আইপিনিউজ, ঢাকা: আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, এনসিটিবি’র সম্মুখে আদিবাসী শিক্ষার্থী ও অধিকার কর্মীদের উপর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার এবং পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবিতে আগামীকাল শুক্রবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণসমাবেশ আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। দুপুর ২ টায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উক্ত গণসমাবেশে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নেতৃবৃন্দসহ আপামর আদিবাসী ছাত্র-জনতা অংশ নিবেন বলে আইপিনিউজকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও সমাবেশে প্রতিবাদী গান করবে আদিবাসীদের গানের দল মাদল।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উক্ত গণসমাবেশে বক্তব্য রাখবেন ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী ডিরেক্টর ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধরাণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য কে এস মং মারমা, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েত সাকি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী প্রমূখ ।
উক্ত গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ সভাপতি অজয় এ মৃ। এছাড়াও মানবাধিকারকর্মী, নারীনেত্রী, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-যুব ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দও উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, ঐতিহাসিক কাল ধরে ভূমি হারানোর যন্ত্রণা, নিপীড়ন, বিচারহীনতা, আত্মপরিচয়হীনতা ও রাষ্ট্রীয় প্রতারণার মধ্যেও স্বকীয় শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ভূমি, বন-জঙ্গল এর উপর চিরায়ত অধিকার নিয়ে টিকে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছে। বিগত ৫৪ বছরে সরকারসমূহের অব্যাহত প্রতারণার মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘটিত জুলাই ’২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের আদিবাসী ছাত্র-জনতাও অংশ নিয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় পটপরিবর্তন আদিবাসীদের জীবনেও নতুনভাবে আশা জাগিয়েছিল। বিশেষ করে বিগত ২৫ আগষ্ট ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার প্রধান হিসেবে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে আদিবাসীদেরকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে এক ধরণের নতুন দিশা খুঁজে নিয়েছিল দেশের আদিবাসী জনগণ। কিন্তু অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিগত ৫ মাসের মধ্যেই আদিবাসীদের জীবনে নেমে এসেছে নানা ধরণের নিপীড়ন। গত ১৮-২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে আদিবাসীদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা, বহু আদিবাসী বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট পুড়িয়ে দেয়া এবং চার আদিবাসীকে হত্যা করা হয়েছে। এসবের বিচার ও তদন্ত এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে অতি সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আঁকা জনপ্রিয় গ্রাফিতি যেখানে ‘আদিবাসী’ শব্দসহ অন্যান্য চার ধর্মের সহাবস্থানসহ বহুত্ববাদী বাংলাদেশকে নির্দেশ করে সেটি নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় পত্রের কাভার থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ণ কমিটি (এনসিটিবি)। মৌলবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর চাপে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়া সরকারের এমন সিদ্ধন্তে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ হয় দেশের আদিবাসীসহ প্রগতিশীল নানা ব্যক্তি ও সংগঠন। তারই ধারাবাহিকতায় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে শিক্ষার্থী, জনতা ও অধিকার কর্মীরা বিগত ১৫ জানুয়ারি উক্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এনসিটিবি ঘেরাওয়ের কর্মসূচী নেয়। এতে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামের উগ্র ও মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা এনসিটিবি ভবনের সামনে আদিবাসী ছাত্র-জনতা ও অধিকার কর্মীদের উপর নজিরবিহীন এক ন্যাক্কারজনক হামলা পরিচালনা করে। এতে চারজন গুরুত্বর ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। এ ঘটনায় দেশের আপামর গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও সংবেদনশীল মানুষ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও সরকার এখন পর্যন্ত মাত্র দু’জনকে গ্রেয়াতার করেছে এবং বাকীরা এখনও আইনের ধোরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এতে বাংলাদেশের আদিবাসী জনতা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম উক্ত হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার, পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী শব্দ সম্বলিত গ্রাফিতি পুনর্বহাল এবং আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে এই গণসমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে।