চিম্বুক রক্ষায় বাংলাদেশঃ চিম্বুকে হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবী
নিরাপত্তা বাহিনীর কাজ দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। নানা ব্যবসায়িক কাজে জড়িত হওয়া কিংবা অংশীদার হওয়া নয়। ঢাকায় শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘চিম্বুক রক্ষায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে চিম্বুকে পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণের প্রতিবাদে ভূমি-বন-বনবাসী রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে আজ (২৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সংহতি বক্তব্যে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রিবেং দেওয়ান বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কাজ প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্বকে টিকিয়ে রাখা। কিন্তু পাহাড়ে নিরাপত্তা বাহিনী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর মত ব্যবসা করছে বলেও মন্তব্য করেন এই্ ছাত্র নেতা।
তিনি আরো বলেন, ২৩ বছর হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু সেই চুক্তি এখন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ে ইকো-ট্যুরিজম বা কমিউনিটি ট্যুরিজম না করে ইট-পাথরের ট্যুরিজমে পড়ে রয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নসহ চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধের আহ্বানও জানান পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের এই নেতা।
এদিকে জনউদ্যোগের তারিক মিঠুলের সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে সভপতিত্ব করেন নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ সিং, ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক হারুনর রশীদ ভুঁইঞা, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য মোস্তফা আলমগীর রতন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মানবেন্দ্র দেব, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক দীপক শীল, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক কাজী আব্দুল মোতালেব, এএলআরডি’র কর্মসূচী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ প্রমুখ। সমাবেশে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সিয়াম সারোয়ার জামিল।
সংহতি বক্তব্যে সাবেক ছাত্রনেতা মানবেন্দ্র দেব বলেন, কেবল চিম্বুকের ইস্যু নয়। আমি চিম্বুককে ধরে পাহাড়ে শত শত বছর ধরে একই প্যাটার্নে আদিবাসীদের উপর সংঘটিত নিষ্পেষণ ও বর্বরতার বিচার চাইতে আজকে রাস্তায় নেমেছি। আদিবাসী ছাড়া কোনো উন্নয়ন প্রকৃত উন্নয়ন হতে পারেনা। এই উন্নয়ন আদিবাসী তাড়ানোর বলেও দাবী করেন তিনি।
তিনি সরকারবে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, আগে পার্বত্য চুক্তির প্রত্যেকটি শর্ত মানেন।তারপর সিদ্ধান্ত হবে কীভাবে উন্নয়ন হবে। সকল উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার স্থানীয় আদিবাসীদের বলেও দাবী করেন তিনি।
আদিবাসী ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্র নাথ সিং সংহতি বক্তব্যে বলেন, সাদা চোখে দেখলে মনে হতে পারে আমরা উন্নয়ন বিরোধী। কিন্তু পাহোড়ে বিলাস বহুল হোটেল নির্মাণ হবে আর পাহাড়ীরা না খেয়ে থাকবে তা হতে পারেনা। পাহাড়ে এখনো অনেক জায়গায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। আর সে জায়গায় পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ আদিবাসী উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বলে দাবী করেন এই আদিবাসী নেতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, দেশের ৬১ জেলায় এক শাসন আর বাকী ৩ টি জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিচালিত শাসন, এর জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। নিরাপত্তা বাহিনীর কাজ দেশ রক্ষা আর নিরাপত্তা রক্ষা ব্যবসা করা নয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা পুকুর চুরি দেখেছি কিন্তু সাগর চুরি দেখিনি। এই সাগর চুরির বিষয়টিও সিকদার গ্রুপ আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে পাহাড়ে।
এছাড়া তিনি আরো বলেন, আদিবাসীরা যেখানে থাকে সেখানে সবুজ থাকে। গাছ, পাখি, বন- পাহাড় সব থাকে। সেই সাথে থাকে সৈন্দর্য্য। যার জন্যই এই আদিবাসীরাই কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর টার্গেটে পরিণত হয় বলে দাবী করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।
অবিলম্বে চিম্বুকে নির্মাণাধীন পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধ সহ পার্বত্য চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়ন দাবী করেন সমাবেশের অন্যান্য বক্তারাও।