“ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতি” নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সকাল ১১.০০ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) উদ্দ্যোগে পবা’র সেমিনার কক্ষে “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতি নির্ধারণে গবেষণার গুরুত্ব” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি: জেনা: মোঃ মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপি আমাদের গবেষণা ও কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা সিটি কর্পোরেশন নিজেদের দায় স্বীকার করছি, কিন্তু আমরা এখন বছরব্যাপি এক সমন্বিত মশক নিধন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এ বিষয়ে আবহাওয়া অফিসকে পূর্বাভাষগুলো জানাতে হবে এবং যারা নানাভাবে গবেষণা করছেন তাদেরও গবেষণার ফলাফলগুলি জানানো দরকার। আমরা কোনোভাবেই মশা মারতে গিয়ে পরিবেশের কোনো ক্ষতি করতে চাই না। তবে আমরা যেসব কীটনাশক ব্যবহার করছি বা অন্যান্য যেসব নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে তা পরিবেশের ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলছে তা আমাদের গবেষণা করতে হবে। মেট্রোরেল, বৃহৎ স্থাপনা, নির্মানাধীন ভবন, চিড়িয়াখানাসহ মানুষের বাসাবাড়িতেও এডিস মশা পাওয়া গেছে। আমাদের ঘর থেকে বৃহৎ স্থাপনা সব মশামুক্ত করতে হলে সবাইকে একসাথে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে। নাগরিকদের আরো সচেতন হতে হবে। আমরা প্রতিটি স্কুলে স্কুল সচেতনতা কাজ শুরু করেছি। আমরা চাই সকল নাগরিক ও সকল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বছরব্যাপি ডেঙ্গু নির্মূল কর্মসূচি।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবার সাধারন সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি: জেনা: মোঃ মোমিনুর রহমান মামুন, পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: লেলিন চৌধুরী, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ, খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক রুনু আলী, বস্তিবাসী আন্দোলন সংগঠক হোসনে আরা বেগম, বিসিএইচআরডি চেয়ারম্যান মাহাবুব হক ও মো: মমতাজুর রহমান মোহন, বাংলাদেশ গ্রিণ রুফ মুভমেন্ট সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো: গোলাম হায়দার, কবি কামরুজ্জামান ভ’ইয়া, হিলের সভাপতি জেবুন নেসা, পবা সদস্য রাজিয়া সামাদ ও সাবিনা নাঈম সভায় বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর এবং মৃতের সংখ্যা বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর অনেক অনেক বেশি। বাড়ির ছাদে, ঘরের ভিতর ও বারান্দার ফুলের টব, জমানো পানির পাত্র, পানি জমে থাকা মাটি ও প্লাস্টিকের পাত্র, বালতি, ড্রাম, অব্যবহৃত টায়ার ও কর্কশিট এবং আগাছার জঙ্গল, পরিত্যক্ত খোলা টিন ও কমোডে; নির্মাণাধীন ভবনের ভূগর্ভস্থ পানির সংরক্ষণাগার, ফেলে রাখা পাত্র, রঙের কৌটা, পাইপে জমে থাকা পানিতে; সড়কদ্বীপের জলাধার, ডাবের খোল, কনডেন্সড মিল্কের কৌটা, মানুষের তৈরি কৃত্রিম পানির পাত্র, মেট্রোরেলসহ বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের কারণে অসংখ্য গতের্র স্থির পানি, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডে সৃষ্ট গর্তে জমে পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে এবং বংশ বৃদ্ধি করে। এমুহুর্তে আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে ভাইরাস সংক্রমণ কমিয়ে আনা। যেন নতুন কারো ডেঙ্গু রোগ না হয়। অর্থ্যাৎ ইনফেকশন কমিয়ে আনতে হবে, সবাই মিলে মশা মারতে হবে। মশা যাতে জন্মাতে না পারে সেজন্য প্রজনন স্থল ধ্বংস করতে হবে। মশা যাতে কামড়াতে না পারে সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে। মশা তার জীবনচক্রে ১ মাসের মধ্যে যাতে ভাইরাস বহন করতে না পারে সে লক্ষ্যে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। সেপ্টেম্বরের পর মশা কমে আসবে। তাই সেপ্টেম্বর মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে আবহাওয়া যেভাবে উষ্ণ হয়েছে বৃষ্টি মৌসুম যেভাবে পরিবর্তন হচ্ছে তার সঙ্গে এডিস মশাসহ নানা ধরনের কীটপতঙ্গ বেড়ে যাওয়ার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে উষ্ণমন্ডলীয় এবং অ-উষ্ণমন্ডলীয় যেসব পোকামাকড়, তাদের প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে বাড়ছে। গরমের সময়টা যদি দীর্ঘ হয়, তাহলে মশা বা কীটের জীবনকালে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। প্রজননকাল তত দীর্ঘ হচ্ছে।
সভায় উপস্থিত বক্তরা নাগরিকের করণীয় হিসেবে বলেন- ঘরের বারান্দা, আঙ্গিনা বা ছাদ পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে পানি পাঁচ দিনের বেশি জমে না থাকে। এসি বা ফ্রিজের নিচেও যেন পানি না থাকে, তাও নিশ্চিত করতে হবে। বারান্দা ও ঘরের টব, ছাদের বাগানের পাত্র, পুরানো টায়ার, যেকোন পরিত্যক্ত পাত্রে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মশাটি দিনের বেলা কামড়ায়, তাই দিনের বেলা ঘুমালে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশা যেন ডিম পাড়ার সুযোগ না পায় তা খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বক্তরা সিটি করপোরেশনের করণীয় হিসেবে বলেন- বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি রাস্তা ও ফুটপাত এবং ডাষ্টবিনে পড়ে থাকা ডাবের খোসা ও বিভিন্ন ধরনের পাত্রে জমা পানিতে এ মশা বংশবিস্তার করে। এছাড়া রাস্তা ও ফুটপাতে জমা পানিতেও এ মশা বংশবিস্তার করে। রাস্তা, ফুটপাত ও ডাষ্টবিনে পড়ে থাকা আবর্জনা নিয়মিতভাবে পরিস্কার করতে হবে এবং ফুটপাত ও রাস্তায় যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এডিসসহ সব ধরনের মশার বংশ বিস্তার রোধ করতে হবে।
করণীয়
* এডিস মশামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সামাজিক সচেতনতামূলক আন্দোলন গড়ে তোলা।
*ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়ার ব্যাপকতা, ঝুঁকি ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় এডিসসহ সব ধরনের মশার বংশবিস্তার রোধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনকে জরুরীভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
* ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়াসহ মশাবাহিত রোগের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জরুরীভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
* ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনসাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো।
* মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি, পরিবার ও কমিউনিটি পর্যায়ে সবাইকে এগিয়ে আসা।
* জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জনস্বাস্থ্যের উপর যে বিরুপ প্রভাব পড়বে তা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং বিরুপ প্রভাব মোকাবেলার কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া।