
রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রান্তিকতা ,বৈষম্য ও অবহেলার কারণে আদিবাসী যুবরা আজও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।রাষ্ট্রের যুব নীতিতে আদিবাসী যুবদের জন্য আলাদা কোনো স্বীকৃতি নেই। অথচ, বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশে আদিবাসীরা আজও নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। আদিবাসী তরুণদের নিজেদের শক্তির উপর আস্থা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
“কাউকে পেছনে ফেলে নয় : জাতীয় যুব নীতি ২০১৭-এর পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রান্তিক আদিবাসী যুবদের অন্তর্ভূক্তিকরণ, অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ ও অগ্রগতি নিশ্চিতকরণ” শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। আজ ১৯ অক্টোবর সকালে ঢাকায় দি ডেইলি স্টার ভবনে আজিজুর রহমান কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের উদ্যোগে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কার্যনির্বাহী সদস্য রিপন চন্দ্র বানাই প্রমুখ। বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ সভাপতি টনি চিরানের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আন্তনী রেমা। সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং উনার বক্তব্যে বলেন, রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রান্তিকতা ,বৈষম্য ও অবহেলার কারণে আদিবাসী যুবরা আজও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।রাষ্ট্রের যুব নীতিতে আদিবাসী যুবদের জন্য আলাদা কোনো স্বীকৃতি নেই। অথচ, বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশে আদিবাসীরা আজও নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। তিনি আদিবাসী তরুণ-যুবদের আহবান জানান, তারুণ্যর শক্তিকে আমাদের সর্বচ্চ ব্যাবহার করতে হবে। আদিবাসী তরুণদের নিজেদের শক্তির উপর আস্থা রাখতে হবে। আমাদের সংগ্রাম শুধু অধিকার প্রতিষ্ঠার নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নেরও সংগ্রাম।
লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, সমতল ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী যুবদের মধ্য আজ চরম হতাশা বিরাজ করছে। দেশে আজ বহুত্ববাদের কথা বলা হচ্ছে অথচ জাতীয় যুব নীতিমালায় এখনও আদিবাসী যুবদের নিয়ে কোনো কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।বলাবাহুল্য যে,জাতীয় যুব নীতিমালা ২০১৭ নিঃসন্দেহে অন্তর্ভুক্তিমুলক হয়নি । ফলে আদিবাসী যুবরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ,সরকারি চাকরি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ –সব জায়গায় বৈষম্যর শিকার হচ্ছে। আদিবাসী যুবরা তাদের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও মামলার শিকার হচ্ছে। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে একজন নাগরিকের তার সকল সুযোগ সুবিধার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
তিনি আরও বলেন বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের উচিত অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে আদিবাসী যুবদের নিয়েও কাজ করা।এছাড়াও জাতীয় যুব নীতিমালায় প্রান্তিক আদিবাসীদের তরুণ-যুবকদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমুলক পলিসি ও নীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি।
বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এর সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, যুবরাই আমাদের দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পদ। কিন্তু আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় আদিবাসী যুবরা তারা তাদের অধিকার হেকে বঞ্চিত হচ্ছে।এছাড়াও তিনি বলেন বাংলাদেশের আদিবাসীদের অবস্থা অত্যান্ত নাজুক, সারাদেশে আদিবাসীদের উপর দমন-পীড়ন চলমান রয়েছে। সাম্প্রতিক খাগড়াছড়ি জেলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হওয়া সবাই ছিল তরুণ।সেখানে আদিবাসীদের ঘর-বাড়ি উপর অগ্নিসংযোগ করে ভস্ম করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কার্যনির্বাহী সদস্য রিপন চন্দ্র বানাই বলেন, ২০১৭ সালে জাতীয় যুব নীতি প্রণয়নের সময় থেকে নানা আলোচনায় আদিবাসী যুবদের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে দাবি জানিয়ে আসলেও সরকার থেকে আশানুরূপ কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। সরকারের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকভাবে না থাকার কারণে আদিবাসী এবং আদিবাসী যুবদের সমস্যাগুলো সমাধানের মুখ দেখেনি। সবাইকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে আদিবাসীসহ সকল প্রান্তিক মানুষকে এক কাতারে নিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আদিবাসী যুবদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সকলেই একসাথে কাজ করতে হবে। পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী যুবদের সম্মিলনে অধিকার আদায়ের একতাবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের অর্থ সম্পাদক অনন্যা দ্রং বলেন, বাংলাদেশের আদিবাসী যুবরা বরাবরের মত রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জাতীয় যুব নীতি ২০১৭ তে আদিবাসী যুবদের নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। এছাড়াও তিনি বলেন আদিবাসী যুবকদের ডাটা সংগ্রহ করে সঠিক তথ্য জানা উচিত যে দেশে আদিবাসী যুবকদের সংখ্যা কত এবং পরবর্তী একশন প্লান তৈরি করা। তিনি সমালোচনা করে বলেন জাতীয় যুব নীতিতে একদিকে বৈচিত্র্যকে মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও ,বাস্তবে তা অধিকারভিত্তিক অন্তর্ভুক্তি নয়। রাষ্ট্র বরাবরই আদিবাসী যুবদের উপেক্ষা করে চলেছে।
এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এই সংলাপে বিভিন্ন সুপারিশনামা উত্থাপন করা হয়।