জাতীয়

জেনেভায় ইউপিআর অধিবেশন: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের সুপারিশ

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ইউনিভার্সেল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) অধিবেশনে বিভিন্ন সদস্য-রাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে।
১৪ মে ২০১৮ সোমবার জেনেভায় জাতিসংঘের কার্যালয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর মানবাধিকার পরিষদের ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বারের মতো পরিবীক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধিদল এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছে। টিআইবি চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, আইন ও সালিশ কেন্দ্রেন নির্বাহী পরিচালক শিফা হাফিজা, কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা, সেভ দ্যা চিলড্রেন-এর লায়ালা খন্দকার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রাশেদা আখতার, হিউম্যান রাইটস ফোরামের পাঁচজন কর্মীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ এই অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন।
অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করা, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে সচল করা, ভূমি কমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বরাদ্দ করা, জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষা করা ও তাদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ উত্থাপিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, মালদ্বীপ, নিউজিল্যা-, পেরু, আর্জেন্টিনা, ইরান, ফ্রান্স, বাহরাইন, সার্বিয়া ইত্যাদি রাষ্ট্রসমূহ এসব বিষয় তুলে ধরেছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষা, অধিকার কর্মীদের বিচারবহির্ভূত হত্যা ও জোরপূর্বক গুম, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দায়মুক্তি, দু:স্থ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা, মৃত্যুদ- রহিতকরণ, কিশোরী বিবাহ নিরোধ ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ উত্থাপিত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও সুপারিশ উঠে আসে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে। রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশকে ভূয়সী প্রসংশা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার তার প্রতিবেদনে পূর্বের মতো উল্লেখ করেছে যে, পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণের লক্ষ্যে সরকার ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি পুনর্গঠন করেছে। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ ত্বরান্বিত করা এবং এতদাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন করেছে।

যে সমস্ত দলিলাদির ওপর ভিত্তি করে এই পর্যালোচনা করা হয় তা হলো- ১) জাতীয় রিপোর্ট – বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পেশকৃত তথ্য; ২) স্বাধীন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ এবং প্রুপসমূহের প্রতিবেদন, যা বিশেষ কার্যপ্রণালী হিসেবে পরিচিত, মানবাধিকার ট্রিটি বডি এবং অনান্য জাতিসংঘ সত্বাসমূহের তথ্য সমৃদ্ধ প্রতিবেদনসমূহ; ৩) অন্যান্য অংশীদারগণ যেমন, জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানসমূহ, আঞ্চলিক সংস্হাসমূহ এবং আদিবাসী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য। উল্লেখ্য যে, আদিবাসী জাতিসমূহের জাতীয় পর্যায়ের মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের সাচিবিক সহায়তায় কোয়ালিশন অব ইন্ডিজেনাস পিপলস অর্গানাইজেশন কর্তৃক একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য যে, ইউপিআর জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের একটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া যা জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত। এই প্রক্রিয়ার অধীনে বর্তমানে পাঁচ বছর অন্তর অন্তর জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের নিজ নিজ রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় এবং সেটির আলোকে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতিকরণে এবং নাগরিকদের প্রতি মানবাধিকারের দায়দায়িত্ব পরিপূরণে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ ঘোষণা করা হয়। ইউপিআর তুলনামুলকভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটি নতুন এবং অধিক কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে মানবাধিকার পরিস্থিতিকে উন্নীত করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ইউপিআর বা সার্বজনীন পুনর্বীক্ষণ পদ্ধতি এর আওতায় ২০০৯ সালে এবং ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হয়। দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আদিবাসী প্রতিনিধিরাও ইউপিআর ব্যবস্থার দুটি অধিবেশনে অংশগ্রহণ করে এবং ছায়া প্রতিবেদন পেশ করে। ১৪ মে সোমবার বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর তৃতীয় চক্রের যে রিভিউ হয় সেখানেও দেশের বিভিন্ন সুশীল সামাজিক সংগঠনের ছায়া প্রতিবেদনে আদিবাসীদের মানবাধিবারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাশাপাশি কাপেং ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গঠিত ৩০টি আদিবাসী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ইউপিআর কোয়ালিশন এর মাধ্যমে আদিবাসীদের পক্ষ থেকে ইউপিআর ফোরামে প্রতিবেদন পেশ করা হয়।

Back to top button