চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ৪৫ বিশিষ্টজনের বিবৃতি
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের ৪৫ জন নাগরিক নিম্নোল্লিখিত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি, চা বাগানের শ্রমিকরা গত ৯ আগস্ট থেকে তাদের নূন্যতম মজুরি দৈনিক ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে প্রথমে ২ ঘন্টা করে এবং পরবর্তী সময়ে অর্ধদিবস করে কর্মবিরতি পালন করে আসছে। চা বাগানের মালিক পক্ষ তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু গত ১৪ আগস্ট চা সংসদের (চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠন) পক্ষ থেকে একটি ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, চা শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরিতে ভাল আছেন। বর্তমানের এই উচ্চ বাজার মূল্যের সময় দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে কোন একটি পরিবার কেন একজন ব্যক্তির সংসারও চালানো সম্ভব নয়।
দেশে চা শিল্পের বিকাশ ঘটেছে তাও প্রায় ১৬৮ বছর। কিন্তু এই ১৬৮ বছরে শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ১৬৮ টাকাও করা যায়নি। গত ১৪ আগস্ট, ২০২২ তারিখ চা মালিকরা নূন্যতম মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা করার প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছে। যা শ্রমিকদের প্রতি অবহেলা ও উপহাসের নামান্তর। আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন কৃষি শ্রমিকের নূন্যতম মজুরি ৩ কেজি ৩৭০ গ্রাম চালের সমপরিমান। বর্তমানে গ্রামের একজন মজুরকে সারাদিনের জন্য মজুরি দিতে হয় কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। এছাড়াও শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিম্নতম মজুরি বোর্ড বিভিন্ন সেক্টরের যে নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করেছে তা আরো বেশী। শুধু তাই নয় সেখানে প্রতিবছর বেতন বৃদ্ধির বিধান রয়েছে। পার্শবর্তী দেশ ভারতে চা শ্রমিকদের বর্তমান ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ২৩২ রুপী যা বাংলাদেশী টাকায় ২৭৭ টাকা এবং তারাও এই মজুরি বৃদ্ধির দাবি করছে। সর্ববৃহৎ চা রপ্তানীকারক দেশ শ্রীলংকা, নেপাল, কেনিয়া এবং চীনে দৈনিক মজুরি চা শ্রমিকদের দাবিকৃত মজুরির চেয়েও বেশি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা রয়ে গেল। সম্প্রতি, চা-বোর্ডের তথ্য অনুসারে দেশের ১৬৭ চা-বাগানে ৫ লাখের বেশি চা-জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক প্রায় এক লাখ। একজন শ্রমিকের মজুরির ওপর কমপক্ষে ৫ জনের ভরণপোষণ নির্ভর করে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে ৩০০ টাকা মজুরি পেলেও তা সম্ভব নয়।
তাই আমাদের সুস্পষ্ট দাবি- অবিলম্বে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে চা শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি যাতে চা বাগান মালিকরা মেনে নেয় তা নিশ্চিত করতে হবে। তেলের দাম বাড়লে পরের দিনই সরকার ভাড়া সমন্বয় করে, গার্মেন্টস মালিকদের দাবির সাথে সাথে প্রণোদনা দেয়, অথচ চা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির জন্য ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারল না। ২০২০ সালের শ্রমিক এবং মালিকদের সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর কথা। মজুরি বাড়ানোর চুক্তি সই করতে চা শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো হলেও মালিক পক্ষ আলোচনায় বসেনি। সরকারি তথ্য অনুসারে, দেশে মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার অর্থাৎ ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৮০ টাকা। চা-শ্রমিকদের বার্ষিক আয় মাত্র ৪৩ হাজার ২০০ টাকা। আমরা তাই চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির প্রতি সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করে তাদের নায্য ও মানবিক ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। সাথে সাথে তাদের সাথে সার্বিক জীবনমান (যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ঝুঁকিপূর্ণ কীট-নাশক এর সঠিক ব্যবহার, নারী স্বাস্থ্য) উন্নয়ন ও তদারকিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার সরকারের প্রতি আহবান জানাই।”
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা হচ্ছেন:
১. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও চেয়ারপার্সন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন
২. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি ও চেয়ারপার্সন, এএলআরডি
৩. ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
৪. ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী
৫. ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, কনভেনর, সিটিজেন প্লাটফর্ম ফর এসডিজি
৬. আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব
৭. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
৮. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশ ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)
৯. ড. স্বপন আদনান, প্রফেশনাল রিসার্স এসোসিয়েট, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়
১০. শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ
১১. প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
১২. ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, নির্বাহী পরিচালক, রিসার্স ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ (রিব)
১৩. রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
১৪. ড. ইমরান মতিন, নির্বাহী পরিচালক বিআইজিডি, ব্রাক বিশ^বিদ্যালয়
১৫. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টড.
১৬. পারভীন হাসান, ভাইস চ্যন্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি
১৭. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা
১৮. ড. ফস্টিনা পেরেইরা, মানবাধিকার আইনজীবী
১৯. অ্যাড. জেড আই খান পান্না, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২০. অ্যাডভোকেট তবারক হোসাইন, সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২১. ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
২২. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন
২৩. শারমিন মুর্শিদ, নির্বাহী পরিচালক, ব্রতি
২৪. সঞ্জীব দ্রং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
২৫. জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ
২৬. শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
২৭. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৮. রেহনুমা আহমেদ, লেখক
২৯. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী
৩০. ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩১. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃতত্ত্ব বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩২. সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৩. কাজলী সেহরীন ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৪. ফেরদৌস আজীম, অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়
৩৫. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৬. ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৭. জোবাইদা নাসরীন কণা, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৮. ফারহা তানজিম তিতিল, সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়
৩৯. নোভা আহমেদ, গবেষক ও শিক্ষক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
৪০. রেজাউল করিম লেনিন, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী
৪১. মো. নুর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী
৪২. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়
৪৩. হানা শামস আহমেদ- মানবাধিকার ও আদিবাসী অধিকার কর্মী
৪৪. রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট
৪৫. দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম