কেএস মং ও ক্যবামং মারমার নি:শর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে জেএসএস
গতকাল ২৫ মে ২০১৯ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএস মং মারমা এবং বান্দরবান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যবামং মারমাকে গ্রেফতারের ঘটনায় জনসংহতি সমিতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে । সে সাথে অবিলম্বে নেতৃবৃন্দকে নি:শর্ত মুক্তির দাবি করা হয়েছে। জনসংহতি সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক গুণেন্দু বিকাশ চাকামার স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক গতকাল অপরাহ্ন ২ ঘটিকায় আলোচনার জন্য কেএস মং মারমা ও ক্যবামং মারমা কে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে প্রায় ২ঘন্টা কথাবার্তা বলার পর বিকাল ৪ ঘটিকায় তাদেরকে বান্দরবান থানায় সোপর্দ করে। বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, অপরদিকে গতকাল কোলক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান থোয়াইহ্ণা প্রু মারমা ও জর্ডান পাড়ার কার্বারী মংহ্লা ত্রিপুরাসহ আরো তিনজনকে আটক করে থানায় নেয়া হয় বলে জানা যায়। তাদের সকলের বিরুদ্ধে গত ২২ মে বান্দরবান জেলার কুহালং ইউনিয়নের উজিমুখ হেডম্যান পাড়া থেকে বান্দরবান পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি চথুইমং মারমাকে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্ত কর্তৃক অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয় , সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় স্থানীয়ভাবে মগ পার্টি নামে খ্যাত আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)-এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বান্দরবান সদর উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী ও কাপ্তাই উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক হত্যা, অপহরণ, হুমকি, চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছে। যেমন- ১৮ ফেব্রুয়ারি পিসিপির রাজস্থলী শাখার সভাপতি উক্যনু মারমার বাড়ি ঘেরাও; ১১ মার্চ কাপ্তাইয়ের রাইখালীতে যুব সমিতির চিংসাউ মারমা, জনসংহতি সমিতির উচিংমং মারমা ও যুব সমিতির অংথোয়াইচিং মারমাকে মারধর করে আহত করা; ১৪ এপ্রিল রাজস্থলীতে জনসংহতি সমিতির রাজবিলা শাখার সদস্য অংক্যচিং মারমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা; ২৩ এপ্রিল জনসংহতি সমিতির রাজস্থলী শাখার সদস্য ও গাইন্দ্যা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মংক্যসিং মারমাকে অপহরণ (এখনো নিখোঁজ); ৭ মে বান্দরবানের রাজবিলা ইউনিয়নের রাবার বাগানে যুব সমিতির বিনয় তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা এবং ফোলারাম তঞ্চঙ্গ্যাকে অপহরণ; ৯ মে বান্দরবানের কুহালং ইউনিয়নের ৩নং রাবার বাগানে জয়মণি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা; ১৩ মে বান্দরবান শহরের উপকণ্ঠে প্রুমংঞো পাড়ায় ১২ গ্রামবাসীকে হত্যার হুমকি; ১৫ মে রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের সাধু হেডম্যান পাড়ায় শান্তিলাল ত্রিপুরাসহ দুইজনকে গুলি করে হত্যা; ১৮ মে রাজবিলা ইউনিয়নের চিংক্ষ্যং পাড়া থেকে উনুমং মারমাকে অপহরণ (এখনো নিখোঁজ); ১৯ মে ভোরে রাজবিলা ইউনিয়নের তাইংখালী ৮নং রাবার বাগান পাড়ায় ক্যচিংথোয়াই মারমা নামে এক গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা; ২২ মে চথুইমং মারমাকে অপহরণ ও পরে তার লাশ উদ্ধার ইত্যাদি ঘটনা ঘটিয়েছে। এএলপিকে দায়ি করে এসব অধিকাংশ ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।
জেএসসের বিবৃতে আরো বলা হয়, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও প্রত্যক্ষ মদদে বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন এএলপি কর্তৃক এভাবে একের পর এক হত্যা, অপহরণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জনসংহতি সমিতি বার বার দাবি করে আসছে। কিন্তু প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উপরন্তু গত ২২ মে চথুইমং মারমাকে অপহরণের ঘটনায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জনসংহতি সমিতিকে দায়ি করে ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এবং তাদেরকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, ধরপাকড়, দমন-পীড়ন, এলাকা ছাড়া করা, জনসংহতি সমিতির নেতৃত্ব শূণ্য করা ইত্যাদি ন্যাক্কারজনক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল ২৫ মে ডেকে নিয়ে জনসংহতি সমিতির দুই কেন্দ্রীয় সদস্য কেএস মং মারমা ও ক্যবামং মারমাকে অবৈধভাবে গ্রেফতার করা হয়। সারারাত ধরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বান্দরবান শহরে জনসংহতি সমিতির নেতা-কর্মীদেরকে অবৈধ গ্রেফতারের হীনউদ্দেশ্যে তাদের ঘরবাড়ি ঘেরাও করেছে। এএলপি নামক একটি বিদেশী সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলকে অবাধে সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপে মদদ দিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এসব এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
গণমাধ্যমের পাঠানো বিবৃতিতে জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে –
(১) গ্রেফতারকৃত হেডম্যান ও গ্রামের কার্বারীসহ জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য কেএস মং মারমা ও ক্যবামং মারমাকে অচিরেই নি:শর্তে মুক্তি প্রদান করা;
(২) বিদেশী সশস্ত্র সংগঠন- এএলপি’কে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চলমান হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বন্ধ করা এবং এএলপির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; এবং
(৩) এসব ঘটনায় জনসংহতি সমিতির সদস্যদেরকে জড়িত করে মিথ্যা মামলা দায়ের, ধরপাকড়, দমন-পীড়ন, এলাকা ছাড়া করার হীন ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।