ইন্দ্রা হত্যার বিচার ও রোহিঙ্গ্যা ইস্যুতে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের প্রতিবাদে পিসিপির বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের মধ্য বোয়ালখালীতে সেটেলার বাঙালী কর্তৃক ইন্দ্রা চাকমাকে কুপিয়ে হত্যা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের শহরাঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদেরকে হুমকি প্রদান এবং প্রশাসনের নীরবতার প্রতিবাদে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগেঃ ১৭ সেপ্টেম্বর রোবাবার রাজধানীতে এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে । মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে টিএসসি’র সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা’র সঞ্চালনায় এবং সহ-সভাপতি জ্ঞান জ্যোতি চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির অর্থ সম্পাদক অমর শান্তি চাকমা । অন্যান্যদের বক্তব্য ,রাখেন পিসিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সতেজ চাকমা, কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক রিন্টু চাকমা এবং সহ-সভাপতি অন্তিক চাকমা প্রমুখ। এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মারমা স্টুডেন্টস্ কাউন্সিলের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জনিমং মারমা।
অমর শান্তি চাকমা তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন “পার্বত্য চট্টগ্রামে এসব হত্যাকান্ড এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সমূহ নতুন কিছু নয়। আশির দশকে জিয়াউর রহমান সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পুনর্বাসিত করা সেটলার বাঙালিরা বহুকাল ধরে প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ছত্রছায়ায় এসব ঘটনা সংঘটিত করে আসছে। এসব মানবতাবিরোধী ঘটনাগুলো পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না করার অন্যতম কারণ হিসেবেও মন্তব্য করেন।
সতেজ চাকমা তার বক্তব্যে বলেন “পার্বত্য চট্টগ্রামে এসব ঘটনা সংঘটিত হওয়ার মূলে রয়েছে শাসকগোষ্ঠীর বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না করা। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন দাবী করে আরো বলেন “মায়ানমারের শাসকগোষ্ঠী রোহিঙ্গা জনগোষ্টীর উপর যেসব বর্বর আচরণ করছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলার বাঙালীদের কর্তৃক সংঘটিত সকল গণহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগের মত সকল মানবতাবিরোধী অপরাধও নিন্দনীয় এবং এসবের বিচার করাটা প্রশাসনের কর্তব্য।”
সংহতি বক্তব্যে বিএমএসসির ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জনিমং মারমা বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো আবারো ধর্ম রক্ষার জিগির তুলে সক্রিয় হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে যেন সাম্প্রদায়িক হামলার মত কাজ আবারো সংঘটিত করতে না পারে।”
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক রিন্টু চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, ৭১ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এদেশের পাহাড়ী আদিবাসীরাও যুদ্ধ করেছে। কিন্তু তার বিপরীতে পাহাড়ের মানুষ কেবলমাত্র বৈষম্য,হত্যা,ধর্ষণ,অগ্নিসংযোগের মত নরকীয় যন্ত্রণাগুলোয় পেয়েছে। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, “সরকার যদি মনে করে আদিবাসীরা দুর্বল হয়ে পড়েছে তারা আর আন্দোলন করতে পারবে না এই ভেবে যদি চুক্তি বাস্তবায়ন না করে তবে আমি বলব সরকার অতীতের ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি। আমরা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে আবারো সেই ৭০ এর দশকে ফিরে যেতে বাধ্য হবো।” অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ- সভাপতি অন্তিক চাকমা বলেন, “আজকে শিক্ষা দিবসে যেখানে আমাদের দাবী হওয়া উচিত শিক্ষা সম্পর্কিত, সেখানে আমাদেরকে পাহাড়ী নারী হত্যার প্রতিবাদে দাঁড়াতে হচ্ছে।” তিনি সরকারকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবী জানান । অন্যথায় পাহাড়ী জনগোষ্ঠী তাদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করলে যদি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তার দায়ভার সরকারকে নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জ্ঞানজ্যেতি চাকমা বলেন, ১৬ সেপ্টম্বর দীঘিনালার মেরুংয়ের মধ্য বোয়ালখালিতে ইন্দ্রা চাকমার হত্যাকারী আলাউদ্দিন এবং পানছড়িতে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার বালাতি ত্রিপুরার খুনীদেও খুঁজে বের করে ফাঁসি প্রদান কতে হবে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর সংঘটিত বর্বরতার নিন্দা জানান। সেই সাথে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর চলমান হুমকী প্রদান এবং প্রশাসনের মৌন সম্মতির তীব্র নিন্দা জানিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।