আগামীকাল মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৩তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গাইবান্ধা ও রাজশাহীতে সমাবেশ
আগামীকাল মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৩তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে গোবিন্দগঞ্জ ও রাজশাহীতে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ভিন্ন দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ কথা জানা যায়।
সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস উপলক্ষ্যে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে আদিবাসী বাঙালির এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল সকাল ১১ টায় সাপমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হবে। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন ও গাইবান্ধা জনউদ্যোগের যৌথ আয়োজনে সাতদফা দাবীও উত্থাপন করা হয়েছে। যেখানে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের আদিবাসীদের ভূমি ফেরত, ৬ নভেম্বর, ২০১৬ পুলিশি হামলায় জড়িতদের শাস্তি ও সুগারমিলের জমি প্রভাবশালীদের আত্মসাৎ এর ঘটনা তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তির দাবী রয়েছে।
এদিকে আগামীকাল রাজশাহীর আলুপট্টিমোড়ে সকাল এগারোটায় এক গণমিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। সেখানে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। সমাবেশের প্রচারপত্রে ৬ দফা দাবী জানানো হয়। সেখানে সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রনালয় ও ভূমি কমিশন গঠন, ১৯৫০ সনের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৭ ধারা পূর্ণ বাস্তবায়ন ও উক্ত ধারা লঙ্ঘন করে আদিবাসীদের যেসব জমি জাল দলিল হয়েছে তা বাতিল করা, খাস জমি ও সরকারি পুকুর পাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের স্থায়ী মালিকানা দেয়া, আদিবাসীদের উপর সকল প্রকার নির্যাতন, জুলুম-অত্যাচার, ধর্ষণ, হত্যা, হয়রানি বন্ধ ও বিচার, সরকারি তালিকা থেকে বাদপড়া আদিবাসীদের দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ ও সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের ৫% কোটা বাস্তবায়ন করার দাবী রয়েছে।
উল্লেখ্য ১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ সংঘঠিত হয় ভারতবর্ষের ভগনাডিহি গ্রামে। এতে প্রায় ৩০ হাজার সাঁওতাল নিহত হয়। এটি সাঁওতাল হুল নামেও পরিচিত। কার্ল মার্কস তার ‘Notes on Indian History’ -এ সাঁওতাল বিদ্রোহকে ‘গেরিলা যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ১৩০০ সনে তার ‘ইংরাজের আতঙ্ক’ প্রবন্ধে সাঁওতাল বিদ্রোহ বা হুলকে ‘সাঁওতাল উপবিপ্লব’ বলেছেন। ভারতীয় ইতিহাসবিদ দিগম্বর চক্রবর্ত্তীই সাঁওতাল সমাজের বাইরের কেউ, যিনি ১৮৯৫-৯৬ সালে লিখিত তার History of Santal Hul পুস্তকে হুলকে প্রথম হুল হিসেবেই আখ্যায়িত করেছিলেন। সাঁওতাল বিদ্রোহেরই এক গর্বিত উত্তরাধিকার সিপাহি বিদ্রোহ, মুন্ডা-তেভাগা-নানকার আন্দোলনসহ আমাদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামও এই ঐতিহাসিক হুলেরই স্পর্ধিত উচ্চারণ।