আদিবাসী হিসাবেই সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাইঃ আদিবাসী পরিষদের আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দরা
সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম,রাজশাহীঃ ‘আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে’ উক্ত বিষয়ে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে আজ ৬ আগস্ট শনিবার বেলা ১২ টার সময় রাজশাহীর সীমান্ত অবকাশ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় । আলোচনা সভায় জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) গণেশ মাঝি’র সঞ্চলনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় ধরেই আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এই স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না। আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সমস্যা কোথায় সেটাও সরকারের তরফ থেকে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। আমি মনে করি, আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবেই সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া উচিত। সমতল তথা উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীদের জন্যও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। আদিবাসীদের যে সমস্ত ভূমি বেদখল হয়ে গেছে তা এই কমিশনের মাধ্যমেই ফিরিয়ে দিতে হবে। ফজলে হোসেন বাদশা আরো বলেন সমতল অঞ্চলে আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে সকলে আদিবাসী পরিষদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তাই জাতীয় আদিবাসী পরিষদকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের সুসংগঠিত আন্দোলন- সংগ্রাম করতে হবে, আদিবাসীদের আন্দোলনে সফলতা কামনা করি।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আলেচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য খ্রিষ্টিনা বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল কুমার রাজোয়ার, কোষাধ্যক্ষ সুধীর তির্কি, দপ্তর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রামপ্রসাদ মাহাতো, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান, কেন্দ্রীয় সদস্য রাজকুমার শাও, বিভূতি ভুষণ মাহাতো, রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস, রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র খালকো, পাবনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিক বানিয়াস, নাটোর জেলা কমিটির সহ-সভাপতি প্রতাব সিং, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি বিচিত্রা তির্কি, বগুড়া জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি যুগেশ সিং, বগুড়া জেলা সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক সন্তোষ সিং, ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সহ-সভাপতি দুলাল তিগ্যা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বিশু মার্ডি, নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সভাপতি দীলিপ পাহান, সাধারণ সম্পাদক যোগেশ উরাও, পোরশা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আইচন্দ পাহান প্রমুখ।
আলোচনা সভায় জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবেই সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। আমরা সমতল অঞ্চলের আদিবাসী দীর্ঘদিন থেকে এই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। একই সাথে সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন ও মন্ত্রনালয়ের গঠনের দাবি জানিয়ে আসছি কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনে কাজের অগ্রগতি দেখি না। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি, ভূমি অধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে বিশেষ কার্যক্রমে গ্রহণের ঘোষণা করেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে ধর্মীয় নৃতাত্ত্বিক সংখ্যলঘুদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবধিকরের লঙ্ঘন রোধ এবং তদের ভূমি, বসতভিটা, বনভূমি, জলাভূমি এবং অন্যান্য সম্পত্তির পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছিল। এ সত্বেও আদিবাসীদের ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভুমিকা অনেকটা নীরব এবং অনেক ক্ষেত্রে ভূমি দস্যূরা রাজনৈতিক ছত্রছায়াকে কাজে লাগিয়েই আদিবাসীদের ভূমি দখলকে ত্বরান্বিত করছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সেচের পানি না পেয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করা অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডির মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বক্তরা আরো বলেন,সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি প্রকৃত জমি মালিকদের ফিরিয়ে দিতে হবে ও ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে পুলিশের গুলিতে নিহত তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আদিবাসীদের জন্য উচ্চ শিক্ষা ও প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেনীসহ সকল সরকারি চাকুরিতে আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।