবিদাস সম্প্রদায়, চা বাগানের সম্প্রদায় অর্থাৎ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যেও যারা অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার, তাদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নের দাবি করেছিলাম। আমাদের দাবিকে ধারণ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও তাদের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নের অঙ্গীকার করেছিলো। এই আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকার একটি বিল তৈরী করলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে সংসদে বিলটি উত্থাপন করা হচ্ছে না। একইভাবে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন সহ সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অন্যান্য নির্বাচনী অঙ্গীকারও সরকার বাস্তবায়ন করেনি। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিলো বৈষম্যহীন ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। অথচ স্বাধীন দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বৈষম্য অর্ধ শতাব্দীতেও কোনো সরকারই নিরসন করেনি। বরং দিনে দিনে বৈষম্য বেড়েছে, সংখ্যালঘুদের অধিকারের ক্ষেত্র কমেছে।
সম্প্রতি রাজধানীর রবিদাস, হরিজন ও তেলেগু কলোনীতে পৃথক পৃথক মতবিনিময় সভায় এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত এসব কথা বলেন। আগামী ২২-২৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণঅনশন ও গণসমাবেশ এবং ৬ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ কর্মসূচি সামনে রেখে এসব মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসব সভায় এ্যাড. দাশগুপ্ত আরো বলেন, আমরা সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে আমরা একইসাথে রাজপথের আন্দোলন এবং সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাবো। আমরা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বসেছি। আমরা সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা সেই সত্তরের নির্বাচন থেকে আজ অব্দি আপনাদের পোটেনশিয়াল ভোটার। সত্তরের নির্বাচনে আমরা ভোট না দিলে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচিত হতে পারতেন না। আমাদের আত্মত্যাগই মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় কুলাঙ্গার দোসররা হিন্দুদের ধ্বংস ও উচ্ছেদের বিশেষ মিশন নিয়ে গণহত্যা চালায়। এমন কোনো হিন্দুপল্লী ছিলো না যেখানে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়নি। আজ স্বাধীনতার শত্রুরা তথা সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সমাজে ছেয়ে গেছে, সরকারি দল ও প্রশাসনের অভ্যন্তরের ঢুকে গেছে।
রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের ওপর যেসব হামলা-নির্যাতন ঘটেছে, তার সাথে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেমন জড়িত, সরকারি দলের অভ্যন্তরে ঘাঁপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিও তেমনিভাবে জড়িত। আজকের বাস্তবতা হলো, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া তার দলের কোনো নেতার উপর সংখ্যালঘুদের কোনো আস্থা নেই।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই আপনার বিগত নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করেই আপনাকে সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
ওয়ারী রবিদাস পাড়ায় রবিদাস সম্প্রদায়ের সাথে ঐক্য পরিষদের মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রী শ্রী ভক্ত রবিদাস জিউ গুরুধাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি শংকর রবিদাস। অমর রবিদাসের সঞ্চালনায় এখানে বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, এ্যাড. তাপস কুমার পাল, এ্যাড. কিশোর রঞ্জন ম-ল, রবীন্দ্রনাথ বসু, রাজনীতি বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. বিনয় ঘোষ বিটু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মতি লাল রায়, সূত্রাপুর থানা কমিটির সভাপতি হরি মজুমদার, মহিলা ঐক্য পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি অলকা ঘোষ, বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি চাঁন মোহন রবিদাস প্রমুখ। উল্লেখ্য, ৮০ বছরেরও অধিককাল ধরে রবিদাস সম্প্রদায়ের সাড়ে তিন শতাধিক পরিবার ওয়ারী নবাব স্ট্রিট এলাকায় বসবাস করে আসছেন। বারবার তাদেরকে স্থায়ীভাবে ভূমি বরাদ্দ দেওয়ার অঙ্গীকার করা হলেও আজ অব্দি তাদের কোনো ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। উপরন্তু তাদেরকে উচ্ছেদের জন্য দফায় দফায় চেষ্টা করা হয়েছে। ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ রবিদাস সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ থেকে যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য আহ্বান জানান।
গোপীবাগ-টিটিপাড়া রেলওয়ে হরিজন কলোনীতে হরিজন সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন গোপীবাগ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি পারদ লাল। রাজীব দাসের সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, এ্যাড. কিশোর রঞ্জন ম-ল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু, গোপীবাগ হরিজন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিটন দাস, গোলাপ দাস প্রমুখ। উল্লেখ্য, এই কলোনীর বাসিন্দাদেরকে রেলওয়ে কর্তৃক অন্যায়ভাবে উচ্ছেদের প্রতিবাদে এবং তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের দাবিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে।
ধলপুর তেলেগু কলোনীতে তেলেগু সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ধলপুর তেলেগু সমাজ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি গৌরমূর্তি কামাল মাঙ্গালাগিরি। ধলপুর শ্রী শ্রী শিব মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ভিক্কি রাজের সঞ্চালনায় এখানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু, ধলপুর তেলেগু সমাজ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক যোসেফ উডুকুলা প্রমুখ। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই কলোনীর ১২৬টি পরিবারকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক অন্যায়ভাবে উচ্ছেদের প্রতিবাদে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। আন্দোলনের মুখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের পার্শ্ববর্তী বর্তমান স্থানে পুনর্বাসন করতে বাধ্য হয়।
পৃথক পৃথক এসব মতবিনিময় সভায় ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত আগামী ২২-২৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণঅনশন ও গণঅবস্থান এবং ৬ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ সফল করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।