জাতীয়

গাইবান্ধায় পালিত হলো সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস: অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিপীড়ন বন্ধের জোর দাবি

ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে উদ্‌যাপিত হলো সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এবং জমিদার-মহাজনদের শোষণের বিরুদ্ধে সিধু-কানু, চাঁদ ও ভৈরবীর নেতৃত্বে সংঘটিত এই বিদ্রোহের স্মরণে প্রতি বছর দিনটি পালন করা হয়।

এ বছর দিবসটি উপলক্ষে কামদিয়া ইউনিয়নের সাতানা আলোর ঘর শিশু শিক্ষা কেন্দ্র মাঠে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘অবলম্বন’-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের নেতা-কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী নেত্রী ললিতা মুরমু। বক্তব্য রাখেন অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের সদর উপজেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, সাংবাদিক কায়সার রহমান রোমেল, সাংস্কৃতিক কর্মী মানিক বাহার, নারী নেত্রী মাজেদা খাতুন, নাজমা বেগম, সেলিনা আক্তার সোমা, আদিবাসী নেতা গৌড় চন্দ্র পাহাড়ি, সুশীল টপ্য, মিলন তিগ্যা, সোনালী মার্ডি ও সুরভী মার্ডি।

সাঁওতালদের ভূমি অধিকারের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য রাখছেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাঁওতাল বিদ্রোহসহ সাঁওতালদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে প্রাণ হারানো শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বক্তারা বলেন, “সিধু-কানু, চাঁদ-ভৈরবীর নেতৃত্বে সংগঠিত এই বিদ্রোহ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে শোষিত মানুষের এক সাহসী প্রতিবাদ। এই বিদ্রোহ একদিকে যেমন ব্রিটিশদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তেমনি স্থানীয় জমিদার ও মহাজনদের জুলুম থেকেও মুক্তির পথ দেখিয়েছিল।”

বক্তারা সাঁওতালদের ভূমি অধিকারের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “২০১৬ সালের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ঘটনায় সাঁওতালদের উপর যে বর্বর হামলা ও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল, তার ক্ষত আজও শুকায়নি।” তারা অবিলম্বে সাঁওতালদের পৈতৃক ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান।

সভায় বক্তারা আরও বলেন, “সাঁওতাল সংস্কৃতি বাংলাদেশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি।” তারা সাঁওতাল শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাঁওতাল তরুণ প্রজন্ম তাদের পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে বলেন, “সাঁওতাল বিদ্রোহের চেতনাকে ধারণ করে তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।”

তারা সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির দাবিও জানান, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই গৌরবময় অধ্যায় সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।

দিবসটি উদ্‌যাপনের মধ্য দিয়ে সাঁওতালরা আবারও তাঁদের ঐক্য, ইতিহাস ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে স্মরণ করলেন এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করলেন।

Back to top button