জাতীয়শিল্প ও সংস্কৃতি

অপেক্ষায় এবিসিবি’র ‘রক-ও-ফোন সিজন ৪’

চেলসি রেমাঃ  ৯ অক্টোবর ঢাকা ইউনিভার্সিটির টিএসসি অডিটোরিয়ামের মঞ্চ মাতাবে গারো ব্যান্ডগুলো। বহুল অপেক্ষিত  ‘রক-ও-ফোন সিজন-৪’ কনসার্টটি  অনুষ্ঠিত হবে  আচিক ব্যান্ড কমিউনিটি অফ বাংলাদেশের আয়োজনে।  মাদল, সাক্রামেন্ট, রেরে ও জুমাং সহ ১২ টি গারো ব্যান্ডের অংশগ্রহণ থাকবে এই কনসার্টে। টিকেট মূল্য ১৫০ টাকা। সময় দুপুর ১২টা। 

ছড়ানো ছিটানো পর্যায় থেকে গারো গান প্রেমী দলগুলোকে এক জায়গায়, এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে শুরু হয় ‘আচিক ব্যান্ড কমিউনিটি অফ বাংলাদেশ (এবিসিবি) ’ এর পথচলা। 

‘২০১৪ সালে গারোদের খুব একটা ব্যান্ড ছিলো না।’ রোমন্থন করে এবিসিবির সভাপতি ও সাক্রামেন্টের গিটারিস্ট ক্যানি ডেভিড রেমা বলেন,  ‘আমরা যারা টুকটাক গান বাজনা করতাম, তারা ছড়ানো ছিটানো ছিলাম। কোনো কমিউনিটি ছিলো না। কেউ কাউকে চিনতো না। কোনো সঠিক প্লাটফর্ম ছিলো না। যেহেতু সেইসময় নবীনবরণ আর ওয়ানগালা ছাড়া তেমন কোথাও পারফর্ম করা হতো না তাই যারা রক বা মেটাল ঘরানার গান করতো এবং তরুণ সঙ্গীতপ্রেমীদের কোনো অর্গানাইজার গুরুত্বের সাথে দেখতো না বা প্রাধান্য দিতো না। তখন মনে হলো যদি আমরা একসাথে কাজ করি তাহলে আরও ভালো কিছু পেতে পারি। এই সঙ্গীতপ্রেমীদের একসাথে করার পাশাপাশি সমাজে একটা শক্ত প্লাটফর্ম তৈরী করা এবং নতুন কিছু নিয়ে আসতে পারা যাবে, এই চিন্তা থেকেই এবিসিবির যাত্রা শুরু করি।’ 

‘গান একটা ভালবাসা, একটা প্রশান্তি। আমার কাছে গানের প্রয়োজনীয়তা একটা প্রিয় বন্ধুর মতন, যার সাথে ভাগ করা যায় সুখ-দুঃখ, কান্না-হাসি, উল্লাস-উদ্বেগ, ভাল লাগা-মন্দলাগা, জীবন যাপনের ক্লেদ।’ বলেন মাদলের ভোকালিস্ট শ্যাম সাগর মানখিন। তিনি আরও বলেন,  ‘এবিসিবির এই আয়োজন আমার ভাললাগে। এ যাবত যতগুলো আয়োজন হয়েছে বোধহয় প্রায় সবটাতেই গিয়েছি। গারোদের ব্যান্ডের পরিবেশনা আর দর্শকের উচ্ছাস দেখেছি। এইটা আনন্দের।’ 

২০১৫ সাল থেকে ২ বছর পর পর এই কনসার্টের আয়োজন হলেও, প্রতি বছর বিভিন্ন গারো আদিবাসী ব্যান্ডের গানের অপেক্ষায় থাকে শ্রোতারা। এবছরও এর ব্যাতিক্রম নয়।

‘এবিসিবির কনসার্টের জন্য প্রতিবছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি।’ শ্রোতা রোদ্র চাম্বুগং বলেন ‘কারণ এবিসিবি এমন এক আয়োজন, যা সমস্ত বড় বড় গারো রক ব্যান্ড গুলোকে একত্র করে তো বটেই, ছোটো ছোটো প্রতিভাবান ব্যান্ডদল গুলোকেও অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করে। এটি আসলে শুধু একটি কনসার্ট নয় এখানে জড়িয়ে আছে আমাদের গারো ব্যান্ডদের প্রতি ভালোবাসা।’

আরেকজন শ্রোতা ঐশী ম্রং বলেন ‘এই কনসার্ট আসলে একটি মিলনমেলা। পরিচিত মানুষ, বন্ধু-বান্ধব সবাই গানের টানে কনসার্টে আসে। একসাথে ঘোরাঘুরি, আড্ডা, গান উপভোগ করা হয়। দুই বছর অপেক্ষার পর এবিসিবির আয়োজিত ‘রক-ও-ফোন সিজন ৪’ অবশেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একজন শ্রোতা হিসেবে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’

 

তবে শ্রোতারা যেভাবে উদগ্রীব থাকে সেভাবে কি আয়োজক ও সঙ্গীতপ্রেমীরা অপেক্ষার প্রহর গুনে থাকে? 

এ ব্যাপারে শ্যাম সাগর মানখিন বলেন “একটা অপেক্ষা তো থাকেই, করোনার কারনে গত দুই বছর সেভাবে আয়োজন করা যায়নি। আমি প্রায়ইশই এবিসিবির সংশ্লিষ্ট আমার কাছের লোকজনদের জিজ্ঞেস করেছি আয়োজন কী হবে, হচ্ছেনা কেনো? হলে ভাল হতো… ইত্যাদি ইত্যাদি।’

 

সভাপতি ক্যানি ডেভিড রেমার ভাষ্যমতে ‘একটা সফলতার অনেকরকম সংজ্ঞা থাকে। এবিসিবির প্রাথমিক ভাবনা ছিলো, সমাজকে দেখানো যে গারোদেরও ব্যান্ড আছে। গারোরাও চাইলে ন্যাশনাল লেভেলে মিউজিক করতে পারে। আমরা চেয়েছিলাম যে, একত্র হয়ে দেখাবো এবং গারো ব্যান্ডরা একটা প্রোগ্রাম নামাতে সক্ষম হয়েছেও। অংশগ্রহণকারীরাও নিজেদের গানের প্রতি যে আবেগ এবং ভালোবাসা সেটার বহিপ্রকাশ করতে পারছে।’

শুধুমাত্র গারো ব্যান্ড দলই নয় বরং অন্যান্য সম্প্রদায়ের গানের দলকেও স্বাগত জানায় এই প্লাটফর্ম। ‘রক-ও-ফোন সিজন-২’ এ ‘আর্কটিক’ নামের চাকমা ব্যান্ড এবং সিজন-৩ এ ঢাকা ইউনিভার্সিটির ‘দূর্গ’ নামের বাঙালি ব্যান্ড অংশগ্রহণ ছিলো। এই সিজনে আদিবাসী গানের দল ‘মাদল’ এবং  ‘সার্চ অব পিস’ নামে খাসি ব্যান্ড পারফর্ম করবে। এছাড়া সিজন-৩ এ মেন্টর ব্যান্ড হিসেবে ‘ইন্ডালো’র অংশগ্রহণ ছিলো বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। 

 

জগতের মত গানও বৈচিত্রময়। বৈচিত্র সুন্দর এবং আনন্দময়! তাই শ্রোতারা নতুন গান শোনা এবং নতুন সুর বোঝার চেষ্টা করুক। নিজেদের পছন্দ সেরা এবং যেটা অপছন্দ সেটা ভালো নয় এ ধরণের চিন্তা যেন না থাকে, এমনটাই আশা রাখেন মাদলের ভোকালিস্ট শ্যাম সাগর মানখিন।

কনসার্টের মিডিয়া পার্টনার আদিবাসী অনলাইন সংবাদমাধ্যম আইপিনিউজ।  কো-হোস্ট হিসেবে থাকছে “ঢাকা ইউনিভার্সিটি গারো ফ্যামিলি” এবং কো-স্পন্সর “আচিক অ্যাপিয়ারেলস”। 

 

Back to top button