আটক শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে ছেড়ে দিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): ঢাকাসহ সারাদেশে আটক সব শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে ছেড়ে দিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। একই সঙ্গে তারা আজ বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘দ্রোহ যাত্রা’ নামে নতুন কর্মসূচিরও ডাক দিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনার মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানিয়ে কর্মসূচি দেওয়া হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যার বিচার দাবি করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এ ক্ষেত্রে তারা জাতিসংঘের মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত দাবি করেন।
‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে এই মানববন্ধনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যে যেখানে বিনা বিচারে আটক আছে, কোনো ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা ছাড়া তাদের সবাইকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এটা আমাদের প্রধান দাবি। দ্বিতীয় দাবি, এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত যেভাবে দেশের নিরপরাধ মানুষ মারা গেছে, তার প্রতিটির বিচার করতে হবে। এই বিচারের জন্য জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে। স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে। দেশে ইন্টারনেটের অবাধ সুস্থ ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা বলেছেন, এই ঘটনার ফলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি, ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে সরকারের। আমার ট্যাক্সের টাকায় বন্দুক কেনা হয়েছে, আমার ট্যাক্সের টাকায় গুলি কেনা হয়েছে। আমার ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি ও বন্দুক দিয়ে মানুষ মারার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। এটা কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব প্রতিষ্ঠান মিথ্যাচার, প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিটি বাহিনীই জনগণকে মূর্খ মনে করেছে। মিথ্যাচার করে সরকার পরিচালনা, রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সরে আসতে হবে। মিথ্যাচার দেশবাসী বুঝে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এই হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে। আমাদের সব শিক্ষার্থীকে যদি ছেড়ে দেওয়া না হয়, যদি হত্যার বিচার করা না হয়, যদি অবিলম্বে শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়া না হয়– তাহলে আমাদের বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আরও কঠোর ও অব্যাহত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের যখন ইচ্ছা তুলে আনবেন, যতদিন ইচ্ছা আটকে রাখবেন, নুডলস খাওয়াবেন, পোলাও, রুটি খাইয়ে আবার পত্র-পত্রিকায় দেবেন। গায়েবিভাবে আমাদের বাসা থেকে তুলে আনবেন, সেই আইন-ক্ষমতা আপনাদের দেওয়া হয়নি। আমরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির পুলিশ চাই না। আমরা বাংলাদেশের পুলিশ চাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী বলেন, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকেল ৩টায় ‘দ্রোহ যাত্রা’ নামে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশে ছাত্র শিক্ষক সুধী সমাজে অংশগ্রহণ করবেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী কারাগারে। আটকে রাখা সব শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, আমাদের সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত করার জন্য আপনাদের ওইখানে বসে রাখা হয়নি। সারাদেশে অজস্র কারাগার গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা আটকের মাধ্যমে। হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে ব্লকরেইড দিয়ে কারাগারগুলো ভরে ফেলা হয়েছে। এই অবস্থা আজকেই থামাতে হবে। ছয় সমন্বয়ককে যেমন ছেড়ে দিয়েছেন, সব শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের ছেড়ে দিতে হবে।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরীন হক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, বেসরকারি সংস্থা উবিনীগের (উন্নয়ন বিকল্পে নীতি নির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ নূর প্রমুখ।