জাতীয়শিক্ষা

ঢাকায় পিসিপি মিরপুর শাখার ৬ষ্ঠ কাউন্সিল সম্পন্ন: নেতৃত্বে অভি ও ভরত

আইপিনিউজ, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ঢাকা: “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে জুম্ম ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ঢাকা মিরপুরে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মিরপুর থানা শাখার ৬ষ্ঠ সম্মেলন ও কাউন্সিল ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলন ও কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন, পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক অন্তর চাকমা, পিসিপির ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য মেরিন চাকমাসহ ছাত্র নেতৃবৃন্দ।

পিসিপির ঢাকা মিরপুর শাখার বিদায়ী কমিটির সভাপতি অভি চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ভরত চাকমার সঞ্চালনায় সম্মেলন ও কাউন্সিলে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাখা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অজিত চাকমা।
অন্তর চাকমা বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ হলো আমাদের অধিকার আদায় লড়াইয়ে বেগবান করার পাঠশালা। আপনারা যদি ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দেন, যুগে যুগে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা লড়াই করেছেন সেসব থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে আমাদের লড়াইকে পরিচালনা করতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চটগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে জুম্ম জনগণ মনে করেছিল শাসকগোষ্ঠীর সকল অন্যায়-অবিচার অবসান হবে। কিন্তু আমরা আজকে দেখি ২৮ বছরেও সেটা হয়নি। কারণ চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে নতুন করে নানাভাবে যড়যন্ত্র শুরু হয়। আমাদের জুম্ম সমাজের একটি প্রতিক্রিয়াশীল সুবিধাবাদী গোষ্ঠীও সেখানে যুক্ত হয়। আমাদের সেই ইতিহাসকে জেনে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সামনের লড়াইকে পরিচালনা করতে হবে। শাসকগোষ্ঠীর সকল হীনষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আমাদের কীভাবে আরো সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় যেই প্রশ্ন আমাদের করা প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, আমরা বিগত সরকারগুলোর পাহাড় নিয়ে নানান কর্মকাণ্ডগুলো দেখেছি, কোন সরকার জুম্ম জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হোক চায়নি। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমরা দেখছি যে, এই সরকার প্রতিষ্ঠায় অন্যতম লক্ষ্য ছিল, শোষণ-বৈষম্য অবসান করা। কিন্তু বর্তমান এই সরকারও বিগত সরকারগুলোর সময়ের মতো একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই আমরা দেখেছি খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত করা হলো, ঢালাওভাবে উল্টো জুম্মদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছিল। যাদের নির্মমভাবে গুলি করে পিটিয়ে মারা হলো সেগুলোর বিচার আমরা পাইনি। বরং নিত্য নতুন সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড অধিকতর বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাহাড়ের দীর্ঘবছর ধরে চলমান যে নিপীড়নের মাত্রা, নিরাপত্তার নামে সেনাশাসনের জারি রাখার মাত্রা একটুও কমেনি। তাই, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিলো সেটাও মাটির সাথে মিশে গেছে।

অন্তর চাকমা আরো বলেন, সবকিছুকে পর্যালোচনা করলে আমরা দেখি পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক কোনো পরিবেশ আর অবশিষ্ট নেই। সে জায়গা থেকে গণতান্ত্রিক ধারায় আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে সফল করতে পারবো সে পরিবেশ আর নেই, সেজন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনকে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে ধাবিত করা ছাড়া কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। আজকে মিরপুর থানা শাখায় যারা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের পথচলায় সামিল হচ্ছেন আপানারা সে লক্ষ্যে নিজেকে পরিচালিত করবেন। আগামীর লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় কাজকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিবেন।

জগদীশ চাকমা বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ হলো জুম্ম ছাত্র সমাজের লড়াকু, প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। সেই ধারাবাহিকতায় আজকে মিরপুর শাখার কাউন্সিল ও সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে পিসিপির নেতৃত্বকে গতিশীল এবং অধিকতর সংগ্রামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে যেতে হবে। সেভাবে নিজেকে গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে পিসিপি সামনে অগ্রসর হয়ে এগিয়ে গিয়ে জাতির জন্য তার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে যাবে এই আশা ব্যক্ত রাখছি।
মেরিন চাকমা বলেন, বর্তমান পিসিপি অনেক অনেক অগ্রগামী। আমাদের যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম সেই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প পথ আর নেই। যুগে যুগে আমরা দেখেছি জাতির প্রয়োজনে ছাত্র সমাজ বারে বারে এগিয়ে এসেছে সেই জায়গা থেকেও আজকে জাতির প্রয়োজনে পিসিপির গুরুত্ব অপরিসীম।

তিনি আরো বলেন, জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমাদের পার্টি জনসংহতি সমিতির যে বার্তা সেটিকে জুম্ম জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। সেই কাজ পিসিপিকে করতে হবে, সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যে লক্ষ্য নতুন কমিটিতে যারা আসবেন সকলকে অগ্রিম শুভেচ্ছা রইলো।

সম্মেলন শেষে সভাপতি হিসেবে পুনরায় অভি চাকমা চাকমা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভরত চাকমা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সুজন চাকমাকে নির্বাচিত করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এডিশন চাকমা।

Back to top button