জাতীয়

জামিনের পরদিন বম আদিবাসীর মৃত্যু, যথাযথ চিকিৎসার অভাব ও নির্যাতনের অভিযোগ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) অভিযোগে আটক সংময় বম (৫৫) গতকাল বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আলসারে ভুগছিলেন এবং পরে তাঁর অবস্থা ক্যান্সারে রূপ নেয়। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংময় বমের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলেও তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

মৃত্যুর মাত্র একদিন আগে, গত ৩১ মে বিকেলে তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়। ২০২২ সালে কেএনএফ সন্দেহে সংময় বমকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংময়ের মৃত্যু প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় একজন বলেন, “রাষ্ট্র দয়া করেছে। মৃত্যুর একদিন আগে জামিন দিয়ে তাঁকে নিজ জেলায় মরার সুযোগ দিয়েছে।”

এই ঘটনাটি বম জাতিগোষ্ঠীর ওপর চলমান রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের আরেকটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে, ২০২৫ সালের ১৫ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে মারা যান ৩০ বছর বয়সী লাল ত্লেং কিম বম। তিনি রুমা উপজেলার বেথেল পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন এবং কেএনএফ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২০২৪ সালে গ্রেপ্তার হন। কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। অভিযোগ রয়েছে, যথাযথ চিকিৎসার অভাব ও নির্যাতনের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়।

২০১৯ সালের পর থেকে কেএনএফ বিরোধী অভিযানের আড়ালে বম জাতিগোষ্ঠীর ওপর দমন-পীড়ন ক্রমাগত বেড়েছে। Amnesty International বলছে, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪,০০০ এর বেশি বম ব্যক্তি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০২৪ সালের ৭ এপ্রিলের পর থেকে কমপক্ষে ১০ জন বেসামরিক বম নাগরিক নিহত হয়েছেন, ১৮৬ জন কারারুদ্ধ এবং আরও ২০ জনের বেশি সামরিক হেফাজতে রয়েছেন। অনেককে এখনো আদালতে হাজির করা হয়নি।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, একটি জাতিগোষ্ঠীর এভাবে নির্বিচারে দমন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। Amnesty International-এর ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বম জনগণের মধ্যে শিশু, গর্ভবতী নারী, যাজক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও কৃষক—কেউই রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বাইরে নেই।

 

তথ্যসূত্রঃ প্রান্তিক নিউজ 

Back to top button