আঞ্চলিক সংবাদ

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২২ উপলক্ষে দিনাজপুরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠনের দাবিতে ১০ আগষ্ট বুধবার সকালে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ দিনাজপুর জেলা কমিটির আয়োজনে দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

“ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারীদের অবদান” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিনাজপুর জেলা জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি শীতল মার্ডির সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির দিনাজপুর জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য রবিউল আউয়াল খোকা, বাসদের জেলা সমন্বয়ক কিবরিয়া হোসেন, আদিবাসী নারী পরিষদের দিনাজপুর জেলার কোষাধ্যক্ষ শিবানী উরাও, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মানিক সরেন, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের দিনাজপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক রুবেল টুডু, আদিবাসী নেতা রবি সরেন প্রমুখ।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, আদিবাসীরা এদেশের ভূমিপূত্র। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের বাণীতে আদিবাসীদের অস্থিত্ব স্বীকার করে নিয়ে আদিবাসীদের রক্ষার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁর নেতৃত্বধীন সরকার ক্ষমতায় এসে আদিবাসীদের আর আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করছে, যা মোটেই কাম্য নয়।

বক্তারা সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রলায়ের জারিকৃত আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করার বিষয়ে একটি সার্কুলারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, কোন শব্দটি সংবিধান সম্মত কিংবা অসাংবিধানিক তা নির্ধারণ করার এখতিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। যা একটি অনধিকার চর্চার পর্যায়ে পড়ে, যা মোটেই কাম্য নয় এবং আইনসম্মতও নয়। কারণ আমাদের দেশের সংবিধানে সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংবিধানের কোন ধারা বা বিষয় নিয়ে কোন বিতর্ক বা মতান্তর দেখা দিলে তার ব্যাখ্যা একমাত্র দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টই দিতে পারবে। অন্য কোন প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী বা ব্যক্তি নয়। আর বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টেরই এক রায়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, আদিবাসী শব্দটি ব্যবহারে কোন আইনগত প্রতিবন্ধকতা নেই।

বক্তারা আলো বলেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারই ১৯৭২ সালে যে আইএলওকনভেনশন ১০৭ অনুস্বাক্ষর করে গেছেন সেখানেও আদিবাসী শব্দটি শুধু ব্যবহারই নয়, তাদের সকল অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। যে কোন মানুষের আত্মপরিচয়ের অধিকার একটি মানবাধিকার। আদিবাসীদের আত্মপরিচয়ের এই অধিকারকে সরকার যখন দমন করে রাখতে চায় তখন এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হয়।

আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন, চাকরিতে আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা পূনর্বহাল ও বাস্তবায়ন, আদিবাসীদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি রক্ষা, এবং আদিবাসীদের উপর অত্যাচার নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচারসহ জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রদীপ খালকো, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অনিল গজাড় ও মিনতি কুজুর প্রমুখ ।

Back to top button