আজকের বাংলাদেশ অজয় রায়ের বাংলাদেশ নয় – অজয় রায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে বক্তারা
অজয় রায়ের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

আজকের বাংলাদেশ আমাদের কাংখিত বাংলাদেশ নয়। অজয় রায়সহ দেশের মুক্তিকামী জনগণ যে স্বপ্ন দেখে একাত্তরে জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, আজকের বাংলাদেশ সেটি থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। এই বাংলাদেশ অজয় রায় চাননি, আমরা দেশের জনগণ এই বাংলাদেশ চাইনি।
আজ সকালে ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় টেনিস ফেডারেশন কমপ্লেক্স গ্যালারির নিচে বাংলাদেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অজয় রায়ের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

সকাল ১০ টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অজয় রায়ের জীবনী পাঠ করেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এড. পারভেজ হাসেম।
এরপর অজয় রায়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে অজয় রায়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞ্যাপন করার মধ্য দিয়ে স্মৃতিচারণ শুরু হয়।
সূচনা বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন সংস্কৃতি মঞ্চের আহবায়ক সেলিম রেজা, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহবায়ক ডা. অসিত বরন রায়, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এড. আসাদুল্লাহ তারেক, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ডা. শাহদাত হোসেন, অজয় রায়ের সহধর্মিণী এবং সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য জয়ন্তী রায়, জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খিসা প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন সংস্কৃতি মঞ্চের শিল্পীবৃন্দ।

ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ঘটনাবহুল সময়ে ১৯২৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জন্ম নিয়েছিলেন অজয় রায়। স্কুল জীবনেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। শাসক শ্রেণির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদযাপন, পহেলা বৈশাখ উদযাপন, মংগল শোভাযাত্রার প্রচলন, উদীচী, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি কালজয়ী কার্যক্রমের স্থপতি হিসেবে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে।
অজয় রায়ের পড়ালেখার সীমানা ও ক্ষেত্র ছিল বহুবিস্তৃত-বহুমাত্রিক। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞান, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে ছিল তার পাঠবিচরণ। তার রচিত গ্রন্থসমূহ প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সমকালে পাঠক ও সুধীসমাজে প্রশংসিত হয়েছে।

বামপন্থী রাজনৈতিক হিসেবে তিনি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তিনি ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। অজয় রায়ের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সর্বমোট ১৮ বছর জেলে কাটিয়েছেন এবং স্বাধীনতার আগে ও পরে ৫ বছরের বেশী সময় কাটিয়েছেন আত্মগোপনে।
২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি মারা যান।


