গারো পাহাড়ে বন্য হাতির আক্রমণে আদিবাসী কৃষি শ্রমিক নিহত
নিঃস্ব পরিবার আজ পথে

শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের বড় গজনী এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে এফিলিস মারাক (৫০) নামে এক আদিবাসী কৃষি শ্রমিক মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে বাড়ির কাছেই ধান কাটার কাজ শেষে ফেরার পথে শালবনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা বন্য হাতির আক্রমণে তিনি প্রাণ হারান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে আহাজারিতে ভেঙে পড়েছে তার পরিবার।
নিহত এফিলিস মারাক বড় গজনী গ্রামের সহেন্দ্র মারাকের ছেলে। তিনি দিনমজুর হিসেবে কৃষিকাজ করতেন এবং পরিবারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, “এতো করে পিষ্ট করেছে যে মাংস-হাড় আলাদা হয়ে গেছে। হাত দিয়ে তুলতে পারিনি, দুইটি বস্তায় ভরে মরদেহ আনা হয়েছে।” এফিলিস ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মৃত্যুর পর পরিবারটি পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছে।

তার মেয়ে কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন,
“ধান কাটতে গেসিল… আমরা দিন আনি দিন খাই… হেই একমাত্র আসিল যে আমগোর পড়াশোনা চালাইত… এখন কিভাবে চলুম?”

স্থানীয় ইউপি সদস্য বলেন,
“এক ঘণ্টার ব্যবধানে আমাদের এলাকায় দুইজন দিনমজুর মারা গেছে। তাদের পরিবারগুলো এখন দিশেহারা, পথে বসার মত অবস্থা। ফসল, ঘরবাড়ি, মানুষের জীবন—সবকিছুর ক্ষয়ক্ষতি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এর প্রতিকার দরকার।”
গারো সমাজের একজন প্রবীণ সদস্য জানান,
“এফিলিস শুধু তার পরিবারের ভরসাই ছিলেন না, বরং আমাদের সমাজের একজন শান্তশিষ্ট ও পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। বন বিভাগ ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, যেন তার পরিবারের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়।”
ঝিনাইগাতী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আল-আমীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
বন বিভাগের শেরপুর সহকারী বনসংরক্ষক সাদেকুল ইসলাম খান জানান,
“নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
রিসার্চ অ্যান্ড কনজারভেশন অব এলিফ্যান্ট বাংলাদেশের সভাপতি আসিফুজ্জামান পৃথিল বলেন,
“হাতি সাধারণত শান্ত স্বভাবের, তবে সম্প্রতি তাদের প্রতি আক্রমণ করা হলে তারা প্রতিশোধ নিতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বের উত্তেজনার কারণে এই আক্রমণ ঘটেছে।”
ঘটনার পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা হাতির চলাচলের পথ ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।