জাতীয়

জেলা প্রশাসক সন্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে হেডম্যান এসোসিয়েশন

রোববার সকালে পার্বত্য চট্টগ্রামের হেডম্যান নিয়োগ স্থায়ী, রাজস্বভূক্ত করে বদলী ও পদায়নের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি-বান্দরবন জেলায় মানববন্ধন-সমাবেশ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে তিন পার্বত্য জেলার হেডম্যান এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। তারা ২০১৭ সালের জেলা প্রশাসক সন্মেলনে গৃহীত এই সিদ্ধান্তকে পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহ্য, ১৯০০ সালের পার্বত্য আইন, আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদ আইন এবং পার্বত্য চুক্তির সাথে অসংগতিপূর্ণ জানিয়ে দ্রুত তা বাতিলের আহবান জানান।
সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিভিন্ন মৌজার হেডম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে বক্তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান, তা না হলে সামনে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন হেডম্যান এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন হেডম্যান এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, হেডম্যান এসোসিয়েশনের সহসভাপতি সুজিত দেওয়ান, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড.ভবতোষ দেওয়ান, হেডম্যান এসএম চৌধুরি, হেডম্যান কাবেরি রায় প্রমূখ। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
এদিকে একই দাবিতে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সামনে খাগড়াছড়ি জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক’র সভাপতি কংজরী চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালের ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকগণ হেডম্যানদের রাজস্ব খাতে স্থায়ী নিয়োগসহ বদলী ও পদায়নের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে সংঘর্ষপূর্ণ। শতবছরের পুরানো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসে লিপ্ত হওয়া এবং সংবিধান পরিপন্থী কর্মকান্ডের দায়ে সে সময় কালের জেলা প্রশাসকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করে বক্তব্য দেন তিনি। খাগড়াছড়ি জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি চাইথোঅং মার্মার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ প্রীতি চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিরণ জয় ত্রিপুরা। মানববন্ধন শেষে মৌন মিছিল করে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
বান্দরবন জেলাতেও বান্দরবন হেডম্যান এসোসিয়েশনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বান্দরবন জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিমং প্রু জানান, তিন পার্বত্য জেলায় প্রথাগতভাবেই হেডম্যান ও কার্বারিরা তাদের এলাকায় ভূমিকর আদায় করে আসছেন এবং সামাজিক বিচার আচার নিষ্পত্তি করছেন। তারাই স্থানীয়ভাবে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায়, সামাজিক ও সরকারি উন্নয়ন কর্মকান্ডের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মৌজা হেডম্যান ও কার্বারি পদগুলো কোনভাবেই বদলীযোগ্য নয় এবং হেডম্যান ও কার্বারি নিয়োগ, পদায়ন, বরখাস্তকরণের এখতিয়ার কেবল সার্কেল চীফ বা রাজাগণের রয়েছে। কিন্তু তা ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসকদের সন্মেলনে তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসকের দাবি মতে বদলী, পদায়ন, নিয়োগদান ও রাজস্বভূক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে প্রথাগত রীতি ও ঐতিহ্য হুমকির মুখে বলে তিনি দাবি করেন। তাই এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রথাগত ঐতিহ্য অনুসারেই নিয়োগ, পদায়ন ও কর আদায়ের ব্যাপারে রাজাদের হাতেই দেয়ার দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন শেষে মৌন মিছিল করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি পেশ করেন হেডম্যান এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।

Back to top button