খেলাধুলা

টাইগারদের ভারত জয়

ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতল বাংলাদেশ। এবার আর শেষে এসে কোনো হৃদয়ভঙ্গ নয়, আর কোনো ভুল নয়। বিশ্ব টি- টোয়েন্টির হাজারতম ও ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে গতকাল ভারতের রাজধানী দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ জিতেছে রাজকীয় ভঙ্গিমায়, ৭ উইকেটে। ঘরের মাঠে ভারত সব সময় অপ্রতিরোধ্য। তার ওপরে সফরের ঠিক আগে সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার দুঃসংবাদ স্তব্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ব্যক্তিগত কারণে তামিম ইকবাল আর ইনজুরিতে পড়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের অনুপস্থিতির ধাক্কা তো ছিলই। ভীষণ অস্বস্তি আর দুর্ভাবনা নিয়ে দিল্লিতে পা রাখা মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকদের নিয়ে বলতে গেলে আশাই ছিল না ক্রিকেট ভক্তদের। ভারতের রাজধানীতে ৭ উইকেটের জয়ের মাহাত্ম্য বিশাল। ১৯তম ওভারে মুশফিকুর রহিমের টানা চারটি বাউন্ডারির কথা কখনও কি ভোলা যাবে! গতকালের আগে ৮ সাক্ষাতে কয়েকবার জয়ের কাছে গিয়েও হতাশা উপহার দেয়া মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে ভর করে ভারতের মাটিতে ভারতকে হারিয়ে ৯ম সাক্ষাতে টি- টোয়েন্টিতে নিজেদের প্রথম জয় উপহার দিল টাইগাররা। এই জয়ে তিন ম্যাচ টি- টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে বাংলাদেশ দল।

২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে জিততে জিততেও ১ রানে হারতে হয়েছিল। নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে দিনেশ কার্তিকের শেষ বলে ছক্কায় স্বপ্নভঙ্গ আজও ক্ষত-বিক্ষত করে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয়। বেঙ্গালুরুর সেই হতাশা দূর হলো দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে।
টস হেরে আগে ব্যাট করা ভারতের ৬ উইকেটে ১৪৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ দল ৩ উইকেট হারিয়ে ৩ বল হাতে রেখেই ১৫৪ রান তুলে ঐতিহাসিক জয় কুড়িয়ে নেয়। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৪ রান, তিন বল হাতে রেখেই ছয় মেরে কাজটা করে ফেলে বাংলাদেশ। মুশফিক ১৯তম ওভারে পর পর চারটি চার মেরেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। ৪০ বলে ৬৩ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক, খুব সম্ভবত খেললেন টি-টোয়েন্টিতে নিজের সেরা ইনিংসটি।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই লিটন দাস (৭) পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। লিটন দাসের উইকেট নেন দিপক চাহার। এরপর অভিষিক্ত নাইম শেখ আর সৌম্য সরকার মিলে দলের হাল ধরেন। এই দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান মিলে টাইগারদের প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন। দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৪৬ রানের জুটি। ইনিংসের ৮ম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৫৪ রানের মাথায় যুজবেন্দ্রা চাহালের প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান নাইম শেখ। আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে ২৮ বলে ২৬ রান করেন নাইম। নাইম শেখ আউট হয়ে যাওয়ার পর মুশফিকের সঙ্গে ৬০ রানের জুটি গড়েন সৌম্য সরকার। তবে ইনিংসের ১৭তম ওভারের শেষ বলে খলিল আহমেদের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান সৌম্য। আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে ৩৯ রান করেন সৌম্য। এরপর অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের পথে ধরে রাখেন মুশফিকুর রহিম। ইনিংসের ১৯তম ওভারে টাইগারদের প্রয়োজন তখনও ২২ রান। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে রিয়াদকে স্ট্রাইক দেন মুশফিক।

এরপরের বলে দৌড়ে প্রান্ত বদল করেন এই দুই ব্যাটসম্যান। শেষ চার বলেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন মুশফিক। শেষ চার বলে খলিল আহমেদকে মারা চারটি বাউন্ডারিতে শেষ ওভারে টাইগারদের প্রয়োজন মাত্র ৪ রান। শেষ ওভারে বল করতে আসেন শিভম দুবে। মাহমুদুল্লাহ স্ট্রাইকে থেকে প্রথম বলটি ডট দেন, এরপরের বলে ডাবল নিলে টাইগারদের দরকার তখন চার বলে মাত্র ২ রান। পরের বলে ওয়াইড দিলে স্কোর লেভেল হয়ে যায় এবং ২০তম ওভারের তৃতীয় বলে ওভার বাউন্ডারি মেরে দলকে জয় এনে দেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এর আগে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে দারুণ এক সন্ধ্যা কাটিয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ রেখেই বল করলেন তারা। ফলে ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের দলও বড় পুঁজি গড়তে পারেনি প্রথম টি-টোয়েন্টিতে। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৮ রান তুলেছে ভারত। টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করা টাইগাররা শুরুতেই আটকে দেয় রোহিতকে। লেগ বিফোর হন ভারত অধিনায়ক। দ্বিতীয় উইকেটে বিপদ কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন শিখর ধাওয়ান আর লোকেশ রাহুল। তবে তাদের জুটিটাকে ২৬ রানের বেশি এগুতে দেননি বাংলাদেশ দলের তরুণ লেগস্পিনার বিপ্লব। শর্ট কাভারে মাহমুদউল্লাহর সহজ ক্যাচ হয়েছেন লোকেশ রাহুল (১৭ বলে ১৫)। পরে শ্রেয়াস আয়ারকেও সাজঘরের পথ দেখান বিপ্লব। ১৩ বলে ২২ রান করে আয়ার বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন নাইম শেখের। ৪২ বলে ৪১ রান করে রানআউটের কবলে পড়েন ধাওয়ান। মাহমুদউল্লাহর ওভারে সিঙ্গেলের জন্য দৌড়েছিলেন, কিন্তু অপরপ্রান্তে থাকা রিশাভ পান্ত সাড়া দেননি। মুশফিক বল পেয়ে স্ট্যাম্পটা ভেঙে দিতে ভুল করেননি। এরপর উইকেটে আসেন শিভাম দুবে। অভিষেক ম্যাচে আফিফের দুরন্ত ক্যাচে আউট হন তিনি। নিজের তৃতীয় ওভারে বল করতে আসেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। তার ওভারের ষষ্ঠ ডেলিভারিটি বুঝতে না পেরে আলতোভাবে লাগান, বল চলে যাচ্ছিল আফিফের মাথার ওপর দিয়ে। কে জানতো, এই বলটিও ধরে ফেলবেন তরুণ এই অলরাউন্ডার? লাফিয়ে ওঠে বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে যেভাবে ক্যাচটি নেন আফিফ, দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের হাজার হাজার দর্শক বোকা বনে যান। সবাই হা হয়ে থাকেন, এমন অবিশ্বাস্য ক্যাচও তালুবন্দী করা সম্ভব? ১৯তম ওভারে রিশাভ পান্তকেও তুলে নেন শফিউল। ২৬ বলে ২৭ রান করেন মারকুটে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তবে সপ্তম উইকেটে ক্রুনাল পান্ডিয়া আর ওয়াশিংটন সুন্দর ১০ বলের জুটিতে তুলে দেন ২৮ রান। সুন্দর ৫ বলে ১৪ আর ক্রুনাল ৮ বলে করেন অপরাজিত ১৫ রান। বাংলাদেশের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব আর শফিউল ইসলাম।

source: https://dainikpurbokone.net

Back to top button