আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৯ উপলক্ষে ইউনেস্কো মহাপরিচালকের বাণী
সোহেল হাজং: আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসটি আমাদের শান্তি প্রতিষ্ঠা, টেকসই উন্নয়ন এবং স্থিতিশীল সমাজ বিকাশে আদিবাসীদের অবদান সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে একটি অনন্য সৃযোগ সৃস্টি করেছে।
আদিবাসীরা বিশ্বের জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবহারে অবদান রেখে চলেছেন। সেজন্য তাদেরকে আমরা এই দিনে, নলেজ হোল্ডার্স (জ্ঞান-ধারক) হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।এ বিষয়টি জীববৈচিত্র্যের উপর ল্যান্ডমার্ক গ্লোবাল অ্যাসেসমেন্ট প্রতিবেদনে সম্প্রতি প্রকাশিত করেছে জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কিত আন্তঃসরকারী বিজ্ঞান-পলিসি প্ল্যাটফর্ম এবং ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস (আইপিবিইএস)। এ বছরের মে মাসে ইউনেস্কো’-র সদর দফতরে যা প্রবর্তিত হয়।
আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫%, তবে বিশ্বের দরিদ্রতমদের মধ্যে তাদের সংখ্যা ১৫ শতাংশের ওপরে। বিশ্বব্যাপী, তারা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তার মধ্যে ক্রমবর্ধমান অভিবাসন, শিক্ষাগ্রহণে সমস্যা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, জোরপূর্বক স্থানান্তর, নারীর প্রতি সহিংসতা, দারিদ্র্য ও অন্যান্য বৈষম্যের শিকার। সেইসাথে স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান লাভ, ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সংযোগ ও তথ্য সেবা গ্রহণে তাদের অভিগম্যতা খুবই কম।
জাতিসংঘ এবং ইউনেস্কো আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদেরকে পুরোপুরি ও সমানভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ এ, আদিবাসীদের একটি স্বতন্ত্র দল হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং সবার উন্নত ভবিষ্যতের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টাকে স্বীকার করা হয়েছে। ইউনেস্কো ২০১৮ সালে তার সাংগঠনিক কর্মসূচিতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণে নির্দেশনা বিষয়ক নীতিমালা গ্রহণ করে। এসব নীতিমালা, পরিকল্পনা, কর্মসূচি এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রকে সমর্থন করা হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এবং বিশেষ করে পরিবেশ এবং বিশ্বের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য আদিবাসী সংস্কৃতি ও আদিবাসী জ্ঞানের প্রচুর অবদান রয়েছে। ইউনেস্কো তার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে ট্র্যাডিশনাল নৈপুণ্যের দুর্লভ ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তার মধ্যে একটি হলো ‘টেকসই উন্নয়নে স্থানীয় ও আদিবাসী নলেজ সিস্টেম এবং বিজ্ঞান’ যা বৈজ্ঞানিক এবং আদিবাসী সম্প্রদায়-এ দু’য়ের মধ্যে গুরুত্ব তোলে ধরতে সরকারকে সহায়তা করে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি-জেনারেল এর সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি বোর্ড (এসএবি) কর্তৃক অনুমোদিত “টেকসই উন্নয়নে আদিবাসী এবং স্থানীয় জ্ঞান এবং বিজ্ঞান” বিষয়ক একটি পলিসি ব্রিফ এ কাজকে আরও এগিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া, ইউনেস্কোর ম্যান এবং বায়োস্ফিয়ার প্রোগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু হ’ল বায়োস্ফিয়ার্স পরিচালনায় স্থানীয় এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, সেইসাথে সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত সমস্যাগুলির সমাধান অনুসন্ধানে সহযোগী প্রচেষ্টা চালানো।
আদিবাসী ভাষার বিলুপ্তি আদিবাসী সম্প্রদায় এবং তাদের অনন্য ঐতিহ্য, আমাদের বিশ্ববৈচিত্র্য, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের জন্য একটি বিরাট হুমকি। ২০১৯ আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষের মাধ্যমে ইউনেস্কো এই সমালোচনামূলক বিষয়গুলিতে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য, এবং তা সমাধানের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করে।
ইউনেস্কো, একটি অনন্য বহুপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক মানের সংস্থা হিসাবে আদিবাসী ভাষাগুলোকে প্রচার, সমর্থন এবং ব্যবহারের জন্য জরুরি পদক্ষেপসহ এর ভালো প্র্যাকটিসগুলি তোলে ধরার জন্য গত জুন মাসে একটি অনলাইন আদিবাসী চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করে যেখানে লাতিন আমেরিকান এবং ক্যারিবীয়দেশসহ ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারদের একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক অংশগ্রহণ করে।
এ বছরের মার্চ মাসে, ইউনেস্কো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উদ্ভাবনী ভাষা প্রযুক্তির সমাধান বিকাশের জন্য বিশ্বজুড়ে নতুন প্রতিষ্ঠিত আদিবাসী কমিউনিটি মিডিয়া এবং রেডিও নেটওয়ার্ক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং আদিবাসী ভাষার বিকাশের জন্য কাজ করেছিল।
পরিশেষে, আমরা এই ঘোষণা করতে পেরে খুব আনন্দিত যে, গল্পবলা বিষয়ক একটি পেরুভিয়ান প্রতিযোগিতা এল কুয়েন্টো দে লাস ১০০০ পালাব্রাসের পরবর্তী সংস্করণটি কেবলমাত্র স্প্যানিশ ভাষায় অনুষ্ঠিত হবে না, স্প্যানিশসহ দেশের ৪৮ টি আদিবাসী ভাষার জন্য এটি উন্মুক্ত রাখা হবে।
ইউনেস্কো এবং জাতিসংঘে আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নিশ্চিত এ বিষয়ে যে, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন করতে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। আদিবাসী জনগণ, তাদের ভাষা, মূল্যবোধ, জ্ঞান ব্যবস্থা এবং সম্পর্কে জানা এবং সকলকে অবশ্যই বিশ্বজুড়ে এবং সামগ্রিকভাবে মানবতার জন্য এগিয়ে আসা ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই পথ সন্ধানের জন্য বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখতে হবে।