খেলাধুলা

আদিবাসী ঐক্য-সংহতি জোরদারকরণে এই ফুটবল ম্যাচ প্রেরণা যোগাবেঃ রাঙ্গামাটিতে সন্তু লারমা

সুলভ চাকমা, রাঙ্গামাটি: “পাহাড় ও সমতল আদিবাসীদের জাতীয় ঐক্য ও সংহতি জোরদার করি” এই আহবান রেখে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশে বসবাসরত সমতল জেলা সমূহের আদিবাসী ও তিন পার্বত্য জেলার আদিবাসীদের মধ্যকার এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। খেলা শুরু হওয়ার আগে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রীতি ফুটবল ম্যাচটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শ্রীমতি নিরুপা দেওয়ান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে আদিবাসী শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। “আমরা আদিবাসী সকলে, মোরা চাই অধিকার বেঁচে থাকার, মোরা চাই সাংবিধানিক অধিকার” গানটির সাথে মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশন করেন স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব জুয়েল চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্টায় নানান কর্মকান্ড পরিচালিত করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই আয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, আদিবাসীদের মধ্যকার পারষ্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সেতুবন্ধন রচনার ক্ষেত্রে আজকের এই আয়োজন এক নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করবে।“

পাহাড়ের আদিবাসী ফুটবল দল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান বলেন,-
“আমি একসময় রাঙ্গামাটি জেলার মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলাম। ১৯৭৮ সাল থেকে আমি নানাভাবে অত্র জেলার ক্রীড়া কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত আছি। আজকে আমাদের আদিবাসী নারী ক্রীড়াবিদরা জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক পরিসরেও নিজেদের উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। আমি মনে করি এধরনের উদ্যোগের মধ্য দিয়ে আমাদের আদিবাসীদের মধ্যকার পারষ্পরিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। আজকের এই প্রীতি ফুটবল ম্যাচের মধ্য দিয়ে আদিবাসী সমাজে প্রীতি-ভালোবাসা এবং ঐক্য ও সংহতি প্রসারিত হবে।”

পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের মধ্যকার এই প্রীতি ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটি মারী স্টেডিয়ামের প্রায় সবগুলো গ্যালারিই ছিল কানাই কানাই দর্শকে পরিপূর্ণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন সমতল জেলায় বসবাসরত আদিবাসী খেলোয়ারদের নেতৃত্ব দেন স্বপন দ্রং খুই আর তিন পার্বত্য জেলার আদিবাসী খেলোয়ারদের নেতৃত্ব দেন থোয়াইিচং মারমা। উত্তেজনাপূর্ণ এ খেলায় শেষ পর্যন্ত পাহাড়ের আদিবাসী খেলোয়ারদের দল ৩-০ গোলে জয়ী হয়।

সমতলের আদিবাসী ফুটবল দল

খেলার সমাপণী অনুস্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা।


এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেন, “আজকের এই দিনে আমি রাঙ্গামাটির নেতৃস্থানীয় ক্রীড়াবিদ প্রয়াত মারী কে স্মরণ করতে চাই। আজকে পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীদের মধ্যকার ঐক্য ও সংহতি জোরদার করার জন্য এই আয়োজন। এই আয়োজন সমতল এবং পাহাড়ের আদিবাসীদের মধ্যকার ঐক্য-সংহতি জোরদার করার একটি প্রক্রিয়া। বহু আগে থেকেই আদিবাসীরা খেলাধূলা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্ল্যেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। আমি মনে করি, সকলের মধ্যে আজকে যে অনুভূতিটি কাজ করছে তা হলো অনেকটা কঠিন একটা কাজকে বাস্তবে সম্ভবপর করে দেখানো। নিশ্চয়ই এই আয়োজন আদিবাসী সমাজে নতুন করে প্রেরণা যোগাবে।”

Back to top button