মতামত ও বিশ্লেষণ

আদিবাসী নারীর চোখে দ্রৌপদী মুর্মু – সারা মারান্ডী

সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন জনমনে বেশ সাড়া ফেলেছে। এর কারণ, শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু, যিনি ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন; তিনি আদিবাসী সাঁওতাল জাতিসত্ত্বার মানুষ। এরই সাথে তাঁর রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিয়েও বেশ বিশ্লেষণ হচ্ছে; বিশেষভাবে বিগত দিনগুলোতে তাঁর রাজনৈতিক পদচারণা ও আগামী পাঁচ বছরে আর কী হতে পারে, যা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ব্যক্তি দ্রৌপদী মুর্মু একজন নারী , একজন আদিবাসী নারী এবং একজন সফল রাজনীতিবিদ। যুগে যুগে, কালে কালে, একজন নারীকে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তথা বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার সাথে যুদ্ধ করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়েছে এবং হচ্ছে। নারীকে শুধু টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয় তা নয় কিন্তু তার সাথে পদে পদে নিজেকে প্রমাণও দিতে হয় নিজ বিশ্বাস, স্বপ্ন আর বিচক্ষণতার । একজন নারী যখন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিফল হয়, তখন তাকে নিশ্চিতভাবে অবমাননার গ্লানি সইতে হয়। আবার যখন কেনো সফলতা অর্জন করে, তখন তাঁর অতীতের বিফলতাগুলোকে ঘাটাতেও অনেকে সদা প্রস্তুত থাকে। তবে, অটুট লক্ষ্য, একাগ্রতা ও পরিশ্রম একজন মানুষকে এক সময় নিয়ে যেতে পারে সফলতার শেখরে। এক্ষেত্রে একজন সাঁওতাল নারী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মু’র সফলতা প্রেরণাদায়ক।
দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৫৮ সালের ২০ জুন ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ময়ুরভঞ্জ জেলার উপরবেদা গ্রামে অতি দরিদ্র এক সাঁওতাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বিরানচি নারায়ন টুডু, যিনি ছিলেন একজন গ্রাম-প্রধান। দ্রৌপদী মুর্মু আদিবাসী পরিবারের নিত্তনৈমিত্তিক টানাপোড়নের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন এবং পড়াশুনা করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি রাজ্যের ভুবনেশ্বরের রমাদেবী উইমেন’স কলেজে অধ্যয়ন করেন। উল্ল্যেখ যে, তিনিই কলেজে অধ্যয়ণরত গ্রামের প্রথম আদিবাসী নারী। বিভিন্ন মাধ্যমে যতটুকু তাঁর জীবনী সম্পর্কে জানা গেছে, তাঁর পরিবারে রাজনীতির সাথে জড়িত কেউ ছিলেন না। সেক্ষেত্রে পরিবার থেকে তাঁর রাজনৈতিক শিক্ষালাভের সুযোগটি ছিলো না। এছাড়া পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে তিনি কখনো রাজনীতি করার বিষয়টি মনেও আনতে পারেননি। সেসময় তাঁর সর্বপ্রথম লক্ষ্য ছিলো পড়াশুনা শেষ করে একটা চাকরি শুরু করা এবং আর্থিকভাবে পরিবারকে সাহায্য করা।

দ্রৌপদী মুর্ম ওড়িশা সরকারের করণিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ মেয়াদে তিনি রাজ্যের সেচ ও জ¦ালানি বিভাগে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন।রাজনীতিতে পর্দাপনের পূর্বে দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ওড়িশার রায়রংপুরের অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেন । প্রজ্ঞা ও নম্র স্বভাবের জন্য শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক মহলে দ্রৌপদী মুর্মু তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। তবে পরিবারের প্রয়োজনে দ্রৌপদী মুর্মুকে চাকরি ছাড়তে হয়। চাকরি ছাড়ার পর দ্রৌপদী মুর্মু’র পরিবারে সময় দেওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয় ঠিকই কিন্তু এর সাথে সাথে পরিবারে সময় দেবার পরও বাড়তি একটা সময় তাঁর হাতে থেকেই যেত। এসময় তিনি তাঁর নিজের এলাকার সুবিধাবঞ্চিত আদিবাসী মানুষের পশ্চাৎপদতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তাদের সামাজিক ও শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করতে শুরু করেন । তিনি যখনই সময় পেতেন বেরিয়ে পড়তেন আদিবাসী গ্রামে গ্রামে সামাজিক কাজ করার জন্য। দ্রৌপদী মুর্মু’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর একাগ্রতা আদিবাসী জনমানুষের মনে তাঁর জন্য একটা ভালবাসা আর ভরসার সৃষ্টি করে। যার ফলশ্রতিতে আদিবাসী মানুষেরা তাঁর কাজ দেখে তাঁকে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যোগদানের উৎসাহ প্রদান করে। এলাকার আদিবাসী জনগণ তাঁকে বলেন- “আপনি তো অনেক সামাজিক কার্যক্রম করছেন, মানুষের সাথেই আছেন, কেনো না রাজনীতিতে যোগ দিন।” সে-সময় দ্রৌপদী মুর্মু’র সন্তানরা ছোট থাকায় তিনি ভাবতেন তাঁর পক্ষে কীভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ সম্ভব হবে! পরবর্তীতে আদিবাসী মানুষজন দ্রৌপদী মুর্মুর স্বামী শ্যাম চরণ মুরমু’র সাথে আলাপ-আলোচনা করতে শুরু করেন এবং তাঁকে বোঝাতে শুরু করেন, যাতে দ্রৌপদী মুর্মু রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়। যে-সময় দ্রৌপদী রাজনীতিতে যোগ দেন, সে-সময় সাধারণ আদিবাসী মানুষজন ভাবতেই পারত না আদিবাসীরাও রাজনীতি করবে। আর সেখানে একজন নারী, তার ওপর একজন আদিবাসী নারী, গ্রাম থেকে ওঠে এসে রাজনীতি করবে যা গ্রামের লোকদের পক্ষে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারাটাও বেশ কঠিন ছিলো। এমন ভাবনায় দোদুল্যমান ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। কারণ সমাজের একটা ধারণা ছিলো রাজনীতি একটা নোংরা পানির মতো এবং খারাপ মানুষেরাই রাজনীতিতে যায়।

দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর স্বামীকে বলেন, কীভাবে তাঁর পক্ষে রাজনীতিতে যাওয়া সম্ভব হবে, যেখানে প্রয়োজনে ২৪ ঘন্টাই কাজ করতে হয়! কখন, কোথায় সমস্যা হবে; কখন, কোথায় যেতে হবে এ কাজের তো কোনো সময় সীমা নেই। এক্ষেত্রে গ্রামের লোকজনই বা কি চোখে দেখবে, এসব ভাবনাই দ্রৌপদী মুর্মুকে ঘিরে ধরেছিলো। তারপরও তাঁর পরিবার তাকে সমর্থন করেছিলো সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য, যা তাঁর মানসিক শক্তিকে অনেকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিলো । এরপর ১৯৯৭ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতির সাথে যাত্রা শুরু করেন। সেই একই বছরে তিনি রায়রংপুরের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন, যার নেপথ্যে আদিবাসীরা তাঁর পক্ষে জনসমর্থন গড়ে তোলে অনেক পরিশ্রম করে।
যেহেতু দ্রৌপদী মুর্মু গ্রামে বসবাস করতেন আর সেখানে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্য তেমন সুযোগ ছিলো না, তাই তার পরিবার শহরে চলে যান। শহরে গিয়েও দ্রৌপদী মুর্মু একাগ্র চিত্তে তাঁর দ্বায়িত্বাধীন কাজ করতে থাকেন এবং সেসময় দ্রৌপদী মুর্মুর ভালো কাজের জন্য তাঁর কাজের মেয়াদকাল শেষ না হতেই মেম্বার অব পার্লামেন্ট হিসেবে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পান। তিনি রায়রংপুর আসনে ২০০০ ও ২০০৯ সালে বিজেপির পক্ষে দাঁড়িয়ে ওড়িশা বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন । ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিজু জনতা দল ও বিজেপির জোট সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাঁওতাল এ রাজনীতিক। শুরুতে তিনি বানিজ্য ও পরিবহন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নিলেও পরবর্তী সময়ে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তফসিলি সম্প্রদায়ের বিজেপির রাজ্য শাখার সভাপতি ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। তাঁর পরিবারের সবার রাজনৈতিক জীবন বেশ ভালোই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ ২০০৯ সালে তাঁদের বড় ছেলে লক্ষণ মুর্মু (২৫) মারা যায়, যা দ্রৌপদী মুর্মুকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। পুত্র বিয়োগের পর দুই মাস বিষন্নতায় নিদ্রাবিহীন রাত কেটেছে তাঁর। সে সময় তিনি ঘর থেকেও বেরুতেন না। এসময় তার সহকর্মীরা এসে তাঁকে বলতেন- “ আমরা আপনার দুঃখ বুঝতে পারি; আপনার একটি ছেলে পৃথিবী ছেঁড়ে চলে গেছে কিন্তু আমরা আপনার হাজার হাজার ছেলেরা আছি, যাদের জন্য আপনার কাজ করতে হবে।” তিনিও সবার উৎসাহে আবারও কাজে ফিরে আসেন।

কিন্তু আবারও ২০১৩ সালে দ্রৌপদী মুর্মু’র দ্বিতীয় ছেলে শিপুন মুর্মু এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। ছোট ছেলে মারা যাবার দুই মাসের মধ্যে দ্রৌপদী মুর্মু’র ছোট ভাই, এর পর মা মারা যান। এক মাসের মধ্যে পর পর তিন জন কাছের মানুষকে হারিয়ে তিনি কিছুই যেন আর ভাবতে পারছিলেন না। এদিকে দুই পুত্র বিয়োগের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তাঁর স্বামী প্রচন্ডভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং এর ফলে ২০১৪ সালে তিনি শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন। এতো মানসিক যন্ত্রণার পরও দ্রৌপদী মুর্মু উঠে দাঁড়িয়েছেন দৃঢ় চিত্তে; শুধুমাত্র তাঁর ছোট মেয়ে ইতিশ্রী মুর্মুকে নিয়েই তিনি এগুতে থাকেন সামনের দিকে।

দ্রৌপদী মুর্মু ২০০০-২০১৪ গর্ভমেন্ট অব ওড়িশার বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালন করেছেন । তিনি ২০১৫ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত ওড়িশার পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খন্ডের প্রথম নারী গভর্নর ছিলেন । পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২৫ জুলাই তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

অন্যান্য আট দশটা সাধারণ নারীর মতো দ্রৌপদী মুর্মু’র জীবনেও চড়াই উৎরাই এসেছিলো। কিন্তু তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন মানুষের জন্য, সমাজের জন্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: দ্রৌপদী মুর্মু’র যে সুপ্ত আকাঙ্খা ছিলো মানুষের কাছাকাছি থেকে তাঁদের জন্য কিছু করার, তা তিনি একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি মনে করেছেন তাঁকে তো আর দুটো রুটির জন্য কষ্ট করতে হচ্ছে না । কিন্তু যে মানুষগুলো না খেয়ে আছে, তাঁদের জন্য কিছু করা দরকার। দ্রৌপদী মুর্মু সব সময় সময়ের মূল্য দিয়েছেন কারণ, তাঁর মতে বসে থাকলে অনেক চিন্তা মাথায় আসবে। কিন্তু বসে না থেকে মানুষের জন্য কাজের মাধ্যমে তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
ভারতবর্ষের শক্তির উৎস হলো বৈচিত্রময় জাতিসত্ত্বার সম্ভার, যা ১৯৪৭ হতে অদ্যাবধি ভারতের মোট ১৫ জন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফলের ধারা বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈচিত্রপূর্ণ একটি অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক রচনা করেছে। তবে এই মাইলফলক রচনার নেপথ্যে একটি ধারাবাহিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া প্রতিনিধত্বশীল রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রৌপদী মুুর্মু ধাপে ধাপে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সন্মানীয় স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন; যা সত্যিই ভারতের ইতিহাসের সাথে সাথে সকল আদিবাসী মানুষের জন্য অহংকারের ব্যাপার। ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে, আদিবাসীরা তাঁদের ভূমি, জল, জঙ্গল, ফসলের ন্যায্য অধিকারের কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন সময়, বিভিন্নভাবে অমার্যাদা, অবমাননা, বৈষম্য, তিরষ্কার ও প্রতারণার স্বীকার হয়েছে। ন্যায্যতার জন্য ভারতবর্ষের ওড়িষ্যা, তৎকালিন বিহারের (বর্তমান ঝাড়খন্ড) আদিবাসীরা বিভিন্ন গণ-আন্দোলন ও বিদ্রোহে সংগঠিত হয়েছিলো । এর মধ্যে সন্নাসী বিদ্রোহ ( ১৭৬০-১৮০০), সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫-৫৭), উলগুলান (১৮৯৯-১৯০০) । যেখানে শুধু আদিবাসী সাঁওতাল, মুন্ডা না কিন্তু নিম্ন বর্গের বাঙ্গালী, জেলে, কর্মকার, তাতী সকলে ঝাপিয়ে পড়েছিল। যে বিদ্রোহগুলো কোনো একক মানুষের আন্দোলন সংগ্রাম ছিল না কিন্তু সাধারণ জনমানুষ আন্দোলনগুলো গড়ে তুলেছিল। সমাজে ধনী গরীব, উচ্চ বর্ণ, নিম্ন বর্ণের বৈষম্য ঘুচানো আর দরিদ্র শোষিত মানুষের মুক্তিই ছিল সকল আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। যদিও বা অনেক আন্দোলন তাৎক্ষণিকভাবে জয়ের স্বাদ দিতে পারেনি, তবে কিছু কিছু ইমপ্যাক্ট বা প্রভাব পরবর্তীতে দেখা গিয়েছে। ভারতে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা গুলো পৃথক রাজ্য ঘোষিত হয়, আদিবাসীদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের জন্য আদিবাসীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। যেখানে সুবিধাবঞ্চিত আদিবাসীরা অন্যান্য জাতিসত্ত্বার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। তবে এটাও সত্য যে, এতকিছুর পরও পুঁজিবাদ-এর আগ্রাসন আন্তঃকোন্দল ও বিভক্তির আগ্রাসী রূপ সমাজ ও সংস্কৃতিসহ সবকিছুকে গ্রাস করতে ছাড়ছে না। পুঁজিবাদের দৌরাত্ব মানুষের সমাজতান্ত্রিক মতবাদকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে বার বার। অনেকের মধ্যে জাতিসত্ত্বার ও তাঁর নিজ বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে পুঁজি বানানোর আর এক শোষনের অবতারনাও দেখা গিয়েছে। এরকম একটা সময়ে দ্রোপদী মুর্মু’র জয় সত্যিই এক বিস্ময়। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহনের পর তাঁর বক্তব্যে উল্ল্যেখ করেছেন- “আমি জনজাতি সমাজের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর থেকে ভারতের রাষ্ট্রপতি হবার সুযোগ পেয়েছি। এটি ভারতের লোকতন্ত্র জননীর মহাত্ম। এটি আমাদের লোকতন্ত্রের শক্তি যেখানে এক দরিদ্র ঘরে জন্মগ্রহনকারী মেয়ে, দূর সূদূর আদিবাসী গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মেয়ে ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে পৌঁছতে পারে। রাষ্ট্রপতি পদে উপবিষ্ট হওয়ার উপলব্ধি আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি নয়, এটি ভারতের প্রত্যেক দরিদ্র মানুষের উপলব্ধি। আমাদের নির্বাচন এই কথারই প্রমাণ যে, ভারতে গরীব মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে আর তা পূরণও করতে পারে। আর এটি আমার জন্য অত্যন্ত সন্তোষজনক কথা যে, আদি থেকে বঞ্চিত জীবনের বিকাশ লাভ থেকে দূরে থাকা দরিদ্র, দলিত তথা আদিবাসী আমাকে এই প্রতিবিম্ব হিসেবে দেখতে পারে। আমার এই নির্বাচনে দেশের দরিদ্রমানুষের আর্শীবাদ রয়েছে। দেশের কোটি নারী ও মেয়েদের স্বপ্ন ও সামর্থ্যের ঝলক”। অনেক আশার বাণী ছিলো তাঁর বক্তব্যে যা মুক্তিরই ইঙ্গিত দিয়েছে । যার সফল বাস্তবায়ন আগামী পাঁচ বছরে আরও একটি উদাহরণ সৃষ্টি করবে বলে আমরা আশা করছি।

সারা মারান্ডী- লেখক ও গবেষক

তথ্যসূত্রঃ মোহিত মিশ্রা’র সাথে দ্রৌপদী মুর্মুর একান্ত সাক্ষাতকার এর আলোকে,তেজস্বীনি-অনুষ্ঠানে দ্রৌপদী মুর্মুর একান্ত সাক্ষাতকার

Back to top button