আদিবাসী নাম পরিবর্তনঃ হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন
‘আদিবাসী’ নামে নিবন্ধিত এনজিওগুলোর নাম পরিবর্তনে এনজিও ব্যুরোর নির্দেশনায় উদ্বেগ জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগ জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানানো হয়।
এইচআরএফবি’র আহ্বায়ক এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর (২০১৯) এনজিও বিষয়ক ব্যুরো একটি পত্রের মাধ্যমে ‘আদিবাসী/ইনডিজিনাস’ নামে নিবন্ধনকৃত এনজিওগুলোর নাম পরিবর্তনের নির্দেশনা জারি করেছে। এ পত্রের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নাম পরিবর্তনের জন্য এক মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এইচআরএফবি এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং অনতিবিলম্বে এ নির্দেশনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতোপূর্বে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে তথ্য অধিদফতরের একটি পত্রের মাধ্যমে সকল মন্ত্রণালয়কে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার বন্ধ করার জন্য বলা হয়। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত জনগোষ্ঠী নিজেদের ‘আদিবাসী/ইনডিজিনাস’ বলে চিহ্নিত করছে। যা তাদের আত্ম-পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কয়েক বছর আগেও ক্ষমতাসীন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও নেতারা ধারাবাহিকভাবে এ শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং এ জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করে গিয়েছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেত্রী থাকার সময় থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সরকার প্রধান হিসেবে একাধিকবার আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে গণমাধ্যমে বাণীও পাঠিয়েছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সরকারের পক্ষ থেকে বার বার এদেশে কোনও আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই বলে দাবি করা হচ্ছে। সরকারের এই স্ববিরোধী অবস্থান অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং একইসঙ্গে এ দেশের নাগরিকদের একটি অংশের অধিকারের প্রতি অসম্মানজনক। আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও মানবাধিকারকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। কিন্তু সরকার তার অবস্থানে অজ্ঞাত কারণে অনড়। সংবিধানের ২৩ নং অনুচ্ছেদে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, উপজাতি প্রভৃতি পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না-এ বিষয়টি বলা হয়নি। তাছাড়া সংবিধানে কোন পদ অন্তর্ভুক্ত নয় বলে তা ব্যবহার করা যাবে না মর্মে ধারণাটি অমূলক এবং বে-আইনি।
২০১৮ সালে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার নির্দেশ প্রদানের পর সম্প্রতি এনজিও ব্যুরো থেকে জারি করা নির্দেশনায় আদিবাসী নামে নিবন্ধনকৃত সংগঠনগুলোর নাম পরিবর্তনের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়ার ঘটনায় ফোরাম গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এছাড়া কোনও একটি অধিদফতর থেকে এমন নির্দেশনা প্রদান তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে কিনা সে প্রশ্নও উঠতে পারে। এ নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে যে, স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় এ শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ শব্দটি কিভাবে জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকিগ্রস্ত করছে সে বিষয়টির ব্যাখ্যা আবশ্যক বলে ফোরাম মনে করে।