জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামের অধিবেশন: আদিবাসীদের বেহাত হওয়া ভূমি উদ্ধারকল্পে ভূমি কমিশন কার্যকর করার আহ্বান কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি
নিউইয়র্ক থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি: আদিবাসীদের বেহাত হওয়া ভূমি উদ্ধারকল্পে অচিরেই ভূমি কমিশন কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি পল্লব চাকমা। জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ১৫তম অধিবেশনের ৪নং আলোচ্য বিষয়: আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রের আলোকে স্থায়ী ফোরামের ছয়টি অর্পিত কার্যাবলীর উপর গত ১০ মে ২০১৬ তারিখে বক্তৃতা প্রদানকালে পল্লব চাকমা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আইএলও কনভেনশন নং ১০৭সহ অনেক আন্তর্জাতিক চুক্তির পার্টি হলেও দেশে আদিবাসীরা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ, কর্পোরেশন, সেটেলার ও অন্যান্য প্রভাবশালীদের দ্বারা নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে থাকে।
অধিকাংশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রথাগতভাবে ভোগদখলীয় ও রেকর্ডীয় জায়গা-জমির মালিকানা, দখল ও প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত বলে তিনি জানান। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতল অঞ্চল উভয়ের ক্ষেত্রে একই চিত্র বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জুম্মদের প্রথাগত ভূমি অধিকারকে পদদলিত করে তাদের মৌজা ও জুম ভূমির উপর সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বে পর্যটন কেন্দ্র এবং বিজিবি ও সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। বহিরাগত প্রভাবশালীদের কাছে শত শত একর ভূমি ইজারা প্রদান করে এবং পদ্ধতি-বহির্ভুতভাবে রিজার্ভ ফরেষ্ট ঘোষণা করে জুম্মদেরকে তাদের গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও ভূমি মালিকদারে পরামর্শ বা সম্মতি ব্যতিরেকে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক এ সমস্যা নিরসনে প্রধান বাধা হয়ে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এর বিরোধাত্মক ধারা সংশোধন না করা। যদিও বাংলাদেশ সরকার স্থায়ী ফোরামের ১৩তম অধিবেশনে এই ভূমি কমিশন আইনের বিরোধাত্মক ধারা সংশোধনের জন্য সম্ভব সকল উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি বলে তিনি জানান।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সংক্রান্ত স্থায়ী ফোরামের যে গবেষণা প্রতিবেদন ২০১১ সালের ১১তম অধিবেশনে পেশ করা হয়েছিল, উক্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামকে আহ্বান জানান পল্লব চাকমা।
উল্লেখ্য যে, গত ৯ মে থেকে স্থায়ী ফোরামের এই ১৫তম অধিবেশন নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের সদরদপ্তরে শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের এবারের ১৫তম অধিবেশনে ফোরামের সদস্য রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ছাড়াও জনসংহতি সমিতির বিধায়ক চাকমা ও উজানা লারমা তালুকদার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সঞ্জীব দ্রং, কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের পার্বতী রায়, সিলেটের সমরজিৎ সিনহা প্রমুখ আদিবাসী নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করছেন।