আঞ্চলিক সংবাদ

কুলাউড়ায় আবারো খাসিয়াদের ৩ হাজার পানগাছ কর্তন: নিঃস্ব ৫ খাসি পরিবার

কাঞ্চন মারাক: কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের নোনছড়ায় সামাজিক বনায়নের নামে ভেলুয়াপুঞ্জির অন্তত ৩০টি ছোট-বড় জুম দখলে নিয়েছে স্থানীয় নলডরি বনবিভাগ। এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নোনছড়া পানপুঞ্জির ২৫টি খাসিয়া পরিবারের লোকজন।

গত প্রায় ২ মাস থেকে কথিত উপকারভোগীদের নিয়ে এইসব জুম দখল করা হয় বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে ভয়ে ও অচেনা আতংকে খাসিয়ারা দিনাতিপাত করছেন। তবে স্থানীয় জনগোষ্ঠী’র মধ্যে কয়েকজন জানান, জুমগুলোর পান ও অন্যান্য গাছ ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। জুমের কোথাও আবার আগুন লাগিয়ে বাঁশ ও গাছ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, পাশের ডলুছড়াপুঞ্জির লোকজনের পাশে দাঁড়ানোর জের ধরে গত ২৪ আগষ্ট মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পুঞ্জির বাসিন্দাদের। তাঁরা বুধবার রাতে কুলাউড়া থানায় মামলা করেছেন।

উক্ত মামলার এজাহার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায় , ডলুছড়া ও ভেলুয়াপুঞ্জি দু’টি পাশাপাশি। ডলুছড়ায় ৫০টি ও ভেলুয়াপুঞ্জিতে ৭০টি খাসিয়া পরিবারের বসবাস করে। পান চাষ ও বিক্রিই তাদের জীবিকার মূল বাহন। ডলুছড়ায় প্রায় ১০ হেক্টর টিলাভূমির মালিকানা নিয়ে পুঞ্জির লোকজনের সঙ্গে বন বিভাগের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি বন বিভাগের স্থানীয় মুরইছড়া বিটের উদ্যোগে সেখানে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছের বাগান করা হয়। বনায়নে ৫০ জন উপকারভোগীর একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়। উপকারভোগীদের বাড়ি আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বলেও জানা যায়।

স্থানীয় খাসিয়ারা বলেন, কথিত উপকার ভোগিরা নলডরি বনবিটের সাবেক বিট কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামের সহযোগিতায় জুমের ভিতর ক্যাম্প ও সামাজিক বনায়নের নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখেছে। এইসব ঘটনা প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার পায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোনছড়া পুঞ্জির কয়েকজন জানান, তারা সামাজিক বনায়নের বিপক্ষে নন। তবে জুমের পান এবং প্রাকৃতিক গাছ কেটে তারা সামাজিক বনায়ন চান না। এদিকে নোনছড়ার পানজুমে আদিবাসীরা ভয়ে যেতে পারছেন না। তাছাড়া তারা প্রতিবাদ করতে গেলে বনবিভাগের লোকজন ও কথিত উপকার ভোগিরা রাস্তাঘাটে তাদের যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও হেয় প্রতিপন্ন করে বলেও অভিযোগ করেন।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, এভাবে চললে একসময় পান জুমের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। তারা আরো জানান, নলডরির বর্তমান বিট কর্মকর্তা ও কথিত উপকারভোগিরা পুঞ্জির লোকজনের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করে নিয়েছে। তাছাড়া বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক ইনজাংশন জারির পরও বনবিভাগ আইন অমান্য করে জোর পূর্বক নার্সারী ও সামাজিক বনায়ন করেছে। এমতাবস্থায় নোনছড়ার খাসিয়া জনগোষ্ঠী জুমের প্রাকৃতিক গাছ-জুম রক্ষার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা ও জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থানীয় খাসিয়া-গারোদের আন্তপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন কুবরাজের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং বলেন, খাসিয়াদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের প্রতি দাবিও জানান।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং আইপিনিউজকে বলেন, খাসিয়াদের পানজুম, বাড়িঘর ও জীবিকার উপর বারংবার যে দুবৃত্তায়ন ও আক্রমণ চলছে তা খুবই দু:খজনক। এর আগে খাসিয়াদের উপর সংঘটিত সহিংসতায় জড়িতদের কাউকেই পুলিশ ও প্রশাসন গ্রেফতার করেনি। ফলে খাসিয়াদেরকে আক্রমণ করলে যে কিছুই হয় না তা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।

তিনি আরো বলেন, অবিলম্বে এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে খাসিয়াদেরকে নিরাপত্তা দিতে হবে। এভাবে নিপীড়িত হতে থাকলে খাসিয়ারা হতাশ হয়ে পড়বে। তাঁদেরকে সাহস যোগানো জন্য প্রশাসনসহ নাগরিক সমাজের সকলের দায়িত্ব রয়েছে।

Back to top button