আজ ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি: “আমার বর্ণমালা, আমার অহংকার” এই স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে “মাতৃভাষায় বর্ণমালা প্রশিক্ষণ কর্মশালা-২০২৫” এর অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়।
অরিয়েন্টেশন ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী অন্তর চাকমা, ম্রো বর্ণমালা প্রশিক্ষক ফুংপ্রে ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা বর্ণমালা প্রশিক্ষক দেবাশীষ তঞ্চঙ্গ্যা ও তিথি তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক নুখ্যাইমং মারমা এবং সভাপতিত্ব করেন সহ-সভাপতি ভুবন চাকমা। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি রবি বিকাশ চাকমা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামটি আজ বিকাল ৩ ঘটিকায় শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী অন্তর চাকমা বলেন, ভাষা ও বর্ণমালার চর্চা না থাকলে হারিয়ে যেতে বাধ্য। বর্তমান প্রজন্মের নিজের ভাষা ও বর্ণমালার প্রতি উদাসীনতার কারণে দিন দিন আমাদের ভাষা ও ঐতিহ্য চর্চার অভাবে আমরা হারাতে বসেছি। ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করার দায়িত্ব শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের। ভাষা না থাকলে আমাদের অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে সময় লাগবে না। রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে আমাদের ভাষাসমূহে নানা বাহ্যিক শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটছে, আমাদের আত্মপরিচয় ও আমাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে বর্তমান প্রজন্মকে এমন সৃজনশীল কাজে এগিয়ে আসতে হবে।
রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি সজীব তঞ্চঙ্গ্যা আয়োজিত এই কর্মশালা বিষয়ে বলেন, এইবারের কর্মশালায় পাঁচটি আদিবাসী ভাষায় বর্ণমালা শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের যে দায়, সে দায়বোধ থেকেই আমাদের এই আয়োজন। কর্মশালায় যারা প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থী উভয়েই অদূর ভবিষ্যতে নিজ নিজ জাতি-সমাজ উন্নয়নে, ভাষা-সংস্কৃতি চর্চা ও প্রসারে কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
কর্মশালা আয়োজক কমিটি আহ্বায়ক ও সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক নুখ্যাইমং মারমা কর্মশালা নিয়ে বলেন, দ্বিতীয় বারের মতো আমাদের বর্ণমালা প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের অধিকাংশ আদিবাসী জনগোষ্ঠী নিজ ভাষায় কথা বলতে পারলেও নিজস্ব ভাষার বর্ণমালায় তারা অধিকাংশই অদক্ষ। তার কারণ তাদের দৈনন্দিন জীবনে এসব চর্চার কোনো সুযোগ না থাকা। ভাষাগত আগ্রাসনের শিকার হওয়া বর্তমান আদিবাসী প্রজন্মের খুব কম সংখ্যক-ই তাদের নিজস্ব মাতৃভাষার বর্ণমালাগুলো লিখতে ও পড়তে জানে। মূলত এমন বাস্তবতা থেকে আংশিকভাবে হলেও উত্তরণের জন্য আমাদের রঁদেভূ’র উদ্যোগে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় বর্ণমালা প্রশিক্ষণের উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।
উল্লেখ্য যে, রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী আদিবাসী মাতৃভাষায় বর্ণমালা প্রশিক্ষণ কর্মশালায় মোট পাঁচটি আদিবাসী (রাখাইন, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা, মারমা, চাকমা) ভাষার প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালাটি একমাস ব্যাপী চলবে এবং প্রায় ৫০ জনের অধিক আদিবাসী শিক্ষার্থী কর্মশালায় অংশগ্রহণ করছে। এবারের কর্মশালায় আদিবাসী মাতৃভাষায় দক্ষ চবির শিক্ষার্থীবৃন্দ প্রশিক্ষক হিসেবে থাকবেন।
